তিস্তা ব্যারাজে লাখো দর্শনার্থীর ঢল
পবিত্র ঈদ-উল ফিতরে আনন্দ উপভোগ করতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দেশের বৃহত্তর তিস্তা ব্যারাজে লাখো বিনোদনপ্রেমী মানুষের ঢল। ঈদের নামাজ শেষ হতেই ব্যারাজে মানুষের সমাগমে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। উৎসব আর আনন্দে মেতে উঠেছে পুরো তিস্তা ব্যারাজ এলাকা।
অপর দিকে তিস্তার ভাটিতে নৌকা আর স্পিডবোটে এ যেন সমুদ্রের তীরের সৈকতের ছোঁয়া। স্পিডবোর্ড আর পালতোলা নৌকায় উঠানোর জন্য অপেক্ষা করছে দর্শনার্থীরা। প্রতিবছর ঈদ ও নানা উৎসবের দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ এলাকা।
ঈদের প্রথম দিনে সকাল থেকে ব্যারাজ এলাকায় দর্শনার্থীদের ভিড় লক্ষনীয়। বিভিন্ন স্থান থেকে কেউ আসছে মটর বাইকে কেউ বা অটোরিকশায় আবার কেউ বা মাইক্রো বাসে চেপে। তিস্তা পাড়ে চলছে আনন্দ উল্লাস। এতে তিস্তা ব্যারাজ এলাকা জুড়ে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
তিস্তা ব্যারাজ যেন মিনি কক্সবাজারে পরিণত হয়েছে। তিস্তার বুকে ৮ টি স্পিডবোট চলছে। দ্রুত বেগে এপাশ থেকে ওপাশে ছুটে চলছে পর্যটকদের নিয়ে। স্পিডবোট ও পালতোলা নৌকায় মাত্র ৫০ টাকায় তিস্তার বুকে ভাসছেন দর্শনার্থীরা। এতে বয়সী মানুষ হৈ হুল্লোড়ে মেতে উঠছেন সবাই। বড় বড় ঢেউ এসে ধাক্কা দিচ্ছে তিস্তার কূলে। ছিটকে আসা জলরাশির আনন্দে মেতে উঠছে সবাই।
আরও পড়ুন
তিস্তা ব্যারাজে আনন্দের মাত্রা বাড়াতে ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনে ছবি তুলে স্মৃতির ফ্রেমে বন্দি করছেন প্রিয় মুহূর্তগুলো। সবার জন্য উন্মুক্ত বিনোদন কেন্দ্রটি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের পদচারণায় মুখোরিত হয়ে থাকে। একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে হলেও নিরাপত্তা নিয়ে তেমন কোনো ঝুঁক্কি পোহাতে হয় না দর্শনার্থীদের। পাড়ে ছোট ছোট দোকানে সাশ্রয়ী দামে পাওয়া যায় নাস্তা ও বিভিন্ন খাবার।
ঈদের ছুটিতে সব বয়সী মানুষের ভিড় জমলেও এখানে আসা সিংহভাগই তরুণ-তরুণী। শিশুদের সঙ্গে অভিভাবকরাও কিছুক্ষণের জন্য হারিয়ে যাচ্ছেন আনন্দের রাজ্যে। ঈদের আনন্দে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা বলেন, অত্র এলাকায় কোনো বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় প্রতিবছর ঈদ ও নানান উৎসবে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ছুটে আসি। আনন্দ উপভোগ করে ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে।
হাতীবান্ধা উপজেলা থেকে আসা দর্শনার্থী রুমানা বিজলী বলেন, ঈদের প্রথম দিন আজ, খুবই আনন্দ লাগছে অনেক মজা করছি আমরা এখানে। আমি আমার স্বামী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখানে ঘুরতে এসেছি। ৩০টি রোজার পর এই ঈদ। অনেক খুশি লাগছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।
ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে আসা লাভলু মিয়া বলেন, ঈদ উপলক্ষে শিশুদের নিয়ে তিস্তা ব্যারাজে ঘুরতে আসছি। অত্র এলাকায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। এই এলাকায় যদি শিশুদের জন্য নাগরদোলা ও খেলার সামগ্রী স্থাপন করলে আরও ভালো হতো।
দর্শনার্থী রুহুল বলেন, আমরা ঢাকা শহরে গণ্ডির মধ্যে বসবাস করি তাই এই ঈদে শিশু সন্তানদের নিয়ে খোলা জায়গায় একটু নিঃশ্বাস নিতে তিস্তা ব্যারাজে ছুটে এসেছি। এতে বাচ্চারা অনেক আনন্দ পায়।
রংপুর থেকে ঘুরতে আসা হিজলা মোছাঃ আনোয়ারা ইসলাম রানী বলেন, সবার আনন্দ দেখে আমারও আনন্দ লাগছে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় ছোট-বড় একটি বিনোদন কেন্দ্র দেখতে পারছি এখানে অনেক পর্যটক ঘুরতে এসেছে। আমি চাই এই এলাকাটা যদি আরেকটু ও দর্শনীয় করা হতো তাহলে সবার জন্য ভালো হতো।
জলঢাকার চাপানী থেকে আসা দর্শনার্থী রবিউল ইসলাম রাজ বলেন, পবিত্র মাহে রমজান শেষে ঈদের আনন্দে তিস্তা ব্যারাজের এসে স্বচ্ছন্দ বোধ করছি। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় যদি বিনোদন কেন্দ্র ঘোষণা করা হয় তাহলে সরকার এখানে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব পাবেন।
গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন বলেন, অত্র এলাকায় বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় প্রতি বছরের ন্যায় এবারও লাখ লাখ মানুষ তিস্তা ব্যারাজে এসে ঈদ আনন্দ উপভোগ করছেন।
এ বিষয়ে হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ঈদ উপলক্ষে তিস্তা ব্যারাজে পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য দোয়ানি ফাঁড়ি পুলিশের সদস্যরা কাজ করছে।
আরও পড়ুন
রবিউল হাসান/কেএসকে/জেআইএম