অপরূপ যাদুকাটা নদী ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, কত খরচ?

মামুনূর রহমান হৃদয়
মামুনূর রহমান হৃদয় মামুনূর রহমান হৃদয় , ফিচার লেখক
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

বয়ে চলা স্বচ্ছ জলরাশি, নীল আকাশ আর সবুজে ঘেরা পাহাড়, সব মিলে এ যেন প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টি সুনামগঞ্জের যাদুকাটা নদী। নিজের ভ্রমণের ঝুলিতে আরেকটি স্মৃতি যোগ করতে চাইলে ঘুরে আসুন সম্ভাবনাময় নদীটি।

যাদুকাটা নদী দেখতে প্রথমে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। রাজধানীর সায়েদাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা ইত্যাদি পরিবহনের এসি ও নন এসি বাস সুনামগঞ্জ যায়।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের কোরাল দ্বীপ ভ্রমণে কীভাবে যাবেন?

নন এসি বাসে জনপ্রতি ভাড়া পড়ে প্রায় ৭০০ টাকা আর এসি বাসে গেলে ১১০০-১২০০ টাকার মতো। আর সুনামগঞ্জ পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা।

আমরাও চেয়েছিলাম স্মৃতি জমিয়ে রাখতে। দিকনির্দেশনা মতো রাতে ঢাকা থেকে বাস যোগে রওনা দিলাম। বন্ধুরা যখন ভোরে সুনামগঞ্জে এসে পৌঁছলাম তখনও অনেকের ঘুম ভাঙেনি। ঘুম চোখে বাস জার্নির ক্লান্তি ভুলে সুনামগঞ্জের রুপ-লাবণ্য দেখে মুগ্ধ হলাম।

পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত সুনামগঞ্জ। সবাই ক্ষুধার্ত থাকায় হাত-মুখ ধুয়ে সকালের খাবার খেলাম। এরপর সুনামগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে ইজি বাইকে ২৫০ টাকা রিজার্ভে যাদুকাটা নদী পৌঁছালাম।

আরও পড়ুন: ৬ বছরেই দেশের ৬৪ জেলা ঘুরেছেন সাফাত-শিখা দম্পতি

এবার গন্তব্য নৌকায় চরে যাদুকাটা নদী ঘুরে বেড়িয়ে অজানায় যাওয়া। এখানকার ঘাটটা বেশ সুন্দর আর মনোরম। বিশাল বট প্রজাতি গাছের শ্যামল ছায়া আর পরিপাটি করে সাজানো ঘাট এই দুইয়ের সেতু বন্ধনে নদীর ঘাটটা যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর মন কেড়ে নেবে।

নৌকা দিয়ে ঘোরার সময় যাদুকাটা নদীতে চোখে পড়লো স্থানীয় শ্রমিকদের ব্যস্ত জীবন। ভোর থেকেই শুরু হয় তাদের কাজ আর সেটা চলতে থাকে সন্ধ্যা অবধি। তাদের পেশা নদী থেকে কয়লা, বালি ও পাথর আহরণ করা।

অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে জনজীবনের এ যেন অপরূপ মেলবন্ধন। যাদুকাটা নদের রূপের কমতি নেই। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকেও এসে ভিড় জমাচ্ছেন অনেক পর্যটক। দিনকে দিন বাড়ছে সেই ভ্রমণপিপাসুদের সংখ্যা।

আরও পড়ুন: একদিনেই কীভাবে ঘুরে আসবেন মহামায়া লেক থেকে?

এছাড়া মেঘালয় পাদদেশে থাকা গারো মানুষদের ভাঙা বাংলা বলা বেশ উপভোগ করে পর্যটকরা। কখনো ইঞ্জিনচালিত নৌকা, কখনো বা ডিঙিতে ভেসে, কখনো বা তীরে পায়ে হেঁটে যাদুকাটার মন্ত্রমুগ্ধতায় বিমোহিত হয় এখানে ঘুরতে আসা মানুষরা।

বর্ষার সময় মেঘালয় পাহাড়ের বুক বেয়ে পাহাড়ি ঝরনার পানি মুগ্ধ করে সবাইকে। এখানে আরও আছে শ্রী শ্রী অদ্বৈতা মহাপ্রভুর আশ্রম ও পূর্ণতীর্থ স্থান ও শাহ আরেফিন আউলিয়ার আস্তানা।

পশ্চিম তীরে দেখা যায়, এখানকার সেরা দর্শনীয় বস্তু সুনামগঞ্জের আইফেল টাওয়ার। প্রায় ১৫০ ফুট উচ্চতার এই টাওয়ারটি বারেক টিলা নামে পরিচিত। আর পাহাড়ি সবুজের সঙ্গে ছন্দ মেলাতে নদীর পাশের বৃহত্তর শিমুল বাগান তো আছেই। এছাড়া এর আশপাশে আছে টাঙ্গুয়ার হাওর ও নীলাদ্রি লেক।

আরও পড়ুন: হাউজবোটে টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে কীভাবে যাবেন, খরচ কত?

আনুমানিক বেলা ৩টার দিকে নৌকা যোগে বারিক টিলায় পৌঁছালাম। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আনুমানিক ৩০০ ফুট উচ্চতায় এই টিলায় উঠে চোখ গেল জাদুকাটা নদীর বহমান পথ। কি এঁকে বেঁকে সেই পথচলা।

পড়ন্ত বিকেলে নাম না জানা কত কত নৌকার চলমান প্রতিযোগিতা চলছে সেই নদীতে। এছাড়া কেউ ব্যস্ত মাছ ধরা নিয়ে, কেউ বা যাত্রী পারাপারে। দেখে বলতে ইচ্ছে করবে কি অপরূপ এই বাংলার সৌন্দর্য। নদীর বুকে এই সৌন্দর্য ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতোই সুন্দর।

সন্ধ্যা নেমেছে। আমাদের ঘোরাঘুরিও শেষ। এখন ফেরার পালা। সন্ধ্যার মিটিমিটি আলোয় আমরা ফিরছি রাজধানীর বুকে। বারবার ভাবছিলাম কেন ভালো মুহূর্তগুলো এতো দ্রুত শেষ হয়ে যায়। তবে এটা ভেবে ভালো লাগছে আরেকটি ভালো দিন কাটালাম।

লেখক: ফিচার লেখক ও গণমাধ্যমকর্মী

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।