একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসুন গজনী অবকাশে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ১০ মার্চ ২০২৪
পাহাড়ের ঢালে, গায়ে কিংবা চূড়ায় নানান বৃক্ষের সমাহার

তানজিদ শুভ্র

প্রকৃতিতে বসন্তের মৃদু মন্দ বাতাস বইছে। শনিবার সকাল। একে একে ডিপার্টমেন্টের সামনে জড়ো হচ্ছে ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সব বর্ষের শিক্ষার্থীরা। রং-বেরঙের পোষাকের মতো রঙ ছড়াচ্ছে সবার মনে। পুলকিত চিত্তে সবাই আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে যাত্রা শুরুর।

এবারের বার্ষিক সফরের গন্তব্য সবুজে ঘেরা শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতির গজনী অবকাশ কেন্দ্র। সকাল সাড়ে ৮টায় সব গুছিয়ে এক বাস উচ্ছ্বাসিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে গাজীপুর থেকে যাত্রা শুরু। এরই মাঝে একদল শিক্ষার্থী রঙিন পোষাক পরিবর্তন করে এক সাজ নিতে নির্ধারিত সাদা রঙের টি-শার্ট পরে নিয়েছে।

গাজীপুরের ব্যস্ত মহাসড়ক দিনের শুরুতে অতটা ব্যস্ত হয়ে উঠার আগেই বাস পার করেছে নাগরিক কোলাহল। এসব ছাড়িয়ে বাস তার নিজ গতিতে মহাসড়কে ছুটে চলছে আর ভাওয়াল উদ্যানের সারি সারি গাছ সবুজের হাতছানি দিচ্ছে।

এভাবেই গাজীপুরের সীমা ছাড়িয়ে ময়মনসিংহ জেলায় প্রবেশ করল বাস। কোথাও রাস্তার ধারের শিল্প কারখানা আর কোথাও গজার বনের সবুজ আর লাল মাটি দেখতে দেখতে নজরুলের স্মৃতি ফলক স্বাগত জানাল ত্রিশাল উপজেলায়।

শহরে প্রবেশের আগেই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলক দেখতে দেখতে বাস ছুটে গেল ময়মনসিংহের দিকে। এর মাঝে সকালের নাশতার বিরতিতে বাস থামলো। চলার পথে নাচে গানে মেতে উঠেছে সব ব্যাচের শিক্ষার্থীরা।

একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসুন শেরপুর গজনী অবকাশে

গন্তব্যে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ঘড়ির কাঁটা স্পর্শ করে দুপুর ২টার ঘণ্টা। প্রত্যাশিত সময় থেকে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। সব মিলিয়ে বড়রা ব্যস্ততা হয়ে পড়ে রান্নার জিনিসপত্র আর স্থান ঠিক করতে। এদিকে বাকিরা সবাই দল বেঁধে বেড়িয়ে পড়ি বন পাহাড়ের নৈস্বর্গিক দৃশ্য উপভোগ করতে আর স্মৃতি ফ্রেমবন্দি করতে।

পাহাড়ের ঢালে, গায়ে কিংবা চূড়ায় নানান বৃক্ষের সমাহার। শাল, সেগুন, মহুয়া, গজারী, আকাশমনি, ইউক্যালিপটাস সহ নাম না জানা কত শত পাহাড়ি গাছ আর বনফুলে বিস্তৃত এই নয়নাভিরাম প্রকৃতির ক্যানভাস। মুগ্ধ নয়নে এসব দেখতে দেখতে আমরা ঘুরে বেড়াচ্ছি।

সবাই উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের হওয়ায় গাছপালা নিয়ে জানার আগ্রহ কিঞ্চিত তো আছেই। ঘুরতে থাকা দলের কোনো একজন জিজ্ঞাসু সুরে বলে উঠছে এটি কী গাছ? পাশ থেকে আরেকজন বলে দিচ্ছে, আবার সিনিয়র কেউ থাকলে প্রশ্ন করছে বৈজ্ঞানিক নাম নিয়ে।

