থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) থাইল্যান্ড থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ০২:৫৮ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
ছবি-থাইল্যান্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মধ্যে অন্যতম ফুকেট

পর্যটন প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডের বিভিন্ন পর্যটন স্পটের মধ্যে অন্যতম ফুকেট। এখানে একবার গেলে বারবার যেতে ইচ্ছে করবে যে কারো। ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের বিমোহিত করে এই দ্বীপ। তাই তো প্রতিদিন এখানে ছুটে যাচ্ছে বিশ্বের হাজার হাজার পর্যটক। কেউ কেউ সড়কপথে, আবার কেউ নৌপথে ছুটে যাচ্ছেন। তবে বেশিরভাগ পর্যটক যাচ্ছেন বিমানপথে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফুকেট, থাইল্যান্ডের বৃহত্তম দ্বীপ ও পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই অনন্য গন্তব্যটি ভ্রমণপিপাসুদের মনোমুগ্ধ করার মতো সবকিছুই অফার করে।

ঝলমলে সাদা বালুর সৈকত, সবুজ পাহাড়, উজ্জ্বল নীল সমুদ্র ও রঙিন চিনা-পর্তুগিজ স্থাপত্যের সমন্বয়ে গঠিত ফুকেট এক কথায় এক স্বপ্নময় ভূমি। ফুকেটের ইতিহাস প্রায় হাজার বছরের পুরোনো, যার মধ্যে আছে একটি সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

এখানে বিভিন্ন যুগের ঐতিহাসিক স্থাপত্য, প্রাচীন মন্দির ও চমৎকার বাজারগুলো পর্যটকদেরকে একটি সময়যাত্রার অভিজ্ঞতা প্রদান করে। বাণিজ্য ও সমুদ্রবাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে এর দীর্ঘ ইতিহাস দ্বীপটির স্থাপত্য ও সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয়েছে।

চিনা-পর্তুগিজ শৈলীর বাড়ি ও রাস্তাগুলো সেই যুগের সাক্ষ্য বহন করে। ফুকেটের প্রতিটি কোণে লুকিয়ে আছে একটি নতুন গল্প, যা পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করছে। ফুকেট কেবল তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই নয়, বরং তার নানান বিনোদনমূলক কার্যকলাপের জন্যও বিখ্যাত।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

সৈকতে সূর্যস্নান, পানির নিচে ডাইভিং, স্নরকেলিং, প্যারাসেইলিং ও বিভিন্ন জলক্রীড়া আপনার অবসরকে করে তুলবে আরও আনন্দময়। প্রতিটি সৈকতের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। আপনি এখানে নির্জনতা ও স্নিগ্ধতা খুঁজে পাবেন। কিছু সৈকত প্রাণবন্ত ও জাঁকজমকপূর্ণ নাইটলাইফ অফার করে, যেখানে রাতের বেলা শহর জেগে ওঠে আলোর ঝলকানিতে।

দ্বীপটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গে, ফুকেটের পর্যটন শিল্পও অত্যন্ত উন্নত। বিভিন্ন ধরণের আবাসন সুবিধা, রিসোর্ট ও হোটেল এখানে পাওয়া যায়। যা প্রতিটি পর্যটকের প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী। আপনি বিলাসবহুল রিসোর্টে থাকাকালীন উপভোগ করতে পারবেন অত্যাধুনিক সেবা ও সুবিধা।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

আর যদি আপনি একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ভ্রমণ চান, তার জন্য পর্যাপ্ত বিকল্প আছে। ফুকেট এমন এক স্থান যা সব ধরনের পর্যটকদের জন্যই আদর্শ। আপনি যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যময় খাদ্য ও বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যকলাপ উপভোগ করতে চান, তাহলে ফুকেট আপনার জন্য উপযুক্ত গন্তব্য। এটি একটি স্থান যেখানে আপনার প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠবে আনন্দময় ও স্মরণীয়।

