গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে কী কী দেখবেন?
অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নে এটির অবস্থান। বৃহত্তর সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ও পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের আদলে এই পর্যটন স্পট। প্রতিদিন এখানে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে শত শত ভ্রমণপিপাসুরা।
এই সৈকতে পা ফেলতেই কাদামাখা মাটির আস্তরণে নরম ঘাসের রাজত্ব। দু’দিকে কেওড়া বন। সেই বনের ভেতর দিয়ে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি খাল। খালের পাশ ধরে সামনে দেখা যাবে বিশাল জলরাশি আর তার ঢেউ। আছড়ে পড়ছে একেবারে তীরে সবুজ ঘাসের ওপর। তবে গর্জন কম।
পরিবেশটা একেবারেই সুনসান। কিছুক্ষণ পর সূর্য রানি পশ্চিমে যাবেন। তারপর টুপ করে ডুব দেবেন সমুদ্রের পানিতে। আর তাতেই বাড়বে মায়া। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড উপজেলা সদর ৭ কিলোমিটার দূরে এই সৈকত। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অবশ্য এই জায়গা মুরাদপুর বিচ নামে পরিচিত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জনপ্রিয় এই সমুদ্রসৈকতকে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সাজানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে এটির উন্নয়ন প্রকল্পের নকশা অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
নকশা অনুযায়ী এই সাগর পাড়ে নির্মাণ করা হবে সুদৃশ্য ওয়াকওয়ে, দৃষ্টিনন্দন সেতু ও একটি উন্নতমানের রিসোর্ট, একটি রেস্তোরাঁ যা বাস্তবায়নে অতিদ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতির লীলাভূমিখ্যাত সীতাকুন্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের গুলিয়াখালী সাগর উপকূলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে ঘিরে বিগত প্রায় এক দশক ধরে পর্যটকদের আনাগোনা দিন দিন বাড়ছে।
বিশেষ করে বর্তমান ইউটিউব-গুগুলের যুগে এই সমুদ্রসৈকতের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্রুত প্রচারিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারাবছর এখানে ছুটে আসছেন লাখো দর্শনার্থী।
তবে দীর্ঘ সময় ধরে এই সৈকত ছিলো সম্পূর্ণ প্রকৃতিগত। এটি নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা ছিলো না। ২০২২ সালে সরকার এই সমুদ্রসৈকতকে স্বীকৃতি দিয়ে পর্যটন স্পট ঘোষণা করে। সেই থেকে ধীরে ধীরে উন্নয়নের ছোঁয়া পেতে থাকে এই পর্যটন স্পটটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সাগরপাড়ে যাওয়ার পথে আছে সবুজ ঘাসের ছোট ছোট মাটির চাক বা কুণ্ড। সেখানে পা দিয়েই এগিয়ে যেতে হয় ঢেউয়ের কাছে। ইচ্ছে করবে হাত-পা এলিয়ে দিয়ে সাগরকে উঁকি দেওয়া নীলাকাশ দেখার। ঢেউয়ের ওপর সাদা মেঘের ভেলা। খেলছে আনমনে।
যত দূর চোখ যায় উত্তাল তরঙ্গ। মন কেড়ে নেয় সহজে। সাগরের ঢেউয়ে দুলছে নৌকা। জেলেরা ফিরে আসছেন মাছ নিয়ে। পাড়েই রয়েছে অনেক বোট। ঘুরে আসতে পারেন ঘণ্টাখানেক।
আরও পড়ুন
• ‘ডে লং টুরে’ ঘুরে আসুন জিন্দাপার্কে
• নীলগিরি ভ্রমণে কখন ও কীভাবে যাবেন, কত খরচ?
সাগরের বুকে জড়িয়ে থাকা সন্দ্বীপের দৃশ্য মনটা ভালো করে দেবে। বিকেল গড়াতেই সূর্য ডুবে যায়। ম্যানগ্রোভ বনের হাতছানি ডাক দেয় চুপিচুপি। এখানে দাঁড়িয়ে দূর থেকে সূর্যাস্ত দেখার মজাটা সত্যি অন্য রকম!
