ইলদিজ প্রাসাদে ইফতারের স্মৃতিকথা

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:১৪ পিএম, ২৮ মার্চ ২০২৪

সে সময়ের রমজানে ইলদিজ প্রাসাদের ইফতার আয়োজনের কথা প্রায় তিন মহাদেশ পেরিয়ে গিয়েছিল। দীর্ঘ এগারো মাস লোকমুখে লেগেই থাকতো ইলদিজে আয়োজিত সুলতান হামিদের রমজান উপলক্ষে জমজমাট আয়োজনের কথা।

কত আনন্দে মাসজুড়ে লোকেরা রাজপ্রাসাদে সমাগম হতো! রজব মাস পেরোতেই শাবানের ঘ্রাণে রমজান ভেসে আসতো। যেন রমজান নামক একটি ভাসমান ফানুস ধীরে ধীরে আকাশে গম্বুজের ছাদ এঁকে ফেলতো।

আমরা প্রাসাদকর্মীরা সারাবছর অধীর আগ্রহে রমজানের জন্য অপেক্ষা করতাম। সুলতান হামিদ রাজ্যের সাধারণ প্রজাদের সাথে প্রায়ই ইফতারের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতেন। রাজ্যের গণ্যমান্য আলেম-ওলামা, কবি-সাহিত্যিক ছাড়াও উপস্থিত থাকতেন সমাজের সাধারণ মানুষ। কখনো কখনো সাধারণ মানুষের এতটাই সমাগম হতো যে, আমরা প্রাসাদের বাগান থেকে শুরু করে বেলকনি পর্যন্ত বিন্দুমাত্র জায়গা পেতাম না।

আমরা পাশাগন ও প্রাসাদের কর্মচারীরা সুলতানকে নিরাপত্তার খাতিরে এসব আয়োজনে যেতে নিষেধ করতাম। সুলতান তখন আমাদের নিষেধ বাণী শুনে মূর্তির মতো স্তব্ধ হয়ে যেতেন। শিশুদের মতো করে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতেন। কিছু সময় পর বলতেন, ‘যদি আমি রাজ্যের সাধারণ মানুষের সমাগমে পৌঁছাতেই না পারি। আমি তবে নিশ্চয়ই ব্যর্থ সুলতান!’

ইলদিজে রমজানে ইফতারের আয়োজনে সমস্ত ইস্তাম্বুল ঝকঝক করতো। এসব আয়োজনে কখনো কখনো সুলতানের মিত্র শক্তি নামে পরিচিত ইউরোপের প্রভাবশালী রাষ্ট্র ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইতালি ও রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতরা দাওয়াত পেতেন। সুলতান তাদের দাওয়াত করতেন প্রাতঃরাশের। যা মুসলমানদের জন্য ফুতুর বা ইফতার বলে পরিচিত ছিল।

আরও পড়ুন

এ ছাড়া সুলতান ইফতার আয়োজনের পরপরই ‘তোহফা’ নামক একটি পর্বের আয়োজন করতেন। সেখানে আয়োজনে উপস্থিত জনসভা থেকে ভাগ্যবানদের রাষ্ট্রীয় সীলসহ সোনা, রূপা ও নগদ অর্থ দিতেন। সাধারণত রমজানে এসব আয়োজন রাজ্যের কোষাগারকে ভোগান্তিতে ফেলতো। কেননা তৎকালীন উসমানী সাম্রাজ্য ঋণের বোঝায় হাবুডুবু খাচ্ছিল। সুলতান হামিদ সর্বদা খরচের বিষয়ে সতর্ক সংকেত দিলেও রমজানের ইফতার আয়োজনে কখনো সংকেত দিতেন না। খরচের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতেন।

এসব আয়োজন দিন দিন এতটাই বিস্তৃত লাভ করছিল যে ‘সেরেনজে বে’ সুলতানের আদেশে ইলদিজ প্রাসাদের বাগানের সাথে ‘বেসিকতাস’ মহল্লাকে রমজান মাস উপলক্ষে সংযুক্ত করে দেন। তখন থেকেই সাধারণ মানুষ ইলদিজ প্রাসাদের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে শুরু করে। ইফতার থেকে শুরু করে তারাবিহ নামাজ পর্যন্ত এসব আয়োজন চলতে থাকে। শত শত মানুষ খালি পেটে ইলদিজ প্রাসাদে ভ্রমণ করে ভরপুর পেট নিয়ে প্রাসাদ থেকে বের হতো।

সুলতান এসব আয়োজন দীর্ঘকাল ধরে রাখলেও আমরা প্রাসাদকর্মীরা উপলব্ধি করতে পারি, বহিরাগত সাধুরা সবাই সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাসাদে আসতেন না। আগতদের মধ্যে ভিন্ন ধর্মীয় তথা- আর্মেনিয়ান, ইহুদি, খ্রিষ্টান ধর্মালম্বীরাও নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সুলতান তাদের প্রাতঃরাশের অনুমোদন দিয়েছিলেন। তবে অনেকেই খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল করতে থাকেন। প্রাসাদ গমনকে মন্দ কাজে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। দিন দিন এ সংখ্যা ভারী হতে থাকে।সর্বশেষ মহান সুলতান মুসলমানদের রমজান উপলক্ষ্যে এ আয়োজন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হোন।

তাহসিন পাশার লেখা ‘সুলতান আব্দুল হামিদ ও ইলদিজ প্রাসাদের স্মৃতিকথা’ বইটির বাংলা অনুবাদ থেকে সংগৃহীত।

অনুবাদক: মাহমুদুল হাসান সুনান খান, ইস্তাম্বুল ইবনে হালদুন ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।

এসইউ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।