মেঘালয় ভ্রমণে কোন কোন স্পট ঘুরে দেখবেন?

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১০:৫৬ এএম, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪

সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে স্থল সীমান্ত আছে মেঘালয়ের। চোখজুড়ানো পাহাড়ি দৃশ্যাবলী আর শীতল আবহাওয়ার কারণে এই রাজ্যের রাজধানী শিলং শহরকে ডাকা হয় ‘প্রাচ্যের স্কটল্যান্ড’ নামে। শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় দেড় হাজারমিটার উচ্চতায় অবস্থিত।

বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল স্থান চেরাপুঞ্জি মেঘালয়েই অবস্থিত। মেঘালয়ের ভৌগলিক কাঠামো অনেকটা পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং, সিকিমের গ্যাংটক ও হিমাচল প্রদেশের শিমলার মতো।

আরও পড়ুন: ভিসার ঝামেলা এড়াতে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন এই ৪ দেশে

তবে উল্লেখিত স্থানগুলোর তুলনায় মেঘালয়ে বেড়ানোর খরচ তুলনামূলক কম। মেঘালয়ের ঘন সবুজ বনভূমি, চমৎকার পাহাড়ি দৃশ্যাবলী, আকর্ষণীয় লেকসমূহ, নদী অববাহিকা আর বিচিত্র প্রজাতির পশুপাখি সবকিছুই এক কথায় অসাধারণ।

মেঘালয়ের জনপ্রিয় গন্তব্যসমূহ কোনগুলো?

শিলং পিক ও সোহপেতবিনেং পিক

জায়গা দুটি শিলং শহর থেকে যথাক্রমে ১০-২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শহরের উচ্চতম স্থান শিলং পিক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১ হাজার ৯৬১ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের সঙ্গে ঘন সবুজ বনানী এটিকে এক আদর্শ পর্যটন স্পট বানিয়েছে।

পাখির চোখে গোটা শিলং শহরকে দেখতে পারবেন এখান থেকে। সোহপেতবিনেং পিকের উচ্চতা ১ হাজার ৩৪৩ মিটার। খাসিয়া, জৈন্তিয়া ও ভই সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি তীর্থস্থান।

আরও পড়ুন: দার্জিলিং ভ্রমণে থাকার খরচ কমাতে যা করবেন

ওয়ার্ডস লেক ও উমিয়াম লেক

ওয়ার্ডস লেক একটি কৃত্রিম লেক ও এটির অবস্থান শিলং শহরের মধ্যেই। এটি পলক লেক নামেও পরিচিত। বিচিত্র সব রংয়ের ফুল ও পাইন গাছ হলো ১০০ বছরের পুরনো লেকটির প্রধান আকর্ষণ।

চোখজুড়ানো উমিয়াম লেক শিলং শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে। এটির আরেক নাম বড়পানি লেক। নৌকা বাওয়া, নৌকা চড়া, স্কিয়িং প্রভৃতি সুবিধাদি থাকায় জলক্রীড়াপ্রেমীদের কাছে লেকটি এক চমৎকার জায়গা।

ঝরনাসমূহ

হ্যাপি ভ্যালিতে অবস্থিত সুইট ফলস হলো মেঘালয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঝরনাগুলোর একটি। শিলং শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রেংথিয়াম ফলস একটি ফিতাসদৃশ ঝরনা।

আরও পড়ুন: নতুন বছরে সঙ্গীকে নিয়ে ঘুরে আসুন নীলগিরি

সুনা ভ্যালিতে অবস্থিত বিশপ ও বিডেন ফলস হচ্ছে আরও দুটি নজরকাড়া ঝরনা। এলিফ্যান্ট ফলস ও স্প্রেড ঈগল ফলসও সৌন্দর্যের বিচারে পিছিয়ে নেই। তবে সবগুলো দেখার মতো সময় না থাকলে বেছে নিন এলিফ্যান্ট ফলসকেই।

পার্কসমূহ

সারা মেঘালয় রাজ্য জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পার্ক। তবে সবচেয়ে বেশি পর্যটকের সমাগম ঘটে শিলং শহরে অবস্থিত লেডি হায়দারী পার্কেই। রাজ্যের প্রথম লেডি ও আসামের গভর্নরের স্ত্রী হায়দারীর নামেই নামকরণ করা হয়েছে পার্কটির।

এক কিলোমিটারের বেশি জায়গা জুড়ে বিস্তৃত পার্কটিতে দেখা মিলবে ৭৩ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির সরীসৃপ, ভালুক, লোপার্ডসহ আরও বন্যপ্রাণীর। এর পাশাপাশি বিপুল প্রজাতির ফুল ও বৃক্ষরাজি তো আছেই।

আরও পড়ুন: নানা রঙে বদলায় রহস্যময় লেক

মেঘালয়ের অন্যান্য পার্কগুলোর মধ্যে আছে চেরাপুঞ্জির থাংখারাং পার্ক ও ইকো পার্ক, রি ভই জেলার নেহেরু পার্ক, খারাসাতি পার্ক, থ্রিলস ফান পার্ক ও জৈন্তিয়া হিলস জেলার লালং পার্ক ও লুকসি (কুলপি) পার্ক।

