মহাসাগরে লুকিয়ে থাকা যে রহস্য অনেকেরই অজানা

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:২২ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে আছে অনেক রহস্য

মহাসাগর সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি, আবার এমন অনেক তথ্য অজানাও আছে। যেমন সাগরের পানি আদৌ নীল নয় কিংবা মহাসাগরের তলেও আছে ঝরনা, হৃদ, নদী, আগ্নেগিরি, গভীর খাদ, সোনাসহ আরও অনেক কিছু। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক মহাসাগরের গভীরে লুকিয়ে থাকা কিছু রহস্য সম্পর্কে-

>> সাগরের নীলাভ রং দেখে সবাই মোহগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তবে জানলে অবাক হবেন, সাগরের নিজস্ব কোনো রং নেই। সূর্যের কারণেই সমুদ্রে একটি নীল আভা তৈরি হয়।

সূর্যের লাল ও কমলা রং সাগরের অনেক গভীর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। ফলে আপনি যত নীচে যাবেন সমুদ্র আরও নীল দেখাবে। সাগরের পানিতে আলো শোষণ করার জন্য পর্যাপ্ত অণু থাকে বলেই তা রং ধারণ করতে পারে।

>> সমুদ্রের গভীরতম অংশটি সত্যিই গভীর। এ বিষয়েও অনেকেরই ধারণা নেই। মারিয়ানা ট্রেঞ্চকে বিশ্বের মহাসাগরের গভীরতম অংশ পৃথিবীর গভীরতম বিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ট্রেঞ্চের অভ্যন্তরে চ্যালেঞ্জার ডিপ নামে পরিচিত একটি উপত্যকা আছে, যা পৃষ্ঠের নীচে প্রায় ৭ মাইল (৩৬ হাজার ফুট) বিস্তৃত।

জানলে অবাক হবেন, মাউন্ট এভারেস্টও নাকি ঢুকে যেতে পারে এই খাদে। ২০১৯ সালে ভিক্টর ভেসকোভো সমুদ্রের গভীরতম অংশে পৌঁছানো প্রথম ব্যক্তি হয়ে ইতিহাস তৈরি করেছিলেন।

তবে তিনি এই খাদের ৩৫ হাজার ফুট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেন। আজও এই খাদের সর্বশেষ অংশে কেউ পৌঁছাতে পারেননি।

>> মহাসাগরের তলদেশে একাধিক হ্রদ ও নদী আছে। সমুদ্রের কিছু পৃষ্ঠে এমন দর্শনীয় স্থান আছে যা দেখলে সবার চোখ কপালে উঠে যাবে।

এসব নদী-হ্রদের কয়েকটি মাইলের পর মাইল দীর্ঘ। সমুদ্রের তলদেশ থেকে পানি উঠে যায় ও লবণের স্তরগুলোকে দ্রবীভূত করার মাধ্যমেই এসব নদী-হৃদের সৃষ্টি হয়।

>> সমুদ্রেও নাকি সোনা আছে। তাও আবার মিলিয়ন টন। তবে তা অস্পৃশ্য। তাই চাইলেও সাগরের তলদেশ থেকে সোনা উদ্ধার করা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন

>> পৃথিবীর বৃহত্তম জলপ্রপাত আটলান্টিক মহাসাগরে। আটলান্টিক মহাসাগরের ডেনমার্ক প্রণালীতে সাগরের তলদেশে একটি জলপ্রপাত আছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ২০০০ জলপ্রপাতের সমতুল্য।

পূর্ব দিকের প্রণালীর ঠান্ডা পানি পশ্চিম থেকে আসা উষ্ণ তরলের চেয়ে বেশি ঘন। যখন দুটি পানি মিশে যায়, তখন ঠান্ডা সরবরাহ ডুবে যায় ও একটি জলপ্রপাত তৈরি করে।

