পানাউল্লার চর বধ্যভূমিতে গিয়ে যা দেখবেন
১৯৭১ সাল মুক্তিযুদ্ধ শুরু আর বিজয় অর্জনের বছর। যুদ্ধ চলাকালীন ৯টি মাস পাক বাহিনী সারাদেশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। বহু মানুষ হত্যা করে। বেশ কয়েকটি জায়গায় চলে গণহত্যা, তারমধ্যে ভৈরব একটি।
সেখানকার পানাউল্লার চর বধ্যভূমিটির অবস্থান পৌর শহর থেকে একটু দূরে শিবপুর ইউনিয়নে। কিছুদিন আগে বাসস্ট্যান্ড থেকে রিকশা করে চলে গেলাম সেখানে। লাল দেয়ালে ঘেরা বধ্যভূমিতে বসে ফিরে গিয়েছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোতে।
আরও পড়ুন: মাউন্ট এভারেস্টে আরোহণের খরচ কত? রইলো অবাক করা সব তথ্য
দিনটি ছিল ১৪ এপ্রিল বাংলা নববর্ষ। ভৈরবে প্রবেশ করে পাক বাহিনী। ভৈরবের আকাশে দেখা গেল ৪টি জেট বিমান, একাধিক হেলিকপ্টার ও গানশিপ। শুরু হয় নির্বিচারে হত্যা, গুলি বর্ষণ আর অগ্নিসংযোগ। প্রাণ বাঁচাতে হাজারখানেক মানুষ জড়ো হয় ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের পানাউল্লাহর চর খেয়াঘাটে।
উদ্দেশ্য নৌকাযোগে ব্রহ্মপুত্র পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামে আশ্রয় নেওয়া। খেয়া পাড়ে হাজারো মানুষের ঢল, তবে খেয়া মাত্র একটি। কেউ সাঁতরে, ছোট শিশুটিকে কোলে নিয়ে যে যার মতো নদী পাড় হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে খেয়া পার হওয়ার আগেই পাক বাহিনীর গুলিতে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শহীদ হন সাড়ে ৩০০ মানুষ। রক্তে ব্রহ্মপুত্রের স্বচ্ছ পানি লাল হয়ে গিয়েছিল। সবকিছু থেমে যাওয়ার পরেও পাকসেনাদের ভয়ে আপন জনের লাশ অনেকে নিতে আসেনি। তাদের সবাইকে দেওয়া হয় গণকবর।
আরও পড়ুন: ভারত গিয়ে ঘুরে আসুন ছোট্ট ‘বাংলাদেশে’
সেই থেকে জায়গাটির নাম পানাউল্লার চর বধ্যভূমি। দেশ স্বাধীন হওয়ার ৩৫ বছর পর বধ্যভূমিতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছে। স্মৃতিস্তম্ভের লাল দেয়ালটি যেন শহিদদের রক্তের প্রতিফলন করছিল। এর পাশেই আছে কাশবন। কাশবনের নিচে সমাধি আছে অন্তত কয়েকশত মানুষের।
কালের বিবর্তনে ব্রহ্মপুত্র নদ হারিয়েছে তার যৌবন। খেয়া পারাপার চলমান আছে। সেখানে দাঁড়িয়ে কল্পনা করছিলাম, প্রাণে বাঁচার আকুতি নিয়ে ঠিক এই জায়গাটিতেই দাঁড়িয়ে ছিল মানুষগুলো। ব্রহ্মপুত্রের স্বচ্ছ জল সেদিন রাঙিয়েছিল।
হঠাৎ আকাশে উড়ে যায় একটি হেলিকপ্টার, কাকাতালীয়ভাবে মিলে গেলো সেদিনের ঘটনার সঙ্গে। বর্তমান তরুণ প্রজন্মের অনেকেই হয়তো ভৈরবের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানে না।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকেই
বধ্যভূমির পাশে আছে একটি কফি হাউজ। ছুটির অনেকেই ঘুরতে আসেন সেখানে। দুঃখের বিষয় হলো, তাদের অনেকেই বধ্যভূমিটি চেনেন না ও এই সম্পর্কে জানেনও না। ১৯৭১ সালের ইতিহাস আমাদের জন্য একদিকে যেমন দুঃখের অন্যদিকে গৌরবের। তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করার দায়িত্বটাও আমাদেরই।
১৪ এপ্রিলকে ঘোষণা করা হয় ভৈরব গণহত্যা দিবস। এদিন ভৈরবের উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শহিদদের শ্রদ্ধা জানতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
দুপুরের দিকে আকাশ কালো করে ঝুম করে নামে বৃষ্টি। বিদায় নেয় গরমের দাবদাহ। জেগে উঠে প্রকৃতি। ক্যাফেতে বসে কফি পান করলাম। বৃষ্টি থেমে গেলে রওনা দিলাম আপন গন্তব্যে।
ছবি: তোফাজ্জল হোসেন
জেএমএস/জেআইএম