বগুড়া ভ্রমণে কোন কোন স্থান ঘুরে দেখবেন?
উত্তরবঙ্গের রাজধানী ও প্রবেশদ্বার বলা হয় বগুড়াকে। শুধু দই-মিষ্টির জন্যই বিখ্যাত নয় বিভিন্ন পর্যটন স্পটের জন্যও পরিচিত এই জেলা। বগুড়া ভ্রমণে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান থেকে ঘুরে আসতে পারেন। এক থেকে দু’দিনেই বগুড়ার এসব পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণ করা সম্ভব। জেনে নিন কোন কোন স্থান ঘুরে দেখবেন-
মহাস্থান জাদুঘর
মহাস্থানগড়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধরে রাখতে ১৯৬৭ সালে করতোয়া নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করা হয় একটি জাদুঘর। পরবর্তীতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সেটি দেখাশুনার উদ্যোগ নেয়।
সেখানে আছে পুরোনো মাটির মূর্তি, বাসনপত্র, স্বর্ণবস্তু, ব্রোঞ্জের সামগ্রী, কালো পাথরের মূর্তি, বেলে পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন শিলালিপি, মাটি, মূল্যবান পাথর, মার্বেল, পোড়া মাটির পুতুল, নানা ধরনের প্রাচীন অলংকারসহ প্রাচীন ও মূল্যবান নিদর্শন।
বেহুলার বাসর ঘর
এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে ও মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। ঐতিহাসিক এক স্থান হলো বেহুলার বাসর ঘর। এর উচ্চতা ৪৫ ফুট। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের মতে, আনুমানিক খ্রিষ্টাব্দ সপ্তম শতাব্দি থেকে ১২০০ শতাব্দির মধ্যে এটি নির্মিত হয়।
খোদার পাথর ভিটা
এটি মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি ঢিবি বা পাথর। এটিও একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বিভিন্ন স্থান থেকে এসে দর্শনার্থীরা এই পাথরে দুধ দেয়। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘দুধ পাথর’ হিসেবেও পরিচিত।
জিউৎকুণ্ডু
এটি মহাস্থানগড়ে অবস্থিত একটি কূপ ও অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। লোককাহিনী অনুসারে, এই কূপের পানিতে ছিল অলৌকিক ক্ষমতা। যা পান করলে নাকি মৃত ব্যক্তিও জীবিত হয়ে যেতেন!
কথিত আছে, রাজা পরশুরাম যখন শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ারের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তখন রাজা পরশুরাম তার সৈন্যদের এই কূপের পানির মাধ্যমে আবার জীবিত করতেন।
শাহ সুলতান বলখী এ বিষয়টি জানার পর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। পরবর্তীতে নাকি একটি কাক এক টুকরো মাংস মুখে নিয়ে যাওয়ার পথে সেটি কূপে পড়ে যায়। তারপর থেকে কূপটির পানির অলৌকিক ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
আরও পড়ুন
- বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড, বাংলাদেশের অবস্থান কত?
- সীতাকুণ্ড ভ্রমণে একদিনেই যা যা ঘুরে দেখবেন
পরশুরাম প্যালেস
এটি মহাস্থানগড়ে যেসব প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে তারমধ্যে অন্যতম। এটি পরশুরাম প্যালেস নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, এখানে অষ্টক শতক বা পাল আমলের নির্মিত ইমারতের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।
শিলাদেবীর ঘাট
এটি মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ২০০ মিটার পূর্বে করতোয়া নদীর তীরে অবস্থিত। লোককাহিনী অনুযায়ী, শীলাদেবী ছিলেন রাজা পরশুরামের বোন।
শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার, রাজা পরশুরামকে পরাজিত করার পর শীলাদেবী এই স্থানে জলে ডুবে আত্মহুতি দেন। এরপর থেকে প্রতিবছর স্থানীয় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লা দশমীতে এই স্থানে স্নান করে থাকেন।
ভাসু বিহার
মহাস্থানগড় থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার অদূরে এটি অবস্থিত। এটি ‘নরপতির ধাপ’ হিসেবেও বেশ পরিচিত ও অন্যতম প্রাচীন প্রত্ননিদর্শন। ধারণা করা হয়, এটি একটি বৌদ্ধ সংঘারামের ধ্বংসাবশেষ এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় বিদ্যাপীঠ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এছাড়া মহাস্থানগড়ে আছে মহাস্থান মাজার, গোবিন্দ ভিটা, বৈরাগীর ভিটা, মান কালীর কুণ্ডুসহ আরো অনেক নিদর্শন। এর সবকটি স্থানে একদিনই ভ্যান, রিক্সা, সিএনজি অথবা অটোতে যাওয়া যায়।
সারিয়াকান্দি
এটি বগুড়ার অন্তর্গত একটি উপজেলা। যেখানে আছে দুটি ঘাট। একটি প্রেম যমুনার ঘাট ও আরেকটি কালিতলা ঘাট। এসব ঘাটে মেলে ছোট-বড় ইঞ্জিনচালিত ও ইঞ্জিন ছাড়া নৌকা অথবা স্পিড বোট।
এসবে চড়ে ২০-৩০ টাকা খরচ করেই নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এখানে আরও আছে বেশ কয়েকটি হোটেল। যেখানে নদীর রান্না করা মাছ পাওয়া যায়।
কীভাবে যাবেন বগুড়া?
ঢাকাসহ দেশের যে কোনো জায়গা থেকে বাস অথবা ট্রেনে চড়ে যেতে পারেন বগুড়া। শ্যামলী পরিবহন, এসআর ট্রাভেলস, ডিপজল এক্সপ্রেস, মানিক এক্সপ্রেস ইত্যাদি বাসে বগুড়া পৌঁছাতে পারেন। ট্রেনের ক্ষেত্রে ঢাকা-বগুড়া রুটের ‘লালমনিরহাট এক্সপ্রেস’ আন্তঃনগর ট্রেন বেছে নিন।
থাকবেন ও খাবেন কোথায়?
বগুড়ায় ফাইভ স্টার হোটেল মম ইন, হোটেল নাজ গার্ডেন, পর্যটন মোটেল, নর্থওয়ে মোটেলসহ আরো বিভিন্ন হোটেল আছে। যে কোনো একটিতে থাকতে পারেন। এছাড়া খাবারের জন্য বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথায় অবস্থিত হোটেল আকবরিয়া, সেলিম হোটেলসহ নানা মানের হোটেল পাবেন।
জেএমএস/এএসএম