সাগরের পাড়েই কেওড়াগাছের গহিন বন। চোখে পড়ে সারি সারি শ্বাসমূল। জোয়ারের সময় সেই বনের গাছের ফাঁকে ঢুকে যায় সাগরের পানি। নৌকাভ্রমণে গিয়ে মনে হবে, আরে, সুন্দরবনে চলে এলাম না তো!
অনেকে প্রিয় মুহূর্তটা স্মৃতির পাতায় ধরে রাখতে ছবি তুলতে ভুল করেন না। গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকত অসংখ্য ছোট খালের মিলনস্থল। এসব খালে ছোট নৌকা দিয়ে ঘুরে বেড়ানো যায়।
ভাটার সময় দারুণ লাগে পুরো সৈকত। তবে সাগরের কাছে এসেই জোয়ার-ভাটার তথ্যটা টুকে নিতে হবে আপনাকে। নইলে কাদামাখা পথ হেঁটে পাড়ি দিতে হবে যে!
কীভাবে যাবেন?
দেশের যে কোনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে সীতাকুন্ড পৌর সদরে গাড়ি থেকে নামতে হবে। সেখান থেকে গুলিয়াখালী সৈকতে যাওয়ার রাস্তা। সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে সাগরের বেড়িবাঁধে গিয়ে নামতে হবে।
এরপর সামনে এগোলেই চমৎকার বিচটি। অনেকে চট্টগ্রাম শহরে রাত যাপন করে পরদিন সকালে গুলিয়াখালীতে চলে যান। চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ড যেতে লাগে মাত্র এক ঘণ্টা। দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার। সারা দিন থেকে সন্ধ্যায় আবার শহরে ফিরে আসা যায়।
চট্টগ্রাম শহরের অলংকার মোড়, এ কে খান মোড়, কদমতলী স্টেশন থেকে প্রচুর ছোট-বড় লোকাল গাড়ি ছাড়ে সীতাকুণ্ডের উদ্দেশে। তবে সমুদ্রসৈকতে আসা-যাওয়ার জন্য সীতাকুণ্ড বাজার থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে নেওয়াই ভালো।
গুলিয়াখালী সমুদ্রসৈকতের দারুণ প্রশংসা করেছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্প্রতি আমি এ এলাকাটি পরিদর্শন করেছি। গুলিয়াখালী সৈকত প্রকৃতির সঙ্গে সমুদ্রের একটি অসাধারণ মেলবন্ধন।
আমি পরিদর্শন করে এর সৌন্দর্য উপভোগ করেছি। ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য্যের কারণে পর্যটকদের সহজে কাছে টানছে সৈকতটি। এখানে পর্যটনের জন্য কি কি প্রয়োজন তা আমি খতিয়ে দেখেছি। সে অনুযায়ী যে নকশাটি পাঠানো হয়েছিলো তা অনুমোদনও দিয়েছি আমরা।
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘এ সৈকতকে ঘিরে উন্নয়নে কাজ করার অনেক সুযোগ আছে। সৈকতটিকে ঘিরে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে রিসোর্ট তৈরি ও বেড়িবাঁধ থেকে রিসোর্টে যাওয়ার জন্য ভূমি থেকে ১০ ফুট একটি ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। বর্ষাকালে সাগর পাড় পানিতে তলিয়ে থাকে।’
তাই ওয়াকওয়েটি দারুণ কাজে আসবে ও আরও সৌন্দর্য বাড়বে। এটি হবে কাঠের তৈরি দৃষ্টিনন্দন। সৈকতে সার্বিক নিরাপত্তার জন্য টুরিস্ট পুলিশের ইউনিট চালু করার কার্যক্রম চলছে। সবার আগে সৈকত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
সেজন্য সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটি ও বিএনসিসির সমন্বয়ে একটি অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি দোকানগুলো সরিয়ে আনতে হবে। পর্যাপ্ত টয়লেট স্থাপন করতে হবে। এ কাজগুলো দ্রুত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন তিনি।
এমএমডি/জেএমএস/জেআইএম