মানবতা-শান্তি-বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে বাংলাদেশে ৪ ভারতীয় ভ্রামণিক

জান্নাতুল মাওয়া সুইটি
জান্নাতুল মাওয়া সুইটি জান্নাতুল মাওয়া সুইটি , সাংবাদিক
প্রকাশিত: ০৫:৩৭ পিএম, ০৫ জুলাই ২০২৩

ভ্রমণপিপাসু একদল ভারতীয় নাগরিক মানবতা-শান্তি ও বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতে বেরিয়েছেন বিশ্বভ্রমণে। তারা গাড়িতে করেই এক দেশ থেকে অন্যদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তারই জের ধরে ভুটান ও নেপাল ঘুরে এবার তারা এলেন বাংলাদেশে। বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির খোঁজেই তারা পা রেখেছেন এদেশে। বেশ কয়েকদিন তারা এদেশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: একাই ১০০ দেশ ঘুরলেন ভ্রমণকন্যা মালিহা, ঘুরতে চান পুরো বিশ্ব

এই ৪ ভ্রামাণিকের নাম যথাক্রমে- জয়কুমার দিনমণি, লক্ষ্মীধুতা, ডা. অজিথা সিএস, শিব সাপকোটা মিলারেপা গুহার বাইরে ও হেলামবু। তাদের মধ্যে জাগোনিউজ২৪ এর সঙ্গে কথা বলেছেন লক্ষ্মীধুতা।

বাংলাদেশ ভ্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ খুবই অতিথিপরায়ণ দেশ। আমরা জেনেছি বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতি অনেকটা একই ধরনের। আর এ কারণে আমরা বাংলাদেশে ঘুরতে এসেছি। এখানে বেশ কয়েকদিন থাকবো ও দেশটির ঐতিহাসিক সব স্থান ঘুরে দেখবো বলে পরিকল্পনা করেছি। বর্তমানে আমরা আছি ঢাকাতে।’

‘বাসুদেব কুটুম্বকম’ বা ‘পুরো বিশ্ব এক পরিবার’ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে, তারা বিশ্বভ্রমণে বেড়িয়েছেন। লক্ষ্মী জানান, তাদের এই বিশ্বভ্রমণ কার্যক্রম শুরু হয় চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল থেকে ভুটান ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। বিভিন্ন দেশ ঘুরে ঘুরে তারা একটি বইও লিখছেন।

আরও পড়ুন: ৫১ দিনে ২৮ রাজ্য ঘুরলেন মা-ছেলে

ভারতীয় এই ৪ ভ্রামাণিকের মধ্যে অন্যতম একজন হলো জয়কুমার দিনমনি। সম্পর্কে তিনি লক্ষ্মীর আঙ্কেল ও গুরুও বটে। অবাক করা বিষয় হলো, শারীরিকভাবে বেশ অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও জয়কুমার এরই মধ্যে হাজার হাজার কিলোমিটারের গাড়ি চালিয়েছেন এই বিশ্বভ্রমণে।

জয়কুমারের বিষয়ে লক্ষ্মী বলেন, ‘আঙ্কেলের এক হাত প্রায় অকেজো। এমনকি তার হার্টেও সমস্যা আছে। তবুও তিনি আমাদের আশার আলো এই বিশ্বভ্রমণে। ২০১৯ সালে কোচিনের একটি হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন অলৌকিকভাবে।’

‘ডাক্তাররা তাকে মৃত ভেবে নিয়েছিলেন। তবে কয়েক মিনিট পরে তিনি জীবন ফিরে পান। বর্তমানে তিনি হার্টের সিআরটি-ডি ইমপ্লান্টের মাধ্যমে বেঁচে আছেন। এই ভ্রমণে তিনিই আমাদের পথের দিশারি ও অনুপ্রেরণার উৎস।’ লক্ষ্মীদের এই দলে আরও আছেন তার মা ডা. অজিথা সিএস।

আরও পড়ুন: অন্ধ হচ্ছে ৩ সন্তান, ইচ্ছেপূরণে বিশ্বভ্রমণে পরিবার

এরই মধ্যে লক্ষ্মী ও তাদের দল গাড়িতে চড়েই ভুটান-নেপাল ভ্রমণ করেছেন। আর এবার এসেছেন বাংলাদেশে। মূলত কারনেট পাসের মাধ্যমেই তারা এক দেশ থেকে অন্য দেশে গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

