পিরোজপুরের রায়েরকাঠি রাজবাড়ি


প্রকাশিত: ০৯:১৩ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রতিবার গ্রামে গেলেই মনে হয় রায়েরকাঠি রাজবাড়িটি ঘুরে দেখব। কিন্তু হয়ে ওঠে না। এবার টানা আটদিন ছিল শুধু ঘোরাঘুরির জন্য বরাদ্দ। সবশেষে রায়েরকাঠি। পিরোজপুরে চাচার বাসায় বেড়াতে গিয়ে থেকে গেলাম শুধু রাজবাড়িটি দেখব বলে।

rajbari

রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা রুদ্রনারায়ণ স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে জঙ্গলঘেরা বন, বাদাড় কাটাকাটি করে এই রাজবাড়ি গড়ে তোলেন। পিরোজপুর শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার পথ। আমি, আমার মা, চাচি এবং চাচাতো বোন মুন একটি ব্যাটারিচালিত অটোতে চেপে বসলাম। চালককে আগেই বলেছি, রায়েরকাঠি রাজবাড়ি যাব। সে একটি জায়গায় নামিয়ে দিয়ে বলল, ‘নামেন আইসা পড়ছি।’ ভাবলাম, এতো বড় বেয়াকুব! শহর নামের উপশহর এই ছোট্ট একটি জায়গা অথচ সে রাজবাড়ি চেনেই না! সে যাক, পথে এক মাসিকে রাজবড়ির কথা জিজ্ঞেস করায় তিনি হাত উঁচিয়ে দেখিয়ে দিলেন।

rajbari

রাজবাড়ির সৈন্য-সামন্ত কিছুই নেই। কালের গর্ভে সব বিলীন হয়ে গেছে সেই কবেই। দুশ’ একর জুড়ে রাজবাড়ি এখন ভুতুড়ে জঙ্গল বাড়ি। ভাঙা, শেওলা জমা, ক্ষয়ে পড়া ইট আর বুনো লতাপাতায় ঢেকে থাকা বিশাল রাজবাড়ির ফটক, অতিথিশালা, নহবতখানা সব শূন্য। ভিতর বাড়িতে ঢুকেও কারো দেখা নেই। ভাঙা দালানের কোনো এক খুটায় বাঁধা ছিল একটি গরু। আমাকে দেখে ভীষণ তেড়ে আসলো। একটু এগুতেই একজনকে দেখলাম একমনে ইট ভাঙছে। বললেন, ‘বাবুদের বাড়ি যিনি কিনেছেন; তিনি ঘর তুলবেন। তাই ইট ভাঙছি।’

rajbari

অন্দরমহলের ছাদে একজনকে দেখে নিজের পরিচয় দিয়ে রাজবাড়ির ইতিহাস জানতে চাইলাম। তিনি এই বংশের আঠাশতম পুরুষ অপূর্ব কুমার রায় চৌধুরী। তার মুখে ইতিহাস জানলাম। দেখালেন সংরক্ষিত বংশ তালিকা। লেখক পরিচয় পেয়ে ডেকে আনলেন দেলোয়ার হোসেন আলম নামের একজন প্রিয় কবিবন্ধুকে। ঘুরে দেখালেন অনতিদূরের সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি। বর্তমানে সেখানে সরকারিভাবে উপাসনালয়গুলো সংস্কার করা হচ্ছে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় গড়া সেসব মন্দির এবং মঠ। কালের সাক্ষী হয়ে আছে ২৫০ ফুট উঁচু নবরত্নের ধ্বংসাবশেষ। রয়েছে কোষ্টিপাথরে নির্মিত একটি মূল্যবান শিবলিঙ্গ।

rajbari
   
রাজবাড়ির ইতিহাস
বর্তমান পিরোজপুর জেলার অধিকাংশ ভূখণ্ড এবং পিরোজপুর শহর সেলিমাবাদ পরগণার অধীন ছিল। পশ্চিম বাংলার দিগঙ্গা নামক স্থানের রমানাথ সেনের পঞ্চদশ অধঃস্তন পুরুষ কিংকর ভুঁইয়ার ছেলে মদনমোহন ১৬১৮ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে তারই নামে আখ্যায়িত সেলিমাবাদ পরগণার দায়িত্বভার গ্রহন করেন। পরবর্তী সময়ে তাদের উত্তরসূরি রাজা রুদ্রনারায়ণ এই রায়েরকাঠি রাজবাড়ি গড়ে তোলেন। রুদ্রনারায়ণের চার ছেলে ছিল। জ্যেষ্ঠপুত্র নরোত্তম নারায়ণ রাজধানী রায়েরকাঠির জমিদারী দেখাশোনা করেন। দ্বিতীয় ছেলে নরেন্দ্র নারায়ণ বনগাঁ, রাজা গন্ধর্ব নারায়ণ কচুয়ার মঘিয়া এবং রাজা কন্দর্প নারায়ণ চিংড়াখালী কাছারিতে বসবাস করতেন।

rajbari

রায়েরকাঠি রাজবাড়িটি বিলীন হয়ে যাক তা কাম্য নয়। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মাধ্যমে এর ইতিহাস-ঐতিহ্য ধরে রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। প্রায় চারশত বছরের অতীত ঐতিহ্য এভাবে হারিয়ে যাবে।

rajbari

কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সায়েদাবাদ কিংবা গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি পিরোজপুরগামী বাস বিআরটিসি, দোলা কিংবা বলেশ্বর। ভাড়া ৪০০-৫০০ টাকা। পিরোজপুর বাস টার্মিনাল থেকে ৪ কিলোমিটার পথ রিকশা কিংবা অটোরিকশা করে রায়েরকাঠি রাজবাড়ি। এখানে ভাড়া ৮০-১০০ টাকা।     

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।