পাহাড়, বনানি, ঝরনা, হৃদ এতসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝেও কৃত্রিম সৌন্দর্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রে আগত পর্যটকদের নতুন মাত্রা নিয়ে আকৃষ্ট করে। বুকে ভয় নিয়েই অনেকেই ঝুলন্ত ব্রিজ পার হয়ে ওই পাড়ের দৃশ্য দেখতে ছুটে গেল।

ঝুলন্ত ব্রিজে হাঁটতে গিয়ে কিংবা পাহাড় চড়তে গিয়ে প্রায় অধিকাংশই হাত কেঁটেছে। আবার অনেকেই ড্রাম সাজিয়ে নির্মাণ করা ভাসমান সেতুতে দাঁড়িয়ে গোধূলি বেলায় সুন্দর মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি করেছে। আধুনিক স্থাপত্য রীতিতে নির্মিত ৬৪ ফুট উঁচু ওয়াচ টাওয়ারে দাঁড়িয়ে চারপাশের সবুজ আর দূর মেঘালয় রাজ্যের হাতছানি পেতে কেউ বাদ যায়নি।

আরও পড়ুন

টাওয়ারের চূড়ায় দাঁড়িয়ে ধূসর, আকাশি আর সবুজের মিতালিতে চোখ জুড়িয়ে যায়। এসবের মাঝে সময় করে আমরা চলে যাই পাশের জনবসতিতে হাঁটতে। ক্লান্ত হয়ে হাঁটছিলাম। ছোট ছোট মাটির ঘর, গুছানো বাড়ি, পাশে সবজি কিংবা ফলদি গাছের বাগান। তবে এই বাড়িগুলো কোলাহলপূর্ণ মনে হয়নি। হতে পারে প্রায় সবাই শ্রমজীবী।

কোনো কোনো বাড়িতে দু’একজন মানুষের দেখা পেলাম। কিছুদূর হেঁটে আমরা ফিরে আসি আমাদের স্পটের কাছাকাছি। ঘড়িতে তখন পাঁচটা বেজে গেছে। ঘুরে ফিরে এসে দেখি এদিকে বিলম্বিত মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন চলছে। খাবার নিয়ে মাঠের ঘাসে বসে খেয়ে নিলাম।

একদিনের ট্যুরে ঘুরে আসুন শেরপুর গজনী অবকাশে

একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দর্শকদের সামনে প্রদর্শন করার জন্য পরিচালক আর কলা-কুশলীদের যেমন কয়েক মাসের পরিশ্রম করতে হয়, তেমনই এমন একটি আনন্দমুখর দিনের আয়োজনের পেছনেও আমাদের সিনিয়র ব্যাচের বেশ কয়েকজনের অক্লান্ত পরিশ্রম অনস্বীকার্য।

একদিনের এই ভ্রমণে যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গ দিয়েছেন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আখতার জাহান শাম্মী ম্যাম। ঘোরাঘুরি, খাবারের পর্ব শেষে তখন আমাদের ফেরার পালা। এর আগে সবাই একত্র হয়ে সম্প্রীতির বন্ধনে এক ফ্রেমে আবদ্ধ হলাম। বাসে উঠে দিনের ক্লান্তি ভুলে আবারো সবাই একত্রে মেতে উঠল আনন্দে।
গান আর কবিতায় রাতের নিরবতা ভেঙে সবার আনন্দ ধ্বনিতে জমে উঠল সময়। পথের মধ্যে যাত্রা বিরতিতে চা চক্রে যোগ দিয়ে দল ভেদে বিচ্ছিন্ন আলাপন, গানের ভিড়ে কারও কারও খুনসুটি, ছোট ছোট গল্পে নতুন স্মৃতি। যানজট পেড়িয়ে বাস যাত্রা সমাপ্তি করতে করতে ইংরেজি ক্যালেন্ডারে দিন তারিখ বদলে গেছে।

বই একজনকে শেখায় কীভাবে জীবনী পড়তে হয়, কিন্তু একটি ভ্রমণ শেখায় কীভাবে জীবনযাপন করতে হয়। একজন ভ্রমণকারীর জন্য প্রতিটি ভ্রমণের স্মৃতিই একটি মূল্যবান উপহারের মতো। বন পাহারের এই কয়েক ঘণ্টার স্মৃতি আমাদের অনেক দিনের পাথেয় হয়ে থাকবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।