সাজেক ভ্রমণে কী দেখবেন, কোথায় থাকবেন?
সাজেক ভ্যালির সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এজন্য পর্যটকরা ছুটে যান পাহাড়ি এই মনোমুগ্ধকর স্থানে। যদিও দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আজ মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) থেকে খুলে দেওয়া হয়েছে খাগড়াছড়ি ও সাজেকের পর্যটন কেন্দ্রগুলো।
সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার সর্বউত্তরের মিজোরাম সীমান্তে অবস্থিত। সাজেক হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইউনিয়ন, যার আয়তন ৭০২ বর্গমাইল। এর উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, দক্ষিণে রাঙামাটির লংগদু, পূর্বে ভারতের মিজোরাম, পশ্চিমে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা।
এটি রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত হলেও এর যাতায়াত সুবিধা খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে সাজেকের দূরত্ব ৭০ কিলোমিটার ও দীঘিনালা থেকে ৪৯ কিলোমিটার। বাঘাইহাট থেকে ৩৪ কিলোমিটার।
খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালা আর্মি ক্যাম্প হয়ে সাজেক ভ্যালি যেতে হয়। পথে পরবে ১০ নং বাঘাইহাট পুলিশ ও আর্মি ক্যাম্প, যেখান থেকে আপনাকে সাজেক যাবার মূল অনুমতি নিতে হবে।
তারপর কাসালং ব্রিজ, ২টি নদী মিলে কাসালং নদী হয়েছে। পরে টাইগার টিলা আর্মি পোস্ট ও মাসালং বাজার। বাজার পার হলে পরবে সাজেকের প্রথম গ্রাম রুইলুই পাড়া।
সাজেক রুইলুইপাড়া, হামারিপাড়া ও কংলাকপাড়া, এই ৩টি পাড়ার সমন্বয়ে গঠিত। ১৮৮৫ সালে প্রতিষ্ঠিত রুইলুই পাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,৭২০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত আর কংলাক পাড়া ১,৮০০ ফুট উচ্চতায় কংলাক পাহাড়ে অবস্থিত।
সাজেকে মূলত লুসাই, পাংখোয়া ও ত্রিপুরা উপজাতি বসবাস করে। রাঙামাটির অনেকটা অংশই দেখে যায় সাজেক ভ্যালি থেকে। এজন্য সাজেক ভ্যালিকে রাঙামাটির ছাদ বলা হয়। কর্ণফুলী নদী থেকে উদ্ভূত সাজেক নদী থেকে সাজেক ভ্যালির নাম এসেছে।
সাজেকে বর্তমানে গড়ে উঠেছে শত শত রিসোর্ট। তেমনই এক রিসোর্ট হলো গসপেল হোটেল। সাজেক ভ্যালির অনেক রিসোর্টে মাঝে প্রিমিয়াম ভিউয়ের এক রিসোর্ট হলো গসপেল রিসোর্ট। দ্বিতল এই কাঠের রিসোর্টে আছে ১০টি রুম।
এর মাঝে ভিউওয়ালা প্রিমিয়াম রুম আছে ৬টি আর আর ইকোনমিক ক্লাস রুম আছে ৪টি। এই রিসোর্টে প্রিমিয়াম রুমগুলোর উপর তলার ৩টি রুমের সঙ্গে আছে প্রাইভেট বারান্দা। আর নিচ তলার ৩ টি রুমের প্রতিটির সঙ্গে যুক্ত আছে বাংলাদেশের ভিউ।
আরও পড়ুন
এই রিসোর্টের বারান্দা অনেক বড়। যা কি না বন্ধু ও পরিবারের সবাইকে নিয়ে আড্ডা দেওয়ার জন্য অসাধারণ জায়গা। যদি চান তবে হ্যামকে ঝুলে কাটিয়ে দিতে পারেন পুরো একটা বেলা। ৩০০০-৪০০০ টাকার মাঝে পেয়ে যাবেন এই রিসোর্টের রুমগুলো। রাতের গসপেল রিসোর্ট কিন্তু একটু বেশিই সুন্দর।
সাজেক ভ্রমণের প্রথম দিনেই ঘুরতে পারেন রুইলুই পাড়ায়। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার ট্রেকিং করে দেখে আসতে পারেন সেখানকার সুন্দর কমলক ঝরনাটি। কমলক ঝরনাটি অনেকের কাছে পিদাম তৈসা ঝরনা অথবা সিকাম তৈসা ঝরনা নামেও পরিচিত।
সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া যেটি সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৮০০ ফুট উচুতে অবস্থিত। এটি সাজেকের সর্বোচ্চ উচ্চতার। এটিও লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত পাড়া। এর হেড ম্যান চৌমিংথাই লুসাই। কংলাক পাড়া থেকে ভারতের লুসাই পাহাড় দেখা যায়। যেখান থেকে মূলত কর্ণফুলী নদী উৎপত্তি।
চারপাশে মনোরম পাহাড়ের সারি ও সাদা তুলোর মতো মেঘের ভ্যালি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। সাজেক এমনই আশ্চর্য্যজনক জায়গা যেখানে একই দিনে প্রকৃতির তিন রকম রূপের সান্নিধ্যে আপনি হতে পারেন চমৎকৃত।
কখনো বা খুব গরম অনুভূত হবে তারপর হয়তো হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা চোখের পলকেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে আপনার চারপাশ। প্রাকৃতিক নিসর্গ আর তুলোর মত মেঘের পাহাড় থেকে পাহাড়ে উড়াউড়ির খেলা দেখতে সাজেক আদর্শ জায়গা।
শেষ বিকেল কাটাতে যেতে পারেন কংলাক পাড়ায়। আর এই কংলাক পাড়া যে কংলাক পাহাড়ে অবস্থিত সেখান থেকে শেষ বিকেলে উপভোগ করা যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার মনোমুগ্ধকর অসাধারণ দৃশ্য। কোটি তারার আকাশ দেখতে হলে আপনাকে বের হতে হবে রাতের সাজেক দেখতে। দিন কিংবা রাত সাজেক যেন শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো, সময় গড়ায় তবু সাজেকের সৌন্দর্য একটুও কমে না।
সাজেকে গেলে অবশ্যই সকালে ভোরের সময়টা মিস করবেন না। মেঘের খেলা আর সূর্যোদয়ের আলোর মেলা এই সময়েই বসে। এজন্য আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর সূর্যোদয় দেখা যায়। বিকেলের কোনো উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্তের রঙ্গিন রূপ আপনাকে বিমোহিত করবেই।
সাজেক ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন?
সারা বছরই সাজেক ভ্রমণ করা যায় শুধু ভরা বর্ষায় পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ না করাই উত্তম। রাস্তায় ধস থানমে পারে, পাহাড়ি ধস হতে পারে। তাই বর্ষার পরে শীতের শুরুর দিক পর্যন্ত সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের আদর্শ সময়।
এ সময় মেঘও পাওয়া যায় প্রচুর। গরমটা এড়িয়ে প্ল্যান করাটাই উত্তম। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারিই হলো সাজেক ভ্রমণের সেরা সময়। তাই বছরের শেষে হোক কিংবা নতুন বছরের শুরুতে যেতে পারেন সাজেক ভ্রমণে।
জেএমএস/এমএস