বর্ষায় মিরসরাইয়ের ৮ ঝরনায় ঢল নেমেছে পর্যটকদের

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৪ পিএম, ১৩ আগস্ট ২০২৩

অন্য সময়ে তুলনায় বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ঝরনায় অনেক বেশি পানি থাকে। পানিতে ঘা ভেজাতে পর্যটকরা ছুটে আসছেন এসব ঝরনায়। বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে ছুটির দিন শুক্রবার ও শনিবার ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঢল নামে।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পাহাড়ে অবস্থিত ৮ ঝরনা এখন মানুষের পদচারণায় মুখর। তবে ঝরনায় দুর্ঘটনা এড়াতে প্রশাসন পর্যটকদের জন্য যে নির্দেশনা দিয়েছে তা মানছেন না বেশিরভাগ পর্যটক। এতে করে যে কোনো সময় দুর্ঘটনারও ঝুঁকি আছে।

jagonews24

আরও পড়ুন: একদিনেই ১১ জনের নিকলী ভ্রমণ

জানা গেছে, এমনিতে পাহাড়ি ঝরনার জন্য সারাদেশে পরিচিত মিরসরাইয়ের ঝরনাগুলো। প্রতিবছর এসব ঝরনায় কয়েক লাখ পর্যটক ভিড় করেন। সেখানে আছে ছোট-বড় ৮টি ঝরনা। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের ঢল নামছে এসব ঝরনায়।

jagonews24

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ঝরনাগুলো হচ্ছে ৮ট স্তর বিশিষ্ট বড়তাকিয়া এলাকায় খৈয়াছরা ঝরনা, নয়দুয়ারিয়া এলাকায় নাপিত্তাছড়া ঝরনা, দুর্গাপুর ঠাকুরদিঘী এলাকায় মহামায়া ঝরনা, ওয়াহেদপুর এলাকায় বাওয়াছড়া হরিনাকুন্ড ঝরনা, আমবাড়িয়া এলাকায় বোয়ালিয়া ঝরনা, হাদিফকিরহাট এলাকায় সোনাইছড়ি ঝরনা, বড়কমলদহ এলাকায় রূপসী ঝরনা।

jagonews24

শুক্রবার (১১ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন ঝরনার সড়কের মুখে ও আশপাশে বাস, মাইক্রো, নোহা সহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।

আরও পড়ুন: ২১ বছরেই ১৯৬ দেশ ভ্রমণ তরুণীর, জানালেন অভিজ্ঞতা

দেখে মনে হতে পারে গাড়ি নিয়ে সবাই কোনো সমাবেশে এসেছেন। মূলত সবাই ছুটির দিনে সবাই ছুটে গেছেন ঝরনার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতে। এছাড়া বিভিন্ন বাস যোগে লোকাল যাত্রী হয়ে এসেছেন অনেক পর্যটক।

jagonews24

মিরসরাইয়ে কয়েকটি ঝরনার মধ্যে অন্যতম হলো খৈয়াছড়া ঝরনা। যার আছে ৮টি স্তর। এরই মধ্যে এই ঝরনা দেশ-বিদেশে আলোচিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা প্রতিদিন ভিড় করছে এই নয়নাভিরাম ঝরনায়।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়তাকিয়া এলাকার খৈয়াছরা ইউনিয়নে অবস্থিত এই ঝরনা। বড়তাকিয়া এলাকা থেকে রেললাইন পূর্ব পাশ পর্যন্ত যাতায়াত ব্যবস্থা থাকলেও বাকিটা মেঠোপথে যেতে হয়। দু’পাশে সবুজ ফসল পেরিয়ে সামনে গেলে পাখির কলকাকলী আর পাহাড়ি প্রজাতির বানরের আনাগোনা দেখে যে কেউ মুগ্ধ হবে।

jagonews24

আরও পড়ুন: ছুটির দিনে ঘুরে আসুন ৪০০ বছরের পুরোনো নগরীতে

প্রায় দু’কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখা মিলবে কাঙ্খিত সেই ঝরনার। দূর থেকে শোনা যায় জলপতনের ঝুম ঝুম শব্দ। যা ভ্রমণপিপাসুদের মনকে করে তুলে সতেজ। আর সেই পথ পাড়ি দিয়ে মুহূর্তে ভুলে যান দু কিলোমিটার ক্লান্তির কথা। মুহুর্তে মেতে উঠেন হই হুল্লোড় আর আনন্দে।

