নেত্রকোনার এক টুকরো স্বর্গ ‘সুসং দুর্গাপুর’

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:৩৫ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০২৪
ছবি-দেশের অন্যতম একটি টুরিস্ট স্পট সুসং দুর্গাপুর

মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে ময়মনসিংহ বিভাগের উত্তরে নেত্রকোনায় অবস্থিত এক টুকরো স্বর্গ ‘সুসং দুর্গাপুর’। শান্ত, স্নিগ্ধ ও চারপাশে সবুজে আবৃত মনোরম পরিবেশ সেখানে। তাছাড়া আছে সুউচ্চ পাহাড়, হ্রদ, টিলা, বিভিন্ন সংস্কৃতির ছোঁয়া ও নদ-নদীর সমাহার।

যান্ত্রিক পৃথিবীর কোলাহলে আবদ্ধ আমাদের জনজীবনের স্বপ্নের ঠিকানা এটি। প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য অন্যতম আদর্শ স্থান। এটি পাহাড়, নদী ও ঐতিহ্যবাহী স্থানে ভরপুর প্রকৃতির রাজ্য, অপরূপ লীলাভূমি সুসং দুর্গাপুর।

সুসং দুর্গাপুর ভ্রমণে দেখতে পাবেন চারদিকে সবুজ গাছগাছালি আর তারই মাঝে একটি ‘সাদা মাটির পাহাড়’। একটি দুটি নয়, শতাধিক সাদামাটির টিলা আছে সেখানে।

সেখানকার চিনা মাটিকে সাদামাটি বলে আখ্যায়িত করলেও চিনামাটি পুরোপুরি সাদা নয়। বরং কোথাও দেখতে পাবেন লালচে, ধূসর, হালকা নীলাভ, গোলাপি, ঈষৎ বেগুনি, হলুদ কিংবা টিয়া রংয়েরও।

বিচিত্র রঙের মাটির সংমিশ্রণে পাহাড়গুলোর নিচে আছে আবার স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ। আর বিস্তৃত মাঠজুড়ে সবুজের সমারোহ। পাহাড় কেটে মাটি উত্তোলন করার ফলে তৈরি বড় বড় গর্ত। সেসব গর্তে বা ঢালুতে বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে এ স্বচ্ছ নীল পানির হ্রদ।

পাহাড়ের কাছেই আছে কমলার বাগান, বিজিবি ক্যাম্প ও নয়নাভিরাম আরো দর্শনীয় স্থান। বর্তমানে চিনামাটি উত্তোলন বন্ধ থাকায় এটি পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম একটি টুরিস্ট স্পটে। বিজয়পুর চিনামাটির পাহাড়ের আছে ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অতুলনীয় গুরুত্ব।

এটি টারশিয়ারি যুগের পাহাড়ের অন্তর্ভুক্ত। এখানকার মাটি মিহি, কোমাল- ট্যালকম পাউডারের মতো, যা সিরামিক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল। ১৯৫৭ সাল থেকে এই চিনামাটি উত্তোলনের কাজ শুরু হয়। প্রথম কোহিনূর অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে চিনামাটি উত্তোলন শুরু করে ১৯৬০ সালে।

বিজয়পুরে ১৯৬৪-৬৫ সালের দিকে ১৩টি কূপ খনন করা হয়। ১৯৭৩ সালে বিসিআইসি সে কাজে অংশগ্রহণ করে। ধীরে ধীরে মোট ৯টি প্রতিষ্ঠান চিনামাটি উত্তোলনের কাজ জড়িত হয়। বাংলাদেশের খনিজ সম্পদের অন্যতম খনিজ অঞ্চল বিজয়পুর।

পুরো এলাকা ঘিরে ছোট-বড় টিলা বা পাহাড় ও সমতল ভূমি মিলিয়ে দৈর্ঘ্যে ১৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার ও প্রস্থে ৬০০ মিটার খনিজ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এ পর্যন্ত ৫ লাখ মেট্রিকটন মাটি উত্তোলন করা হয়েছে।

মজুদ আছে ১৩.৭৭ লাখ মেট্রিক টন। উল্লেখ্য যে এই প্রাকৃতিক সম্পদটিকে জিআই স্বীকৃতি দিতে নিবন্ধনের আবেদন করেছিল নেত্রকোণা জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। ২০২১ সালে এসে স্বীকৃতি পায়।

সুসং দুর্গাপুরের আরেকটি আকর্ষণ হলো সোমেশ্বরী নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝরনাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরীর সৃষ্টি।

আরও পড়ুন

দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুর ও ভবানীপুর গ্রামের ভেতর দিয়ে নদীটি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি বাংলাদেশ ও ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৫০ কিলোমিটার, গড় প্রশস্ততা ১১৪ মিটার ও প্রকৃতি সর্পিলাকার।

রাণীখং পাহাড়ের পাশ দিয়ে দক্ষিণ দিকে শিবগঞ্জ বাজারের কাছে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় এটি। সোমেশ্বরী নদীতে ঘুরে বেড়ালেই চোখে পড়ে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ঘেঁষে সবুজঘেরা ও লাল চীনামাটির অসংখ্য পাহাড়। বছরের বেশিরভাগ সময় এর একপাশজুড়ে থাকে ধূ ধূ বালুচর, অন্য পাশেই হালকা নীলাভ জল।

নদীর একপাশে খরস্রোতা বয়ে চলার দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। শীত শুরু হলেই ভিন্ন রূপ ধারণ করে নদীটি। শুকনো মৌসুমে সোমেশ্বরী যৌবন হারিয়ে প্রায় মরা নদীতে রূপ নেয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি সোমেশ্বরী নদী কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালি বয়ে আনে।

কয়লা, নুড়ি-পাথর ও সিলিকা বালিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে হাজারো মানুষ। কেউ কেউ আর্থিক অবস্থারও ভাগ্য উন্নতি করেছেন। দুর্গাপুরের বালি এখন দেশব্যাপী জনপ্রিয়। আর এ নদীতে আছে মহাশোল মাছ। যা বাংলাদেশে এ মাছটির অন্যতম আবাসস্থল।

তাছাড়া বৈচিত্র্যময় জনবসতি, ঐতিহ্যবাহী পোশাকে ছুটে চলা আদিবাসী, ক্ষুদ্র ও নৃ-তাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কিছু প্রতিষ্ঠান, সাধু জোসেফের ধর্ম পল্লি, রানীখং মিশন, ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর কালচারাল একাডেমি, ফান্দা ভ্যালি, টঙ্ক শহিদ স্মৃতিস্তম্ভ, কমরেড মণি সিংহের বাড়ি অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

এছাড়া মণি সিংহ জাদুঘর, সুসং মহারাজার সুদৃশ্য বাড়ি, রাশিমণি স্মৃতিসৌধ, কমলা রানীর দিঘি, কংস নদ, আত্রাখালী নদী, চন্ডীগড় গ্রামের মানবকল্যাণকামী অনাথালয়।

আরও আছে কুল্লাগড়ার রামকৃষ্ণ মঠ, দুর্গাপুর সদরের দশভুজা মন্দির, বিজয়পুরের স্থলশুল্ক বন্দর, বিরিশিরি বধ্যভূমিসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। যা ভ্রমণপিপাসুদের দারুণভাবে আকৃষ্ট করে।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।