বর্ষায় সিলেট ভ্রমণে ঘুরে আসুন ৩ স্পট

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৩:১৯ পিএম, ২০ জুন ২০২৩

চায়ের রাজধানীখ্যাত পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গল। প্রকৃতির নিজ হাতে গড়া দৃষ্টিনন্দন শহর এটি। বর্ষায় সিলেটের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়, বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায়। যা দেখে সবার মন ভরে যায়। প্রকৃতির এমন রূপ দেখতে তাই তো বর্ষায় সিলেট দর্শনে বেরিয়ে পড়েন পর্যটকরা।

সিলেটের বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান আছে, যেখানকার সৌন্দর্য শুধু বর্ষায় গেলেই দেখা যায়। তাই বর্ষার মৌসুমে সিলেট ভ্রমণে গেলে অবশ্যই সেসব স্থানে যেতে ভুলবেন না। জেনে নিন বর্ষায় সিলেট ভ্রমণে যা যা দেখবেন-

আরও পড়ুন: সিলেট গিয়ে দেখে আসুন এশিয়ার সবচেয়ে স্বচ্ছ নদী

jagonews24

রাতারগুল

বর্ষায় সিলেট ভ্রমণের কথা ভাবলেই প্রথমেই সবার মনে পড়ে রাতারগুলের নাম। বাংলার আমাজন’খ্যাত সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুলের সৌন্দর্য দ্বিগুণ হয়ে যায় বর্ষায়। জানা যায়, পুরো পৃথিবীতে স্বাদুপানির জলাবন আছে মাত্র ২২টি। তার মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আছে এর দুটি, একটি শ্রীলংকায়, বাংলাদেশের রাতারগুলে একটি।

পর্যটকদের মতে, অনিন্দ্যসুন্দর বিশাল এ বনের সঙ্গে তুলনা চলে একমাত্র আমাজনের। আর এ কারণেই বাংলার আমাজন হিসেবে বিশেষ পরিচিত এই রাতারগুল। সিলেটের স্থানীয় ভাষায় মুর্তা বা পাটিগাছ ‘রাতাগাছ’ নামে পরিচিত। সেই মুর্তা অথবা রাতাগাছের নামানুসারে এই বনের নাম হয়েছে রাতারগুল।

আমাজনের মতোই গাছগাছালির বেশিরভাগ অংশই বছরে ৪-৭ মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমেই শুধু সেখানে পানির দেখা মেলে। শীতকালে অবশ্য সেটা হয়ে যায় আর দশটা বনের মতোই, পাতা ঝরা শুষ্ক ডাঙা।

jagonews24

আরও পড়ুন: চা বাগানসহ শ্রীমঙ্গল ভ্রমণে আরও যা দেখবেন

আর এ কারণেই বর্ষাই হলো রাতারগুল ভ্রমণের সেরা সময়। এ সশয় সেখানে গেলে দেখবেন কোনো গাছের কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে পানিতে। একটু ছোট যেগুলো, সেগুলো আবার শরীরের অর্ধেকই ডুবিয়ে আছে জলে।

কোথাও চোখে পড়বে মাছ ধরার জাল পেতেছে জেলেরা। ঘন হয়ে জন্মানো গাছপালার কারণে কেমন যেন অন্ধকার লাগবে পুরো বনটা। মাঝেমধ্যেই গাছের ডালপালা আটকে দেবে পথ।

বর্ষায় এ বনে চলতে হয় খুব সাবধানে। কারণ রাতারগুল হচ্ছে সাপের আখড়া। বর্ষায় পানি বাড়ায় সাপেরা ঠাঁই নেয় গাছের ওপর। তাই সৌভাগ্য হলে বেশ কিছু সাপের সঙ্গে দেখাও হয়ে যেতে পারে।

jagonews24

সেখানে মূলত প্রাকৃতিক বন হলেও বেত, কদম, হিজল, মুর্তাসহ নানা জাতের পানি সহিষ্ণু গাছ লাগিয়েছে বন বিভাগ। রাতারগুল বনে সাপের মধ্যে গুইসাপ, জলঢোড়া ছাড়াও আছে গোখরাসহ বিষাক্ত অনেক প্রজাতি। বর্ষায় বনের ভেতর পানি ঢুকলে এসব সাপ উঠে পড়ে গাছের ওপর।

আরও পড়ুন: বর্ষায় প্রিয়জনকে নিয়ে ঘুরে আসুন ‘বাংলার আমাজনে’

বর্ষায় হাওরের স্বচ্ছ পানির নিচে ডুবে থাকা গাছগুলোর সৌন্দর্য দেখে আপনি মুগ্ধ হবেনই। মনে হবে যেন কোনো কল্পনার জগতে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

jagonews24

কীভাবে যাবেন রাতারগুল?

