চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৬ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২৫
এ যেন একখণ্ড ‘সুইজারল্যান্ড’

আরিফুল ইসলাম তামিম

এ যেন একখণ্ড ‘সুইজারল্যান্ড’। গাছপালা, অতিথি পাখি, কৃত্রিম লেক,সবুজ ঘাসের বিছানা,আর তার সামনেই বসে দেখা যাচ্ছে অপার সৌন্দর্যের নোনাজলের বঙ্গোপসাগর। এমন প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে হলে আপনাকে ছুটে যেতে হবে চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকতে।

অনিন্দ্য সুন্দর স্থানটির নাম হালিশহর সমুদ্রসৈকত নামে সর্বাধিক পরিচিত হলেও এটির বর্তমান নাম গানার্স ট্রেনিং এরিয়া। ৪-৫ বছর আগেও স্থানটি স্থানীয়দের কাছেই পরিচিতি ছিল। তবে তখনো এটি পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে ওঠেনি। কাদা, আবর্জনা, সরু সড়ক পেরিয়ে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করতে হতো এখানে।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

তবে সেনাবাহিনী উদ্যোগ ও তত্বাবধানে স্থানটি গড়ে উঠেছে মনোমুগ্ধকর পর্যটন স্পট হিসেবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বদৌলতে এখানকার সৌন্দর্য এখন ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে সারা বাংলাদেশে।

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে গড়ে ওঠা স্থানটি এখন সৌন্দর্যপিপাসুদের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এই সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যের স্বাদ নিতে ছুটে আসছে।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

চট্টগ্রাম মহানগরের যে কোনো জায়গা থেকে সিএনজি করে সরাসরি কিংবা হালিশহর নয়াবাজার এসে ৪০-৫০ টাকা ভাড়ায় রিকশাযোগে ফারারিং রেঞ্জ কিংবা গানার্সট্রেনিং এরিয়া বললেই নামিয়ে দেবে। ২০ টাকা প্রবেশ মূল্য দিয়ে ঢুকতে হবে স্থানটিতে। তবে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই এই স্থান ত্যাগ করার নির্দেশনা মানতে হয়।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

চট্টগ্রাম মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে এই সমুদ্রসৈকত এখন সবার কাছেই প্রিয়। প্রবেশ গেট দিয়ে ঢুকতেই হাতের ডান পাশে ঝাউগাছ, পিচঢালা সড়কের দু’পাশে কৃত্রিম লেক আর হিমেল হাওয়া আপনাকে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিবে। এখানকার কৃত্রিম লেকে আছে কায়াকিংয়ের সুবিধাও। লেক ঘিরে আছে সারি সারি নারিকেল গাছ যা এই লেকের সৌন্দর্যকে দ্বিগুণ করে তুলেছে।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

আরও পড়ুন

শীত-বর্ষা দুই ঋতুতে দু’রকম সৌন্দর্য দেখা যায় এই সমুদ্রসৈকতে। শীতে বর্তমানে অতিথিপাখির আনাগোণা বেড়েছে। খুব ভোরে কিংবা বিকেলেও দেখা মেলে অতিথি পাখির ঝাঁক। তাছাড়া প্রায়ই বিভিন্ন পাখির দেখা মেলে এখানে।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক এই পরিবেশে সমুদ্রপাড়ের সবুজ ঘাসের বিছানায় এককাপ চা খেতে খেতে সূর্যাস্ত দেখার মধ্যে অন্যরকম শান্তি বিরাজ করে। গোধূলি বেলায় সূর্য যখন বঙ্গোপসাগরের অ থৈ জলরাশির মাঝে ডুবতে থাকে তখন পুরো সৈকত এলাকা সোনালি রং ধারণ করে। যা দেখতে অপরূপ।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

বর্তমানে সৈকতের চারপাশে পর্যটকদের বসার স্থান নির্মাণ করা হয়েছে। বিকেলে পর্যটকদের এখানে বসে বিশ্রাম কিংবা ছবি তুলতে দেখা যায়। এই স্থানে জেলেদের জনজীবন, ডিঙি নৌকায় মাছ শিকারের দৃশ্য, জোয়ারের সময় সমুদ্রের ঢেউ, এছাড়া ভাটার সময় চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ধরার দৃশ্য দেখে আপনি নিঃসন্দেহে মুদ্ধ হবেন।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

বর্ষায় সৈকতের ডান পাশে কৃত্রিম জলধারা দেখে ইতালির ভেনিস মনে হতে পারে। এই জলধারার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি উঠাতে কেউ ভুল করে না। শুধু তাই নয়, লোহা দিয়ে নির্মিত একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে এখানে, যা পর্যটকদের নজর কাড়ছে। এই ব্রিজে দাঁড়িয়ে নিজেকে ফ্রেম বন্দি করতে পারেন আপনিও।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

এই স্থানের শেষ অংশে বর্তমানে কাঁটা তারের বেষ্টনী দেওয়ার ফলে আর সামনে যাওয়া যায় না। তবে সৈকতের প্রধান গেট দিয়ে বেড়িয়ে হাতের বাম দিকে সোজা কিছুক্ষণ হেঁটে গেলেই প্রাকৃতিক আরও নানা সৌন্দর্য দেখা যায়। যা হয়তো অনেক পর্যটকই না দেখে ফিরে যান।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

মহিষের পালের পাশাপাশি মাটির সড়কের পাশের কৃত্রিম লেকে মাঝে মধ্যে পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির মাছের দেখা মিলবে এখানে। এছাড়া শীত মৌসুমে অর্থাৎ বর্তমানে সারি সারি খেজুর গাছ থেকে রস আহরণের দৃশ্য ও এখান থেকে দেখা যায়। শুধু তাই নয়,কেউ চাইলে এখান থেকে রস কিনেও নিতে পারেন।

চট্টগ্রামের হালিশহর সমুদ্রসৈকত নাকি ‘বাংলার সুইজারল্যান্ড’

এছাড়া সমুদ্রপাড়ের সবুজ ঘাসের মধ্যে বিকেল হলেই শত-শত তরুণ এখানে ফুটবল খেলতে আসে। খুব ভোরে কিংবা সন্ধ্যার আগে অনেক সময় লাল কাঁকড়ার ও দেখা পাওয়া যায় এই সমুদ্র সৈকতে। রূপমহিমা এই সমুদ্রসৈকতকে যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করলে দেশের অর্থনীতিতে যেমন বিরাট অবদান রাখবে তেমনই তৈরি হবে নতুন জীবন-জীবিকা।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।