মিরসরাইয়ের ‘রূপসী’ ঝরনা
এম মাঈন উদ্দিন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
ওহ! রূপসী। কি অনিন্দ্যসুন্দর তোমার রূপ। তব্দা হয়ে যাওয়ার মত সৌন্দর্য। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকার মতো জৌলুস। পানির প্রবাহে কি গতিময়তা। পাথর বেয়ে পড়া স্বচ্ছ জলরাশি। তুমিই তো সত্যিকারের রূপসী। সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে গড়েছেন এই ঝরনা, প্রকৃতি, সৌন্দর্য।
প্রথম দেখায় প্রেমে পড়বে যে কেউ। তাই ঝরনার নাম হয়েছে রূপসী! সৌন্দর্যের পসরা বিছিয়ে রেখেছে এই ঝরনা। আপনার মন যতই খারাপ থাকুক না কেন, রূপসী ঝরনায় পা রাখলে মন ভালো হয়ে যাবে নিশ্চিত। রূপসী ঝরনার রূপের জাদু আপনাকে পাগল করবে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা।
আরও পড়ুন: সাফারি পার্কে কীভাবে যাবেন ও কী কী দেখবেন?
আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি। দুই পাশে সুউচ্চ পাহাড়। শাঁ শাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। রূপসী ঝরনায় প্রথম দেখেই তার রূপে পাগল হবে যে কেউ।
মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। রূপসী ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।
বছরের পর বছর ঝরনার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিষ্কার হলো এটি। মিরসরাই উপজেলার সবচেয়ে দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোলে অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর এক জলপ্রপাত এটি। মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনাগুলোর চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ।
আরও পড়ুন: টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে অদেখা যা কিছু দেখতে পারবেন
সৌন্দর্যে কোনো অংশেই খৈয়াছড়া, নাপিত্তাছড়া ঝরনার চেয়ে কম না। এই ঝরনায় যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছড়া, দুপাশের দণ্ডয়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মতো ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে।
এই ঝরনার নাম শুনে প্রতিদিন ছুটে আসছে শতশত ভ্রমণ পাগল মানুষ। বগুড়া শহর থেকে প্রথমবারের মতো রূপসীতে ছুটে আসেন কামরুল, মেহরাব, সৈকত ও নিলয়। তারা আক্ষেপ করে বলেন, এতো সুন্দর ঝরনা আগে কেন এলাম না।
প্রথমবার এসে এতো ভালো লাগছে যা বুঝাতে পারবোনা। তবে এখানে থাকার জন্য আবাসিক কোন ব্যবস্থা না থাকায় কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে তাদের। থাকার ব্যবস্থা থাকলে দূরের পর্যটক আরো বাড়তো বলে জানান তারা।
আরও পড়ুন: পাহাড়ি খাবারের স্বাদ নিন দীঘিনালার ‘জুমঘর’ রেস্তোরাঁয়
সৌদি প্রবাসী মিরসরাইয়ে ভ্রমণপ্রিয় তরুণ মুরাদ ভূঁইয়া বলেন, ‘দেশে থাকাকালিন বিভিন্ন ঝরনায় বেড়াতে যেতাম। প্রায় তিন বছর প্রবাসে থাকার পর কিছুদিন আগে ছুটিতে দেশে এসেছি। ঝরনায় না গিয়ে কি ঘরে বসে থাকায় যায়? তাই গা ভেজাতে চলে আসলাম রূপসীতে। টানা দুদিনের বৃষ্টিতে ঝরনা মিস করা যায় না।’
জানা গেছে, মিরসরাইয়ের বড় দারোগারহাট বাজারের সামান্য উত্তরের ব্রিকফিল্ড সড়ক ধরে পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রেললাইন। রেললাইন পেরুলেই মেঠো পথ, দু’পাশে সবুজ ফসলি মাঠ, সামনে পাহাড়ের বিশালতা। আর সেই মেঠো পথ ধরে একটু হাঁটলেই পাহাড়ের পাদদেশ। বাঁ দিকে ৫০ গজ হাঁটলেই বিশাল ছড়া। যেটি রূপসীর প্রবেশপথ।
রূপসীর প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝরনার মত। অনেকটা খাড়া তবে ঢালু। বর্ষায় পুরো ঝরনা বেয়ে পানি পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে শুধু দক্ষিণ দিকটায়। অনেকে সেখানে যাত্রার ইতি টানে। মনে করে রূপসী শুধু এটাই। অথচ এটি রূপসীর বাইরের রূপ। ভেতরের রূপ আরো বেশি সুন্দর।
আরও পড়ুন: ফেনী ভ্রমণে যেসব স্থান ঘুরে দেখতে ভুলবেন না
রূপসীর প্রথম ধাপের ঝরনা বেয়ে উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা। তারপর একটা বড় পাথর। এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। দশ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই এবার অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বিশাল ছরা, তবে বেশ আঁকাবাঁকা। ঠিক বয়ে চলা কোন নদীর মতো।
ছরা দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে হরেক রকম পাহাড়ি বৃক্ষ, ফুল, ফল, লতা। ছড়ার বুক ছিড়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে যেন কোনো গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করা হচ্ছে। আর ছরার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ পানির বয়ে চলার কল কল ধ্বনি, মুগ্ধ করবে শুধুই।
ভ্রমণ প্রিয় দশর্নাথীরা সঙ্গে হালকা খাবার ও পানি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন। কারণ যাওয়া, আসা ও ঝরনা উপভোগ সব মিলিয়ে অন্তত ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবেই। যারা প্রথম বারের মতো যাবেন তারা স্থানীয় পরিচিত কাউকে গাইড হিসেবে আপনার সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবেন পথ দেখানোর জন্য।
আরও পড়ুন: দেশের ৬৪ জেলা ও বিশ্বের ২৮ দেশ ভ্রমণ চিশতীর
রূপসী ঝরনায় যাবেন কীভাবে?
দেশের বিভিন্ন স্থান হতে যে কোন বাস যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামবেন। এরপর সিএনজি অটোরিকশা যোগে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাবে। এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যাবেন। অথবা যে কোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে অটোরিক্সা ছাড়া আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: কাশফুল দেখতে ঘুরে আসুন বৃন্দাবনে
থাকা ও খাওয়া
কমলদহ বাজারে বাজারে বিখ্যাত ড্রাইভার খাওয়ার হোটেল আছে। আরো ভালো হোটেলে খাওয়ার জন্য সীতাকুন্ড উপজেলা সদরের বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট আছে।
দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা থাকা ও খাওয়ার জন্য যেতে পারেন ঝরনা এলাকা থেকে গাড়ি যোগে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশ মুখে একেখান ও অলংকারে কুটুমবাড়ি রেস্তোরায়। থাকার জন্য একেখানে মায়ানী রিসোর্ট ও অলংকারে রোজ ভিও, ড্রিম লাইট হোটেলে।
এম মাঈন উদ্দিন/জেএমএস/জেআইএম