>> আমরা সমুদ্রের বেশিরভাগ সামুদ্রিক জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানি। সমুদ্রপৃষ্ঠের নীচে লুকিয়ে থাকা সম্ভাব্য সামুদ্রিক জীবনের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ শানাক্ত করেছি আমরা। এর বেশিরভাগই ছোট জীব, তবে সম্ভবত কিছু তিমি ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রজাতি এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। প্রতিবছর গড়ে ২০০০ নতুন প্রজাতি শনাক্ত করা হয় মহাসাগর থেকে।

>> প্রশান্ত মহাসাগরের নামকরণ করেন ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান। ১৫১৯ সালে যখন ম্যাগেলান আটলান্টিক পাড়ি দিচ্ছিলেন, তখন তিনি অন্যদিকের পানির শান্তভাব দেখে প্রশান্ত মহাসাগর বা শান্তিপূর্ণ সমুদ্র বলে অভিহিত করেছিলেন। প্রশান্ত মহাসাগর ৫৯ মিলিয়ন বর্গ মাইলজুড়ে অবস্থিত। এটিই গ্রহের বৃহত্তম মহাসাগর হিসেবে বিবেচিত।

>> পৃথিবীর সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানের অবস্থান হলো দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে। যা পয়েন্ট নিমো নামে পরিচিত। ৩টি প্রতিবেশী দ্বীপের উপকূল থেকে প্রায় ১০০০ সমদূরত্ব মাইল দূরে এর অবস্থান। এটি প্রায় মহাকাশের সমমান দুরত্বের স্থান।

>> অনেকেই হয়তো জানেন না যে, বেশিরভাগ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে ঘটে। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ভূমি-নিবাসীদের নজরে পড়ে না। কারণ পানির নিচে অগ্ন্যুৎপাত ঘটে।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, মহাসাগরের তলদেশে ১ মিলিয়নেরও বেশি আগ্নেয়গিরি আছে। যারা কিছু বিলুপ্ত ও কিছু খুব সক্রিয় আছে। সক্রিয় আগ্নেয়গিরি সমুদ্রের পৃষ্ঠের নীচে অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে উত্তপ্ত লাভা ছড়ায়।

>> সমুদ্রের গভীরে বিলিয়ন ডলার মূল্যের ধন থাকতে পারে। সমুদ্রে কত হাজার হাজার জাহাজ ধ্বংস হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। এসব জাহাজে থাকা ধনসম্পদ নিশ্চয়ই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সাগরের তলদেশে।
ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এনওএএ) ধারণা, এক মিলিয়ন ডুবে যাওয়া জাহাজ অন্ধকারে লুকিয়ে আছে; অন্যরা উদ্ধার না হওয়া গুপ্তধনের মোট মূল্য দাঁড়ায় ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

>> সাগরের মাছ প্রচুর প্লাস্টিক খাচ্ছে। প্রতিবছর সমুদ্রে ৭ মিলিয়ন টন প্লাস্টিক ফেলা হচ্ছে। সান দিয়েগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের ধারণা, প্রতি বছর সাগরের মাছেরা ১২-২৪ হাজার টন প্লাস্টিক গ্রাস করে।

>> সুনামির তরঙ্গ ১০০ ফুট লম্বা হতে পারে। ১৯৫৮ সালে আলাস্কায় ভূমিকম্প ও ভূমিধসের ফলে ১০০ ফুট উঁচু সুনামি তৈরি হয়েছিল। এতে ১৭২০ ফুট পর্যন্ত সমস্ত গাছপালা ধ্বংস হয়েছিল, যা ইতিহাসে বৃহত্তম সুনামি বলে রেকর্ড করা হয়।

>> সমুদ্রের সবচেয়ে বড় ঢেউগুলো তলদেশে হয়। তরঙ্গগুলো বিভিন্ন ঘনত্বের জলের স্তরগুলোর অংশ ও ভেঙে পড়ার আগে ৮০০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

সূত্র: মেন্টালফ্লস

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।