সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩২ পিএম, ৩০ জুলাই ২০২৪
উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জনপ্রিয় স্থান হলো সিকিম

সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জনপ্রিয় এক পর্যটনকেন্দ্র। সিকিমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে, আর এ কারণে পর্যটকরা ভিড় করেন সিকিমে। ভারতীয় বিভিন্ন রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার বাস সিকিমে।

পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের একটি অংশ সিকিম, আল্পাইন ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুসহ সেখানকার জীব বৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত সিকিম। এখানেই অবস্থিত কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বত। ভারতের সর্বোচ্চ ও পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত শিখর এটি। বর্তমানে অনেকেই ভিড় করছেন সিকিমে।

সিকিম ভ্রমণে যাওয়ার সেরা সময় হলো ফেব্রুয়ারি থেকে মে ও সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস। তবে যে কোনো সময়ই সেখানে যাওয়া যায়। যদিও শীতে রাস্তায় বরফে সাদা হয়ে যায়। এ সময় চলাফেরায় বেশ কষ্ট হয়। অন্যদিকে বর্ষায় উত্তর সিকিমে ধস নামে বিভিন্ন স্থানে। চাইলে দক্ষিণ ও পশ্চিম সিকিমে বছরের যে কোনো সময়ই যেতে পারবেন।

চারদিকে পাহাড় সাদা বরফে ঢাকা। যা আপনাকে দেবে এক অনাবিল আনন্দ। উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি জনপ্রিয় স্থান হলো সিকিম। পূর্ব হিমালয়ের মাঝে অবস্থিত এই হিল স্টেশন। আপনি এখান থেকে বিশাল কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন। তিব্বতি সংস্কৃতির এক দারুণ জায়গা সিকিম। বিকেলে কোন ক্যাফেতে বসে কাটাতে পারেন, গরম- গরম মোমো ও থুকপা খেতে-খেতে।

বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে এমনকি দেশের পর্যটকরাও সিকিমের অন্যন্য রূপ দর্শনে নিয়মিত সিকিম ভ্রমণে যাচ্ছেন। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, সিকিম ভ্রমণের খরচ কত কিংবা সেখানে গেলে কোন কোন স্থান ঘুরে দেখবেন-

সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

সিকিমের দর্শনীয় স্থানসমূহ

তিব্বতি মনাস্ট্রি

তিব্বতি সংস্কৃতি বা তাদের জীবনশৈলী জানার জন্য মনাস্ট্রি যাবেন। এখানে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ মনাস্ট্রি আছে। এগুলো হলো- রুমটেক, সুক লা খাং ও পেমাযাংসে। যেখানে বৌদ্ধ শিল্পকলা দেখতে পাবেন। নামগ্যাল ইনস্টিটিউট অব তিবেতলোজিতে গেলে আপনি এখানকার স্থানীয় সংস্কৃতির বিষয়ে অনেক কিছু জানতে পারবেন।

সমগো বা চাঙ্কু লেক

অনেক উচ্চতায় (নাথুলা পাসের ভীষণ কাছে) চাঙ্কু লেক। এর মনোরম দৃশ্য, পরিষ্কার নীল পানি, বরফে ঢাকা পাহাড় এবং কনকনে ঠান্ডা বাতাস। ইয়াকের পিঠে বসে ঘুরতে পারেন। এই লেক গ্যাংটক থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে।

সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

নাথুলা পাস

চাঙ্কু লেক যখন যাবেনই, তখন আর একটু গিয়ে নাথুলা পাস নিশ্চয়ই দেখে আসবেন। এর উচ্চতা ১৪ হাজার ১৫০ ফুট। যা প্রাচীন সিল্ক রুটের অংশ ছিল। এর একদম কাছেই হলো ভারত-চীন সীমানা।

বসন্তের ইয়ুম্থাং ফুলের উপত্যকা

স্থানীয়রা এই জায়গাকে ফুলের উপত্যকা বলে। যেখানে গেলে আপনি এখানকার জাতীয় ফুল - রডদেন্দ্রন ফুল ফুটতে দেখবেন। এখানেই রয়েছে শিন্গ্বা রডদেন্দ্রন স্যান্গ্চুরি। যেখানে আপনি ৪০ রকমের ফুলের প্রজাতি পাবেন।

আরও পড়ুন

গ্যাংটক

সিকিমের রাজধানী শহর হলোগ্যাংটক মূলত পূর্ব সিকিমের অন্তর্গত। যা বর্তমানে তিব্বতীয় বৌদ্ধ কেন্দ্র ও সিকিমের হিমালায়ান শীর্ষ থেকে ট্র্যাকিং করার জন্য হাইকারদের বেজ ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত। এখানের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের মধ্যে তাশি ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনঝঙ্ঘা ও আশপাশের পাহাড় দেখা যায়।

সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

লাচুং

উত্তর সিকিমের অন্তর্গত তিব্বেতিয়ান বর্ডারের কাছে অবস্থিত লাচুং গ্রাম নদী দিয়ে বিভক্ত। গ্যাংটক থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রামে যেতে প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার মতো সময় লাগে। চারপাশের অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ও ইয়ামথাং ভ্যালী যাবার পথে তিস্তা নদীর স্বচ্ছ নীল পানি ও দুটি অসাধারণ ঝরনা মনকে প্রশান্তি এনে দেয়।

এছাড়া সিকিমের সুইজারল্যান্ড হিসেবে পরিচিত কাটাও মিডিল পয়েন্টথেকে সাদা বরফে ঢাকা পাহাড়ের সুন্দর ভিউ দেখা যাবে। এখানে আরও আছে ভিম নালা ফল খান্দা ওয়াটার ফলস এবং ট্র্যাকিং করার জন্য স্নো পয়েন্ট।

সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

সাঙ্গু লেক

গ্যাংটক থেকে ৪০ কিলো দূরে পূর্ব সিকিমে অবস্থিত সাঙ্গু লেক। ভূ-পৃষ্ট থেকে এটি ৩ হাজার ৭৫৩ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। এই বরফের হ্রদ সিকিমের অন্যতম একটি পর্যটন স্থান। গ্যাংটক থেকে সাঙ্গু লেকে যাওয়ার রাস্তা অদ্ভুত সুন্দর। স্নো ফলের মধ্যে বরফ দিয়ে খেলা করার প্রকৃত মজা এখানে না আসলে কখনোই বোঝা যাবে না।

ইয়ুকসোম

পশ্চিম সিকিমের একটি ঐতিহ্যবাহী শহর যেখানে কাঞ্জনজঙ্খা ঝরনা, ছোট ছোট লেক ও বৌদ্ধ মন্দির আছে। হাইকিং করার ও সুযোগ আছে এখানে।

ইয়ামথাং

এটি ভ্যালি অব ফ্লাওয়ারস নামেও পরিচিত। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ থেকে জুনের মধ্য সময়ে বিভিন্ন রঙের ফুলে পুরো ভ্যালি ঢেকে থাকে।

খরচ কত?

সিকিমে খাওয়া দাওয়া, যাতায়াত ও ঘুরাঘুরি বাবদ ৬ দিন ৭ রাত থাকতে জনপ্রতি ১৭-২২ হাজার টাকার মতো লাগবে। তবে সিকিমে ৬/৭ জনের গ্রুপ করে যাতায়াত করলে ও হোটেল রুম শেয়ার করলে খরচ অনেক কম হবে।

সিকিম ভ্রমণে ঘুরতে ভুলবেন না যে ৯ স্থানে

কোথায় থাকবেন?

সিকিমের গ্যাংটক, পেলিং, লাচুং ও এম জি মার্গে থাকার জন্য অসংখ্য হোটেল, মোটেল ও হোম স্টে আছে। হোটেল অনুযায়ী দুই বেডের ভাড়া লাগবে ২-৫ হাজার টাকা। তবে একটু খোঁজখবর করলে ৫০০-১০০০ টাকার মধ্যে দু’জন রাত কাটানোর মতো রুম পাবেন।

কোথায় ও কী খাবেন?

সিকিমের সব খাবারই অর্গ্যানিক ও ফ্রেশ। গ্যাংটকের এম জি মার্কেট, লাল বাজার রোডে সস্তার মধ্যে মজার স্ট্রিট ফুড খেতে পারবেন। এছাড়া সেখানে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট আছে। যেখানে থুকপা, মম, গুনড্রুক স্যুপ, শা ফালেয়, তিব্বতিয়ান ব্রেড ও লাচ্ছির মতো খাবার খেতে পারেন।

সতর্কতা

সিকিম ভ্রমণে অবশ্যই শীতের ভারি কাপড়, জ্যাকেট, ছাতা, হাত ও পা মোজা, মাফলার, কান টুপি ও বরফে ঢাকা রাস্তায় হাঁটার জন্য অবশ্যই গাম বুট সঙ্গে নিতে হবে।

গ্যাংটক থেকে বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটে যেতে প্রতিবার অনুমতি নিতে হয়। গাড়ির ড্রাইভারের উপর সে দায়িত্ব থাকে। তবে সঙ্গে অবশ্যই পাসপোর্ট, ভিসা, আইএলপি’র অনেকগুলো কপি ও পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে যাবেন। গ্যাংটকে জনসম্মুখে ধূমপান, আবর্জনা ও থুথু ফেলা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই সতর্ক থাকবেন।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।