সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:৪৭ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০২৪
সাদা পাথরের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে পর্যটকদের

সিলেটের ভোলাগঞ্জ পর্যটকদের জন্য এক আকর্ষণীয় স্থান। সেখানেই সাদা পাথর এলাকার অবস্থান। বাংলাদেশের এক অনন্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান এটি। ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই অঞ্চলটি স্থানীয় ও ভ্রমণকারীদের জন্য প্রিয় এক গন্তব্য।

ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর অঞ্চলটি ধলাই নদীর তীরে অবস্থিত। এখানকার সাদা রঙের পাথরগুলো নদীর পানির প্রবাহে শ্বেত শুভ্র রূপ ধারণ করেছে। সূর্যের আলোতে সাদা পাথরগুলো এক জ্বলজ্বলে সোনালি আভা ছড়ায়, যা পর্যটকদের মনে এক অদ্ভুত মায়া সৃষ্টি করে। নদীর স্বচ্ছ পানি আর চারপাশের সবুজ পাহাড় যেন প্রকৃতির এক মহাকাব্যিক দৃশ্যের অবতারণ ঘটায়।

সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

সাদা পাথর এলাকায় কাটানো স্মৃতি সত্যিই অমূল্য। সেখানে গেলে আপনি প্রকৃতির মায়া অনুভব করবেন। অনেকেই সাদা পাথরের উপর বসে গা জ্বালিয়ে সূর্যাস্তের রং বদলানোর দৃশ্য দেখেন। কেউ সাদা পাথর থেকে পানির মধ্যে পাথর ছুঁড়ে দেয়ার আনন্দ নেন, আবার অনেকেই পাথরের ছোট পিরামিড বানিয়ে নিজেদের ছবি তোলেন।

বিশেষ করে বর্ষায় সাদা পাথরের সৌন্দর্য সত্যিই অমোঘ। বর্ষাকালে ধলাই নদীর তীরে থাকা সাদা পাথরগুলো যেন এক নতুন জীবন লাভ করে। অতিবৃষ্টির ফলে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাথরগুলো আরও উজ্জ্বল ও ঝকঝকে হয়ে ওঠে। নদীর স্বচ্ছ পানি ও চারপাশের সবুজ প্রকৃতি এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে, যা পর্যটকদের জন্য একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা।

সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

বর্ষাকাল বাদে অন্য মৌসুমগুলোতে সাদা পাথরের সৌন্দর্য একেক রকম। শীতকালে প্রকৃতি শান্ত ও পরিষ্কার থাকে, আর বসন্তে ফুলের রঙে ভরে যায়। তবে বর্ষাকালেই সেখানে সৃষ্টির সর্বাধিক শোভা দেখা যায়।

আরও পড়ুন

সাদা পাথর ভ্রমণে অনেক পর্যটক স্মৃতিরূপে ছোট ছোট সাদা পাথর সংগ্রহ করেন। পাথরগুলো তাদের জন্য একটি সুলুকসন্ধানের প্রতীক হিসেবে কাজ করে, যা তাদের মনে সারা জীবনের জন্য সতেজ স্মৃতি রেখে যায়। এর মাধ্যমে পর্যটকরা শুধু ভোলাগঞ্জের সৌন্দর্যই মনে রাখেন না, বরং সেই মূহুর্তের আবেগ, হাসি ও আনন্দের স্মৃতি নিয়ে ফিরে আসেন।

সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

ভোলাগঞ্জ এলাকা থেকে স্থানীয় লোকজন পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। এটি সিলেটের পাথর শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, যা স্থানীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। পাথর উত্তোলনের কাজ কঠিন হলেও এখানকার মানুষ এ কাজের সঙ্গে অনেক দিন ধরেই সম্পৃক্ত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি এই পাথর উত্তোলনের দৃশ্যও পর্যটকদের জন্য বেশ কৌতূহলের।

ভোলাগঞ্জ থেকে সাদা পাথর অঞ্চলে যাওয়ার জন্য নৌকায় যাত্রা করতে হয়, কারণ ভোলাগঞ্জের এই এলাকাটি ধলাই নদীর তীরে অবস্থিত। আর সাদা পাথর এলাকায় সরাসরি হাঁটা পথ নেই। নদীর পানি ও প্রবাহিত জলরাশিই একমাত্র মাধ্যম, যা পর্যটকদের সাদা পাথরের মূল এলাকায় নিয়ে যেতে পারে।

সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

বর্ষাকালে নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সাদা পাথরের অঞ্চল হাঁটার জন্য অপ্রতুল ও অসম্ভব হয়ে যায়। তবে নদীর পানি বেড়ে গেলে এখানে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ আরও মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে।

কীভাবে পৌঁছাবেন সাদা পাথরে?

ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট যাওয়ার জন্য বেশ কয়েকটি বাস ও ট্রেনের ব্যবস্থা আছে। সিলেট থেকে গাড়ি বা স্থানীয় যানবাহনে প্রায় এক ঘণ্টার যাত্রা শেষে ভোলাগঞ্জ পৌঁছানো যায়। ভোলাগঞ্জের রাস্তা কাঁচা ও পাথুরে হলেও স্থানীয় যানবাহনে সেই বাধা কাটিয়ে পৌঁছানো সম্ভব।

সাদা পাথর ভ্রমণে যা দেখে চোখ জুড়াবেন

সিলেটের ভোলাগঞ্জে অবস্থিত সাদা পাথর অঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক মোহনীয় স্থান। সেখানকার স্বচ্ছ পানি, সাদা পাথর ও সবুজ পাহাড়ের সম্মিলিত সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসুদের মুগ্ধ করে রাখে দীর্ঘদিন।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।