যাতায়াতে অনেকটা সহজ পথ বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা। রূপসী ট্রেইলে প্রথম ঝরনা দর্শনে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। ঝরনাপথের বেশ ভেতরে গেলে দুটি পথ, দুটো পথেই গহীনে অসাধারণ ঝরনার দেখা মিলবে। সেগুলো প্রথমটা থেকেও সুন্দর।

jagonews24

অন্যটি হচ্ছে নাপিত্তাছড়া ট্রেইল। এ ট্রেইলে বড় ঝরনা ৩টি। টিপরাখুম, নাপিত্তাছড়া ও বান্দরখূম ঝরনা। ঝরনার পথ খুব বেশি সুন্দর। কিছু কিছু জায়গায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়েকর মত। পথগুলো বেশ সুন্দর সহজ।

আরও পড়ুন: গ্রামের কোনো ঘরে নেই দরজা, শাস্তির ভয়ে হয় না চুরিও

তবে পর্যটকদের অসাবধানতায় বিভিন্ন সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। গত ৫ বছরে ঝরনাগুলোতে অন্তত ১৮ জন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছে। আর এসব হতাহতের কারণগুলো চিহ্নিত করেছে অসাবধানতাকে।

jagonews24

স্থানীয়দের মতে, ঝরনায় গোসল করতে গিয়ে কিংবা পাহাড়ের চূড়া থেকে পড়ে ও ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় ওঠা কিংবা ছবি তুলতে এসব অঘটন সৃষ্টি হয়। ফলে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।

কথা হয় নাপিত্তাছড়া ঝরনায় আসা পর্যটক সাব্বিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পাহাড়, ঝরনা, লেক এ তিন স্থান ভ্রমণে আমি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। মিরসরাইকে তো বলা যায় ঝরনার খনি। এখানকার প্রায় সব ঝরনা ভ্রমণ করা হয়েছে। একটির চেয়ে অন্যটি বেশি সুন্দর।’

jagonews24

আরও পড়ুন: যে শহরের বাসিন্দা মাত্র ২৭ জন

‘সবচেয়ে বড় কথা একেক ঝরনায় একেক রকম সৌন্দর্য। ঝরনাাগুলো যে কোনো ভ্রমণপিপাসুর নজর কাটবে। একই সঙ্গে বাস ভ্রমন, পাহাড়িপথে হাঁটা, লেকে নৌকা ভ্রমণ, ঝরনা ভেজা, পাহাড়ি অপরূপ দৃশ্য অবলোকন সব হয়ে যাবে। অনেক বেশি উপভোগ করার মতো হলো ঝরনাগুলো। ঘুরে আসতে পারেন বন্ধু অথবা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে।’

পুরোনো ঢাকা থেকে বন্ধুদের নিয়ে খৈয়াছড়া ঝরনায় ঘুরতে আসা শাহিন, মুকিদুল, রাসেল, কেফায়েত বলেন, ‘খৈয়াছরা ঝরনার কথা অনেক শুনেছি। আমরা ১০ বন্ধু একসঙ্গে ঝরনায় গিয়েছি, গোসল করেছি, কি যে আনন্দ হয়েছে বুঝাতে পারবো না। এখানে আরও বেশ কয়েকটি ঝরনা আছে নাকি। ছুটি পেলে মাঝে-মধ্যে সবগুলো দেখতে যাবো ‘

jagonews24

ঝরনার ইজারা পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজ তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, ‘ভারি বর্ষণের সময় ঝরনাগুলো বন্ধ ছিল। গত কয়েকদিন ধরে পুনরায় চালু করেছি।’

‘তবে পর্যটকেরা কোনো নির্দেশনা মানছেননা। গাইড সঙ্গে নেওয়া তো দূরের কথা। দায়িত্বে থাকা লোকজনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেন। আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তখন সবাই ইজারাদারদের দোষ দেয়।’

এম মাঈন উদ্দিন/জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।