তাদের পরবর্তী পরিকল্পনা সম্পর্কে লক্ষ্মী বলেন, ‘বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষে আমরা আবার কলকাতা ফিরে যাব। তারপর সেখান থেকে পূর্ব এশিয়ার বর্ডার ধরে মালয়েশিয়া পৌঁছাবো বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তবে কারনেট পাসের মাধ্যমে বাংলাদেশে ঢুকতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছে লক্ষ্মীদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রায় দু’দিন ধরে আমাদের ঝক্কি পোহাতে হয়েছে ইন্ডিয়া-বাংলাদেশের চাংড়াবান্ধা বর্ডারে। কারনেট পাসের মাধ্যমে মোট ৭০টি দেশ ভ্রমণ করা যায়। আর আমরা এর মাধ্যমেই ইন্ডিয়া থেকে ভুটান এরপর নেপাল ভ্রমণ করেছি।’

আরও পড়ুন: বাড়ি-গাড়ি বেচে, চাকরি ছেড়ে বিশ্বভ্রমণে বের হলেন দম্পতি

‘তবে বাংলাদেশে ঢুকতে গিয়েই বিপাকে পড়লাম। প্রথমদিন যখন আমরা চাংড়াবান্ধা বর্ডারে পৌঁছাই তখন ঘড়িতে সময় সন্ধ্যা ৬টা। ওই সময় বর্ডারের গেট বন্ধ করে দেওয়াই বাংলাদেশে ঢোকার অনুমতি পাইনি।’

‘পরের দিন আবার যখন আসি, তখন সবকিছু চেক করার পর কাস্টমস অফিসার জানান কারনেট পাস নিয়ে গাড়িসহ বাংলাদেশে ঢোকা যাবে না।’

লক্ষ্মী আশাহত হয়ে বলেন, ‘কাস্টমস অফিসারকে আমাদের বিষয় ও কারনেট পাস সম্পর্কে সব তথ্য দেওয়ার পর তিনি সিনিয়র অফিসারের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর ওই সিনিয়র অফিসার আমাদের সব ডকুমেন্টস দেখে বাংলাদেশে ঢুকতে দেন, তবে গাড়ি ও লাগেজ নেওয়া বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেন।’

আরও পড়ুন: সাইকেলে ৫ দিনে দেশ ভ্রমণ করলেন চার বন্ধু

‘অনেক অনুরোধের পর আমরা লাগেজগুলো সঙ্গে নিয়ে আসতে পারলেও গাড়ি আনতে পারিনি। কোনোমতে বাংলাদেশে এসে এখন আমরা এখন একটি হোটেলে অবস্থান করছি। তবে আশা করছি সব কাজ স্বাভাবিক নিয়মেই সম্পন্ন হবে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকদিন থাকবো ও এদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা নিবো।’

বাংলাদেশ ঘুরে মালয়েশিয়া ভ্রমণের পর আর কোন কোন দেশে যাবেন এই ৫ ভ্রামাণিক? এ বিষয়ে লক্ষ্মী জানান, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ও ব্রুনাইয়ে ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে আমাদের।

আরও পড়ুন: ভ্রমণ বিশ্বের যে স্থানে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকেই

তাদের এই বিশ্বভ্রমণে উদ্দেশ্য কী? এ বিষয়ে লক্ষ্মী বলেন, ‘মানবতা-শান্তি-বন্ধুত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিতেই এই ভ্রমণ বেরিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি পুরো বিশ্ব এক পরিবার। ধর্ম-জাতি-গোষ্ঠি ব্যতিরেকে মানবধর্মকে আকড়ে যেন সবাই জীবন গড়তে পারে।’

‘এজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের ভাবমূর্তি ও মানুষের জীবনযাত্রা-সংস্কৃতি সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা জরুরি। আর আমরা জ্ঞান অর্জনেই হাজার হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করছি। তরুণদেরকে বিশ্বভ্রমণে অনুপ্রাণিত করা ও মানবধর্মে বিশ্বাস করার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়াই আমাদের মূল লক্ষ্য।’

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।