পৃথিবীর যে স্থানে আজও কেউ পৌঁছাতে পারেনি

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১১ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২৪
ছবি- পয়েন্ট নিমো হলো প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানের একটি স্থানের নাম

পৃথিবীতে এমন এক স্থান আছে যেখানে হাজার হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত মানুষের কোনো চিহ্ন নেই। রহস্যময় স্থানটির নাম পয়েন্ট নিমো। আজ পর্যন্ত নাকি এই জায়গায় কেউ পৌঁছাতে পারেনি। পয়েন্ট নিমো হলো প্রশান্ত মহাসাগরের মাঝখানের একটি স্থানের নাম।

জানা যায়, এটি দক্ষিণ আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে বিদ্যমান, তবে এটি কোনো দেশের মধ্যেই পড়ে না। সেখানে নেই কোনো প্রাণী বা গাছপালা। তবে রহস্যময় এই স্থান থেকে শোনা যায় ভয়ংকর সব শব্দ।

পয়েন্ট নিমো আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অগম্যতার সমুদ্রের মেরু’ বা ভূমি থেকে সবচেয়ে দূরে সমুদ্রের বিন্দু হিসাবে পরিচিত। ৪৮°৫২.৬’এস ১২৩°২৩.৬’ডাব্লিউ’তে অবস্থিত, স্পটটি আক্ষরিক অর্থে অনেকটা মাঝামাঝিতে অবস্থিত, যারা প্রতিটি দিকে ১০০০ মাইলেরও বেশি সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।

মেরুর সবচেয়ে কাছের ল্যান্ডমাসগুলো হলো উত্তরে পিটকেয়ার দ্বীপপুঞ্জের একটি, উত্তর-পূর্বে ইস্টার দ্বীপপুঞ্জের একটি ও দক্ষিণে অ্যান্টার্কটিকার উপকূলের একটি দ্বীপ। পয়েন্ট নিমোর কাছাকাছি কোথাও কোনো মানুষের বসবাস নেই। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা স্থানটির নাম ল্যাটিন ভাষায় ‘নিমো’ রাখেন, যার অর্থ ‘কেউ না’।

বিবিসি অনুসারে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে থাকা নভোচারীরা যে কোনো সময় পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৫৮ মাইল দূরে থাকে। যেহেতু পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে কাছের জনবসতিপূর্ণ এলাকাটি ১০০০ মাইলেরও বেশি দূরে, তাই মহাকাশে থাকা মানুষ স্থলভাগের মানুষের তুলনায় দুর্গম মেরুটির অনেক কাছাকাছি।

পৃথিবীর যে স্থানে আজও কেউ পৌঁছাতে পারেনি

এমনকি যে মানুষটি প্রথম পয়েন্ট নিমোর সুনির্দিষ্ট অবস্থান গণনা করেছিলেন তিনিও কখনো এটি পরিদর্শন করেননি। ১৯৯২ সালে, ক্রোয়েশিয়ান জরিপ প্রকৌশলী হ্রভোজে লুকাতেলা প্রশান্ত মহাসাগরে সঠিক বিন্দু খুঁজে বের করার জন্য যাত্রা করেছিলেন কম্পিউটার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে।

হঠাৎ করেই তিনি ভূমি থেকে সবচেয়ে দূরের নিমো নামক স্থানটির খোঁজ পান। ইস্টার দ্বীপপুঞ্জের মোটু নুই হলো পয়েন্ট নিমোর সবচেয়ে কাছের ভূমি। যদিও এটি এখনো উত্তরে ১০০০ মাইলেরও বেশি।

আরও পড়ুন

লাইভ সায়েন্স অনুসারে, প্রোগ্রামটি স্থানাঙ্কগুলো গণনা করেছিল। যা তিনটি সমদূরবর্তী ভূমি স্থানাঙ্ক থেকে সর্বাধিক দূরত্ব ছিল। ধারণা করা হয়, এখন পর্যন্ত কোনো মানুষ কখনোই পয়েন্ট নিমোর সঠিক স্থানাঙ্কের মধ্য দিয়ে যায়নি। পয়েন্ট নিমোর স্থানাঙ্কগুলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় গায়ারের মধ্যে পড়ে। যা হলো একটি বিশাল ঘূর্ণায়মান স্রোত। সেখানে বিশুদ্ধ পানিরও উৎস নেই। ফলে কোনো খাদ্য উৎস ছাড়া, সমুদ্রের এই অংশে বেশিরভাগ জীবন টিকিয়ে রাখা অসম্ভব।

যদিও এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই অঞ্চলে কিছুই বেঁচে নেই। বিজ্ঞানীরা পয়েন্ট নিমোতে সমুদ্রতলের আগ্নেয়গিরির ভেন্টের কাছে বসবাসকারী বেশ কয়েকটি ব্যাকটেরিয়া ও ছোট কাঁকড়া নথিভুক্ত করেছেন। ১৯৯৭ সালে বিজ্ঞানীরা সবচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলেন যখন, তারা সমুদ্রের মেরুর কাছে রেকর্ড করা সবচেয়ে জোরে পানির নিচের একটি শব্দ শনাক্ত করে। ৩০০০ মাইলেরও বেশি দূরে পানির নিচের মাইক্রোফোনের মাধ্যমে শব্দটি ধরা পড়ে।

পৃথিবীর যে স্থানে আজও কেউ পৌঁছাতে পারেনি

আমেরিকার ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ)-এর বিজ্ঞানীরা পানির নিচে এত বড় আওয়াজটি কীসের হতে পারে তা খুঁজে বের করতে ব্যর্থ হন। আর এই রহস্যের নাম দেন তারা ‘দ্য ব্লুপ’। পরে অবশ্য জানা যায়, দ্য ব্লুপ ছিল অ্যান্টার্কটিকার বরফ ভাঙার শব্দ। বর্তমানে পয়েন্ট নিমোর আশপাশের এলাকাটিকে ‘স্পেসশিপ গ্রেভিয়ার্ড’ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছিল।

যেহেতু স্বায়ত্তশাসিত স্পেসশিপ, স্যাটেলাইট ও অন্যান্য স্পেসের আবর্জনাগুলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের জন্য ভালো নয়, তাই বিজ্ঞানীরা এমন একটি এলাকা নির্বাচনের বিবেচনা করেন যেখানে মানুষের বসবাস নেই ও উড়ন্ত মহাকাশ ধ্বংসাবশেষ যাতে কারো ক্ষতি করতে না পরে।

সিএনএন এর মতে, সবদিক বিবেচনা করে নাসা ১৯৭১ সাল থেকে নিমো নামক স্থানটি স্পেসশিপের কবরস্থান হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। এরপর রাশিয়ান মির স্পেস স্টেশন ও নাসার প্রথম মহাকাশ স্টেশন, স্কাইল্যাবসহ বিশ্বের সেরা কিছু মহাকাশযানের ২৬৩টিরও বেশি আবর্জনা এই অঞ্চলে বিধ্বস্ত হয়েছে। এমনকি ২০৩১ সালে যখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনটি বিধ্বস্ত হবে, তখন সেটির ধ্বংসস্তূপও ফেরা হবে নিমোতে।

সূত্র: অল দ্যাট ইন্টারেস্টিং

জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।