রাতারগুল যাওয়া যায় বেশ কয়েকটি পথে। তবে যেভাবেই যান, যেতে হবে সিলেট থেকেই। দেশের যে কোনো স্থান থেকে প্রথমে যান সিলেট। সেখান থেকে আম্বরখানা পয়েন্টে পৌঁছে সিএনজি নিয়ে গোয়াইনঘাট পৌঁছাতে হবে। ভাড়া পড়বে ৫০০-৮০০ টাকার মধ্যেই।

ওসমানী এয়ারপোর্ট থেকে শালুটিকর হয়ে যাওয়া এই রাস্তাটা বর্ষাকালে খুবই সুন্দর। এরপর একইভাবে গোয়াইনঘাট থেকে রাতারগুল বিট অফিসে আসবার জন্য ট্রলার ভাড়া করতে হবে, ভাড়া পড়বে ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে (আসা-যাওয়া)।

আর সময় লাগে ২ ঘণ্টা। বিট অফিসে নেমে ডিঙি নৌকা নিয়ে বনে ঢুকতে হবে, এতে মাঝি ঘণ্টাপ্রতি নেবে ২০০-৩০০ টাকা। আরও এক উপায়ে আপনি পৌঁছাতে পারেন রাতারগুল। এজন্য সিলেটের আম্বরখানা পয়েন্ট থেকে সিএনজি নিয়ে মোটরঘাট (সাহেব বাজার হয়ে) পৌঁছাতে হবে। ভাড়া পড়বে ২০০-৩০০ টাকা। আর সময় লাগবে ঘণ্টাখানেক।

jagonews24

এরপর মোটরঘাট থেকে সরাসরি ডিঙি নৌকা নিয়ে বনে চলে যাওয়া যায়। এতে ঘণ্টাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা লাগবে। এই পথটিই বেশ জনপ্রিয়। কারণ এতে সময় ও খরচ সবচেয়ে কম।

আরও পড়ুন: বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যা দেখবেন, যেভাবে যাবেন

সাদা পাথর

সিলেটের সাদা পাথরের সৌন্দর্যও বর্ষায় বেড়ে যায়। মনে হয় যেন, প্রকৃতি শুভ্র বিছানা বিছিয়ে রেখেছে। মাঝখানে স্বচ্ছ নীল পানি। চারদিকে ঘিরে আছে ছোট-বড় কয়েকটি পাহাড়। তার উপরে যেন আছড়ে পড়েছে মেঘ। এছাড়া চারপাশে আছে সবুজ প্রকৃতি। সব মিলিয়ে প্রকৃতির যেন অপরূপ এক স্বর্গরাজ্য।

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। সিলেট শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ অবস্থিত। আর সেখানেই আছে সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন নতুন পর্যটন স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে সাদা পাথর নামক স্থানটি।

jagonews24

ভোলাগঞ্জ কোয়ারির জিরো পয়েন্টের ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা বনাঞ্চল। সেদিকে তাকালেই চোখ জুড়িয়ে যাবে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। আর নিচে তাকালেই দেখবেন সাদা পাথর ছড়িয়ে আছে। আর মাঝে স্বচ্ছ পানি। সেখান থেকে নেমে আসছে ঝরনার অশান্ত শীতল পানি। ঝরনার পানি গড়িয়ে চলে যাচ্ছে ধলাই নদীর বুকে।