এখানে আছে পাতং বিচ। ফুকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় সৈকত এটি। তার সাদা বালু ও সবুজাভ নীল পানি দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন। সেখানে আপনি স্নরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং ও প্যারাসেইলিং করতে পারবেন। পাতং বিচে ঘুরে বেড়ানো মানে শুধু সূর্যস্নান নয়, বরং আপনি এখানে নানা রকমের মজার কার্যক্রমও উপভোগ করতে পারবেন।

ফুকেটের পুরোনো শহর ঐতিহাসিক স্থাপত্য, রঙিন চিনা-পর্তুগিজ ভবন ও বাজারের জন্য বিখ্যাত। এখানে হাঁটলে আপনি শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন। ফুকেট ওল্ড টাউনে আছে নানা ঐতিহাসিক মন্দির, জাদুঘর ও শিল্প গ্যালারি।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

এছাড়া সেখানে আছে প্রচুর ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট ও স্থানীয় দোকান। যেখানে আপনি স্থানীয় খাবার ও পণ্যের স্বাদ নিতে পারবেন। ফুকেট ওল্ড টাউন একটি নিখুঁত জায়গা যেখানে আপনি শহরের সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।

ফাং নাগা বে তার চুনাপাথরের গঠন ও শান্ত জলরাশির জন্য বিখ্যাত। জেমস বন্ড আইল্যান্ড নামে পরিচিত কাও পিং কান এখানে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এই উপসাগরটি তার বিস্ময়কর প্রকৃতি ও জলজ জীবনের জন্য বিখ্যাত। আপনি এখানে কায়াকিং, নৌকাভ্রমণ ও স্নরকেলিং করতে পারবেন। ফাং নাগা বেতে ভ্রমণ করা মানে প্রকৃতির অসাধারণ সৌন্দর্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়া।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

সুরিন বিচ তার স্বচ্ছ নীল জল ও সাদা বালুর জন্য পরিচিত। এটি একটি চমৎকার স্থল যেখানে আপনি সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। সুরিন বিচের আশেপাশে প্রচুর বিলাসবহুল রিসোর্ট এবং রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যা এটিকে একটি প্রিমিয়াম পর্যটন গন্তব্য করে তুলেছে। সুরিন বিচে আপনি সাঁতার, স্নরকেলিং ও অন্যান্য জলক্রীড়া উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া, এখানে সূর্যাস্তের সময়ের দৃশ্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

ফুকেট থাইল্যান্ডের প্রাচীন শহর গুলোর মধ্যে অন্যতম এখানে যে এক সময় চিনা উপনিবেশ ছিল তা বেশ বোঝা যায়, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন শহর। চীন ও থাইল্যান্ডের মিশ্র সংস্কৃতি এখানকার অন্যতম বৈশিষ্ট্য যে সমস্ত চীনারা এখনো থাইল্যান্ডে ফুকেট শহরে রয়ে গেছে তারা তাদের সংস্কৃতিকে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

বৌদ্ধ মন্দিরের পাশাপাশি চীনা মন্দির ও মসজিদগুলি বেশ সুন্দর। পাহাড়ি এলাকায় ফুকেট শহরটি অবস্থিত হওয়ায় চারিদিকে ছোট ছোট পাহাড় ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ, যাতায়াত ব্যবস্থা ততটা উন্নত নয় নির্দিষ্ট কিছু রুটে গাড়ি চলাচল করে।

ফুকেটে ঘুরতে আসা বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা ব্যাংকার রেজাউল করিম বলেন, ‘থাইল্যান্ডের মধ্যে অনেক সুন্দর জায়গা ফুকেট। আমি থাইল্যান্ডে আরো কয়েকবার এসেছি। তবে সময়ের কারণে ফুকেট যাওয়া সম্ভব হয়নি।’

থাইল্যান্ডের ফুকেটে যা কিছু যে মুগ্ধ হয় পর্যটকরা

‘এবার দেশ থেকে ব্যাংককে এসে সরাসরি ফুকেটে চলে যাই। বিমানে ফুকেট যেতে ব্যাংকক থেকে ২ ঘণ্টা সময় লাগে। ফিরতি পথে বিমানের টিকেট না পাওয়ায় সড়কপথে বাসে করে আসতে হয়েছে। সময় লেগেছে প্রায় ১২ ঘণ্টা।’

এমএমডি/জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।