রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৩:৩৬ পিএম, ০৯ জুলাই ২০২৪
ছবি-ঝরনার রানি হিসেবে রূপসী ঝরনা

ঝরনার রানি হিসেবে পরিচিত চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার রূপসী ঝরনা। সেখানকার পাহাড়ি প্রাকৃতিক অন্যান্য ঝরনায় সব বয়সীরা যেতে না পারলেও এখানে দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন ছুটে যাচ্ছেন শত শত পর্যটকরা।

বৃষ্টির পানিতে এখন ঝরনা তার আসলরূপে ফিরে গেছে। বছরের অন্য সময় ঝরনায় পানি কিছুটা কম থাকলেও এখন পানিতে ভরপুর। ঝরনায় গিয়ে কূপে গোসল করে যেন ক্লান্তি বিদায় করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে সবাই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন ও অনিন্দ্যসুন্দর জলপ্রপাত। মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনার চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

এই সৌন্দর্যে কোনো অংশেই অন্যান্য ঝরনার চেয়ে কম নয়। ঝরনায় যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দু’পাশের দন্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মতো ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে। এই ঝরনার নাম শুনে প্রতিদিন ছুটে আসছেন শত শত ভ্রমণপিপাসুরা।

বর্ষায় পুরো ঝরনায় উপর থেকে পানি বেয়ে নিচে পড়ছে। বাইরের চেয়ে ভেতরের রূপ আরো বেশি সুন্দর। রূপসী ঝরনার উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা। তারপর একটা বড় পাথর। এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

১০ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই অন্যরকম এক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। বিশাল ছড়া, তবে বেশ আঁকাবাঁকা। ঠিক বয়ে চলা কোনো নদীর মতো। ছড়া দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে হরেক রকম পাহাড়ি বৃক্ষ, ফুল, ফল ও লতা।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

ছড়ার বুক বেয়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে যেন কোনো গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করা হচ্ছে। কাঁদা নেই-বালি নেই, সুন্দর সমান এক ছড়া। বন্যমোরগের ছোটাছুটি।

ছড়া ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে দুটি পথ। এক পথের ছড়া বড় ও আরেক পথের ছোট। বড় ছড়া ধরে একটু এগিয়ে গেলেই রূপসীর মূল ঝরনা। অনেক দূর থেকেও কানে ভেসে আসে ঝরনার অবিরাম পানি পড়ার সুমধুর ধ্বনি।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

আরও পড়ুন

কথা হয় রূপসীতে ঘুরতে আসা চট্টগ্রাম শহরের দুই কলেজ ছাত্র ইকবাল ও ফাহিমের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘আমরা ফেইবুকে দেখে এখানে ছুটে এসেছি। এসে অনেক ভালো লাগছে। দেশের অনেক ঝরনায় গিয়েছি। তবে এমন চমৎকার ঝরনা কোথাও দেখিনি। এক কথায় রূপসী ঝরনার রূপ আমাদের পাগল করে দিয়েছে। এখন বর্ষায় পানির কারণে সৌন্দর্য অনেক বেড়ে গেছে।’

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

স্কুল শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ব্যস্ততার কারণে যাওয়া হয় না। এবার ছুটি পেয়ে ব্যাচমেটদের নিয়ে রূপসী ঝরনায় ঘুরতে আসলাম। খুব ভালো লাগছে। এমন চমৎকার ঝরনায় আরও আগে আসা উচিত ছিল।’

ঝরনার শেষ ধাপ পর্যন্ত ঘুরে আসা পর্যটক আমির হোসেন রানা বলেন, ‘অনেক জায়গাজুড়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে শেষ ধাপে। শেষ ধাপ পর্যন্ত যারা আসবেন তারা বাংলাদেশের সেরা প্রাকৃতিক ঝরনা উপভোগ করবেন নিঃসন্দেহে।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

ঝরনায় যাওয়ার সময় দশর্নাথীরা সঙ্গে হালকা খাবার ও পানি নিতে পারেন। কারণ যাওয়া, আসা ও ঝরনা উপভোগ সব মিলিয়ে অন্তত ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবেই। যারা প্রথমবারের মতো যাবেন তারা স্থানীয় পরিচিত কাউকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন।

সতর্কতা

রূপসী ঝরনার উপর থেকে পড়ে ও নিচে কূপের পানিতে ডুবে বিগত তিন বছরে বেশ কয়েকজন পর্যটক মৃত্যুবরণ করেছেন। বৃষ্টিতে ঝরনায় ওঠা বা অতিরিক্ত স্রোতে কূপে না নামাই ভালো। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সেলফি তুলতে গিয়েও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এসব স্থান এড়িয়ে চলা উচিত।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

রূপসী ঝরনায় যাবেন কীভাবে?

দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যে কোনো বাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামবেন। এরপর সিএনজি অটোরিকশায় চড়ে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাবে।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যেতে পারবেন। অথবা যে কোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেই যেতে পারবেন।

থাকবেন ও খাবেন কোথায়?

কমলদহ বাজারে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল আছে। আরও ভালো হোটেলে খাওয়ার জন্য সীতাকুন্ড উপজেলা সদরের বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট আছে।

রূপসী ঝরনা দেখে মুগ্ধ পর্যটকরা, কীভাবে পৌঁছাবেন?

চাইলে থাকা ও খাওয়ার জন্য যেতে পারেন ঝরনা এলাকা থেকে গাড়ি যোগে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশ মুখে এ কে খান ও অলংকারে কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরায়। থাকতে পারবেন এ কে খানে মায়ানী রিসোর্ট ও অলংকারে রোজ ভিও বা ড্রিম লাইট হোটেলে।

এমএমডি/জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।