মহামায়ায় গিয়ে কায়াকিং করবেন যেভাবে

এম মাঈন উদ্দিন
এম মাঈন উদ্দিন এম মাঈন উদ্দিন , উপজেলা প্রতিনিধি, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩

অডিও শুনুন

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়া লেকে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয় উঠছে কায়াকিং। শুধু কায়াকিং করার জন্য প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন অনেক পর্যটক। মহামায়া ইকোপার্ক শুধু পর্যটন স্পট নয়, কায়াকিং জোন হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।

জানা গেছে, ১১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ লেকটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি বাজার থেকে ১ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

লেকের স্বচ্ছ নীলাভ পানি, চারপাশের সবুজের চাদর আর শুনসান নিরবতায় হারিয়ে যেতে চায় যে কেউই। এমন পরিবেশে পর্যটক টানতে নতুনভাবে যোগ হয়েছে কায়াকিং অ্যাডভেঞ্চার।

চারদিকে সবুজের চাদরে মোড়ানো লেকের স্বচ্ছ অ থৈ পানিতে নিজেই পর্যটকরা চালাতে পারবেন নৌকা। এমন অ্যাডভেঞ্চার নিশ্চয়ই কেউ মিস করতে চান না!

আর এ কারণেই মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টে বাড়ছে পর্যটকদের ভিড়। প্রতিদিন কায়কিং করতে এখানে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। প্রতিদিন সকালের তুলনায় বিকেলে কায়াকিং স্পটে বেশী জমান বিভিন্ন বয়সের পর্যটক।

আরও পড়ুন: কম খরচে দার্জিলিং ভ্রমণে কী করণীয়?

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কাউন্টার থেকে ভাড়া নিয়ে পর্যটকরা লেকে কায়াকিং করছে। কোনো কায়াকিং নৌকায় দু’জন আবার কোনোটিতে তিনজন। আবার কোনো কোনো ছোট কায়াকিং নৌকায় একজন ঘুরছেন।

শিশুরা কয়েকজন মিলে প্যাডেলচালিত কায়াকিং নৌকায় ঘুরতে দেখা গেছে। ১১ বর্গ কিলোমিটার লেকে যার যার মতো করে ঘুরছেন পর্যটকরা। বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, মা-বাবা-সন্তান একসঙ্গে, একই ক্লাসের সহপাঠি, প্রেমিক-প্রেমিকা ঝুটিকে কায়াকিং করতে দেখা গেছে।

লেকে কায়াকিং করা পর্যটকরা জানান, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে আঁকাবাঁকা লেকটি অপরূপ সুন্দর। এখানে যেমন পাওয়া যায় রাশি রাশি সবুজের সমারোহ তেমনি মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি পরিবেশ। একই সঙ্গে লেকের দৃশ্য বেশ চমৎকার।

আরও পড়ুন: দক্ষিণ আফ্রিকা ভ্রমণে কী কী দেখবেন?

চট্টগ্রাম শহরের খুলশী থেকে আসা সাইফুদ্দীন বলেন, ‘আমরা ৬ বন্ধু মিলে শহর থেকে এখানে কায়াকিং করতে এসেছি। দুজন একটি করে ৩টি কায়াকিং নৌকা নিয়েছি। সময় পেলে কায়াকিং করতে মহামায়া লেকে ছুটে আসি। এটি আমার নেশায় পরিণত হয়েছে।’

কলেজ ছাত্র জাবেদ ইকবাল বলেন, ‘মন খারাপ থাকলে এখানে কায়াকিং নৌকা চালাতে চলে আসি। কায়াকিং করার পর মন ভালো হয়ে যায়। আজ আমার বন্ধু তানভীর সহ কায়াকিং করেছি।’

কায়াকিং করতে গিয়ে কথা হয় সাইমন, ইশতেহার, রাতুলের সঙ্গে। তারা জানান, নিজ হাতে নৌকা চালিয়ে পাহাড় আর সুবজের নীলাভ জলের বুক চিরে ইচ্ছেমতো ঘুরতে দারুণ লাগে। অনেক বড় লেক ইচ্ছেমতো ঘোরা যায়।

আরও পড়ুন: বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বিশ্বের সবচেয়ে নিঃসঙ্গ বাড়ি

মহামায়া কায়াকিং পয়েন্টের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদ বলেন, ‘বাংলাদেশে কাপ্তাইয়ের পরে এখানেই আছে কায়েক নৌকা। আমরা ২০২১ সাল থেকে মহামায়াতে কায়াকিং শুরু করেছি। শুরু থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি।’

‘মহামায়ার কায়াকগুলো অন্যস্থান থেকে আরও উন্নত ও নিরাপদ। এগুলো আমদানি করা হয়েছে ব্রাজিল থেকে। প্রতিদিন শতাধিক পর্যটক কায়াকিং করেন। তবে শুক্রবার ও শনিবার ও যে কোনো বন্ধের অনেক অনেক বেশি লোক কায়াকিং করেন।’

আরেক পরিচালক হৃদয় বলেন, ‘মহামায়ায় এখন ৫০টি কায়াক নৌকা আছে। জনপ্রতি এক ঘণ্টায় ১৫০ টাকা ও ৩০ মিনিট ১০০ টাকা নেওয়া হয়। অনেক অনলাইনে আগে বুকিং দিয়ে রাখেন। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাড় দেওয়া হয়।’

আরও পড়ুন: শীতে অলসতা কাটাতে কী করবেন?

চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী তাপসী চাকমা জানান, কায়াকিং পয়েন্টের লোকরাই শিখিয়ে দেয় কীভাবে কায়াকিং করতে হয়। যার কারণে চালাতে তেমন বেগ পেতে হয় না। এতে দারুন অ্যাডভেঞ্চার রয়েছে।

২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে মহামায়া ইকোপার্ক ইজারা নেওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ফাহিম উল হুদা এ বিষয়ে বলেন, ‘দেশের ২য় বৃহত্তম কৃত্রিম এই লেকে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছি।’

‘আমরা পরিবেশবান্ধব কায়াকিং এর ব্যবস্থা করেছি। দেশে কাপ্তাই লেকের পর ২য় মহামায়াতে কায়াকিং ব্যবস্থা করা করা হয়েছে। দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষার্থীরা কায়াকিংয়ে আগ্রহী।’

আরও পড়ুন: বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুহাটি কোথায়?

কীভাবে যাবেন?

ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের যে কেনো স্থান থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে বাসে করে সরাসরি নামতে হবে মিরসরাইয়ের ঠাকুরদিঘী এলাকায়। সেখান থেকে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশা যোগে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৌঁছানো যাবে মহামায়ায়।

কোথায় খাবেন?

মহামায়ায় অনেকে ভাতের হোটেল আছে। ঘরোয়া পরিবেশে রান্না করা এসব খাবার যে কেউ খেতে পারবেন। এছাড়া আছে হান্ডি মহামায়া নামে একটি অভিজাত খাবারের হোটেল আছে।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।