শিলং গলফ কোর্স

ছবির মতো সুন্দর শিলং গলফ কোর্স ভারতের মধ্যে তৃতীয় প্রাচীনতম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গলফ এসোসিয়েশন ও জাদুঘর একে ‘গ্লেনঈগল অব দ্য ইস্ট’ হিসেবে গণ্য করে।

১৮৮৯ সালে নয় হোলের গলফ কোর্স হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও ১৯২৪ সালে ক্যাপ্টেন জ্যাকসন ও সি.কে.রোডস এটিকে ১৮ হোলে রূপান্তর করেন।

আরও পড়ুন: শীতে হিমাচল ভ্রমণে ঘুরে দেখুন জনপ্রিয় ৬ স্পট

পাইন ও রডোডেনড্রন গাছে আচ্ছাদিত এক উঁচু-নিচু উপত্যকায় অবস্থিত গলফ কোর্সটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার ৩০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত।

উপরোক্ত স্থানগুলো ছাড়াও দেখার মতো কয়েকটি জাদুঘর আছে শিলং শহরে। এগুলো হলো ডন বসকো মিউজিয়াম, এয়ার ফোর্স মিউজিয়াম, বাটারফ্লাই মিউজিয়াম ও ক্যাপ্টেন উইলিয়ামসন সাংমা স্টেট মিউজিয়াম।

চেরাপুঞ্জি

চেরাপুঞ্জির অবস্থান শিলং শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে আর্দ্র স্থান হিসেবে পরিচিত। এক বছরে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের হিসেবে চেরাপুঞ্জি ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’এর অন্তর্ভুক্ত।

আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি

চমৎকার সব উপত্যকা ও নদী চেরাপুঞ্জির সৌন্দর্য অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে। সারা বছরই ভ্রমণ করা যায় জায়গাটিতে। শিলং থেকে সকালে কার কিংবা পাবলিক বাসে চেরাপুঞ্জি গিয়ে আবার বিকেলে ফেরা সম্ভব।

আর যদি আকর্ষণীয় সব জায়গা ভালোভাবে ঘুরে দেখতে চান তাহলে একরাত থাকতে পারেন। চেরাপুঞ্জি হলিডে রিসোর্ট, কনিফেরাস রিসোর্ট, পলো অর্কিড রিসোর্ট, সোহরা প্লাজা, হালারি রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড লজিং প্রভৃতি প্রস্তুত আপনাকে উষ্ণ আতিথেয়তা দিতে।

কেভস বা গুহাসমূহ

খাসি হিলস, জৈন্তিয়া হিলস ও গারো হিলসের গুহাগুলো মেঘালয়ে যাওয়া পর্যটকদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ। মৌসুমাই কেভ, ক্রেম মৌমলুহ ও ক্রেম ডেম খাসি হিলসের প্রধান প্রধান গুহা।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে কী কী দেখবেন?

জৈন্তিয়া হিলসের গুহাগুলো হলো ক্রেম কটসাটি ও দ্য কেভ অব ইওসিন এজ যেগুলো অন্ধকার ও ভীতিকর। বক-বাক দোবাকল, সিজু দোবাকল ও তেরেংকল বালওয়াকল হলো গারো হিলসের দীর্ঘতম ও দুর্গম কিছু গুহা।

যা মনে রাখা জরুরি

মেঘালয়ে আপনি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও যেতে পারেন আবার সহায়তা নিতে পারেন নির্ভরযোগ্য কোনো ট্যুর অপারেটরের। দ্বিতীয়টি বেছে নিলে আপনাকে ভিসার আনুষ্ঠানিকতা, যাতায়াত ও থাকা-খাওয়া নিয়ে তেমন চিন্তা করতে হবে না।

আরও পড়ুন: শীতে রাঙ্গামাটি ভ্রমণে কোন কোন স্পটে ঘুরবেন?

যদিও এতে খরচটা একটু বেশি পড়বে তবে আপনার ভ্রমণ হবে অনেক নিরাপদও দক্ষ ট্যুরিস্ট গাইডের সঙ্গও পাবেন। তবে নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় গেলে একটু সতর্ক থাকতে হবে। ভালো ইংরেজি জানলে তা খুব কাজে লাগবে কারণ, মেঘালয়ে এই ভাষার ব্যাপক প্রচলন আছে।

জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সূর্যাস্তের পর বাইরে ঘোরাঘুরি এড়িয়ে চলুন। কারণ রাতের শিলং কিন্তু দিনের মতো নিরাপদ নয়।

তামাবিল সীমান্তে যাওয়ার আগেই খেয়াল করে সোনালী ব্যাংকে ভ্রমণ কর পরিশোধ করুন। মার্চ থেকে অক্টোবর বিশেষ করে মার্চ-এপ্রিল ও সেপ্টেম্বর-অক্টোবর হলো মেঘালয় ভ্রমণের সেরা সময়।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।