জুন থেকে সেপ্টেম্বর এই সময় যাওয়ার জন্যে সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। অন্যসময় গেলে সেখানে পাথরের সৌন্দর্য দেখতে পেলেও নদীতে বা ছড়ায় পানির পরিমাণ কম থাকবে। শীতকালে সাদা পাথর এলাকায় নৌকা চলাচল করার মতো পানি থাকে না। তখন পায়ে হেঁটে ঘুরে দেখতে হবে।

আরও পড়ুন: বিছনাকান্দির সৌন্দর্য দেখতে যখন যাবেন

আর বর্ষায় নদীর বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পাথরের বিছানা ভরাট নদীর শোভা বাড়িয়ে দেয় হাজারগুণ। সাদা পাথরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা ঝরনার পানির তীব্র স্রোতে নয়ন জুড়ায়। অনেকেই সাদা পাথর পর্যটন স্পটকে ছবিতে বিছনাকান্দি ভেবে ভুল করেন!

ভারত থেকে নেমে আসা সীমান্ত নদী ধলাই নদীর জিরো পয়েন্ট এলাকা স্থানীয়ভাবে সাদা পাথর এলাকা হিসেবে পরিচিত। এই স্পটটি এখন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এলাকাটি দেখতে প্রতিদিনই পর্যটকরা সেখানে ভিড় করেন।

jagonews24

কীভাবে যাবেন?

সিলেট নগরীর আম্বরখানা থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলে সিলেট কোম্পানীগঞ্জ রুটে। ১২০ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় কোম্পানীগঞ্জের টুকের বাজারে নামাবে। টুকের বাজার থেকেই ট্রলারে চলে যেতে পারেন সাদা পাথর।

কোম্পানীগঞ্জ পৌঁছে টুকের বাজার ঘাট থেকে ট্রলারে সাদা পাথর পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগবে। যাওয়া-আসায় নৌকা ভাড়া পড়বে ১০০০-১২০০ টাকা। এখানে নৌকা রিজার্ভ করে নিতে হয়, অন্যথায় ভুগতে হবে।

আরও পড়ুন: কম খরচে মেঘালয় ভ্রমণে কোথায় থাকবেন ও কী কী দেখবেন?

তাই দলবেঁধে গেলে খরচটা একটু কম হবে। সিলেট থেকে ভোলাগঞ্জ সরাসরিও চলে যাওয়া যায়। ১০ মাইল নামক স্থান থেকে নৌকা নিলে ৫০০-৬০০ টাকা ভাড়া পড়বে, তবে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে অটোরিকশায়।

লালা খাল

লালাখাল নাম শুনে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, এটি একটি খাল! আসলে লালাখাল একটি নদী। এ নদীর উৎপত্তি ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড়। লোকমুখে শোনা যায়, এ নদী দিয়েই না-কি পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশে এসেছিলেন ।

লালাখালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য যাত্রার শুরুতেই পাড়ি দিতে হবে ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এঁকেবেঁকে চলা এক নদী। লালাখাল সিলেট শহরের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত।

jagonews24

সিলেট থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই লালাখাল নদী ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদী, পাহাড়ি বন, চা-বাগান ও নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখালের ভূ-প্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য।

ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে লালাখাল। ভরা বর্ষায় লালাখালের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে লালাখালের পানি হারিয়ে ফেলে স্বচ্ছতা। তখন পানি বেশ ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে।

আরও পড়ুন: বর্ষায় ঘুরে আসুন দেশের বিখ্যাত ৩ হাওরে

কীভাবে যাবেন?

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেটে। এরপর সিলেট থেকে লালাখালে যেতে হবে। এজন্য নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানের বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রবাস অথবা জাফলংগামী বাসে চড়ে সারিঘাট আসতে পারেন।

সারিঘাট থেকে লালাখালে যাওয়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাবেন। যদি নদীপথে লালাখালে যেতে চান তবে এখানে ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন ট্রলার ও নৌকা ভাড়ায় পাবেন।

লালাখাল থেকে সিলেট ফিরতে রাত ৮টা পর্যন্ত বাস ও লেগুনা পাবেন। লালাখালে গিয়ে দেখা পাবেন রং-বেরঙের ছোট-বড় নৌকা। ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে ভারত বর্ডারের কাছাকাছি পর্যন্ত নৌকায় ঘুরে আসতে পারবেন লালাখাল।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।