বিশ্বের অত্যাশ্চার্য যত জাদুঘর
পৃথিবীতে মানুষের আগমনের আগ থেকে এখন পর্যন্ত সব ইতিহাসের সংগ্রহশালাকে জাদুঘর বলা হয়। একটি দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের নিদর্শন তুলে ধরে জাদুঘর।
যে কোনো জাতির শেকড়ের সন্ধান পাওয়া যায় জাদুঘর থেকেই। পাশাপাশি একটি জাতির প্রাচীন ঐতিহ্যকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তাই প্রত্যেক জাতির কাছে জাদুঘরের আছে আলাদা মর্যাদা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা গেছেন অনেকেই
বিশ্বে এমন সব বিখ্যাত জাদুঘর আছে, যা সভ্যতার ইতিহাস জানানোর পাশাপাশি এদের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সেরা ৫ জাদুঘর সম্পর্কে-
ব্রিটিশ মিউজিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন জাদুঘরগুলোর একটি ব্রিটিশ মিউজিয়াম। ১৭৫৩ সালে এটি প্রতিষ্ঠা পায় এটি। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা চিত্রকর্মের সংগ্রহ আছে এই জাদুঘরে। হাজার বছরের ইতিহাসের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। সংগ্রহের তালিকায় পৃথিবীর পুরো ইতিহাসটাই যেন লুকিয়ে আছে এ জাদুঘরে।
পদার্থবিজ্ঞানী স্যার হ্যান্স স্লোয়েনের সংগৃহীত জিনিসপত্রের ওপর ভিত্তি করেই জাদুঘরটি শুরুতে গড়ে ওঠে। বর্তমানে পুরো জাদুঘরের সংগ্রহশালা ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র ৪০ লাখ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। মিশরীয় সভ্যতার বিশাল অংশ আছে এখানে।
আরও পড়ুন: ঢাকার প্রাচীন যত দর্শনীয় স্থান
দ্য লুভর
বিশ্বের বৃহৎ শিল্পকর্ম নির্ভর জাদুঘরের মধ্যে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত দ্য লুভর অন্যতম। ২০১৭ সালে সেখানে গিয়েছিলেন ৮৬ লাখ দর্শনার্থী। এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। একসময় এটি ছিল ফরাসি রাজাদের প্রাচীন দুর্গ। ১১৯০ খ্রিস্টাব্দে রাজা ফিলিপ অগাস্টাস এই ভবন গড়ে তোলেন।
জাদুঘর হিসেবে এটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় ১৭৯৩ সালের ৮ নভেম্বর। লুভরে ১ লাখ ৯৫ হাজার বর্গমিটার জায়গা আছে। এর মধ্যে প্রদর্শনীর জন্য বরাদ্দ ৬০ হাজার ৬০০ বর্গমিটার। জাদুঘরটিতে প্রদর্শনী সাতটি বড় অংশে বিভক্ত।
প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু ইসলামি শিল্প, সবই আছে সেখানে। বিশ্বের খ্যাতিমান বেশিরভাগ চিত্রকরের আঁকা হাজারেরও বেশি সৃষ্টিকর্ম আছে লুভরে। সেখানকার সবচেয়ে বিখ্যাত হলো লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ‘মোনালিসা’।
আরও পড়ুন: প্রিয়জনকে নিয়ে থাইল্যান্ড ভ্রমণে ঘুরে দেখবেন যেসব স্পট
দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ও সেরা জাদুঘর ‘দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট’। এটি নিউ ইয়র্ক সিটির ফিফটি সেভেন্থ স্ট্রিট ও ফিফথ এভিনিউতে অবস্থিত। এখানে আছে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ওশেনিয়ান শিল্পকলার সংগ্রহশালা। এছাড়াও প্রস্তরযুগের প্রায় সব শিল্পকর্ম থেকে শুরু করে পপ আর্টের উদাহরণ মিলবে এই জাদুঘরে।
এই জাদুঘরের বিশেষত্ব হলো- সাত শতাব্দীর পাঁচ মহাদেশের অধিবাসীদের পরা পোশাকের সম্মিলন। বিভিন্ন দেশের শিল্পকর্ম ও স্থাপত্যের পাশাপাশি মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে আছে বাদ্যযন্ত্র। তবে আমেরিকার শিল্পকর্মই এর মূল আকর্ষণ।
প্রাদো মিউজিয়াম
স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদে প্রাদো মিউজিয়ামের অবস্থান। পৃথিবীর অন্যতম বিখ্যাত জাদুঘর এটি। বিখ্যাত জুয়ান দে ভিলানুয়েভা এই জাদুঘর ডিজাইন করেন। একে পুরো পশ্চিমা চিত্রকর্মের এক অসাধারণ সংস্করণ বলা হয়।
এই জাদুঘরের প্রধান আকর্ষণ হলো রুবেনসের ‘দ্য থ্রি গ্রেসেস’। বিখ্যাত চিত্রকর ভেলাজকুয়েজের ‘লাস মেনিয়াস’ চিত্রকর্ম থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব চিত্রকরদের আঁকা ছবিতে সমৃদ্ধ এই জাদুঘর।
আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে দুবাই ভ্রমণে যে ভুল করলে হতে পারে জেল
বিখ্যাত ইউরোপিয়ান চিত্রকলার বিশাল এক সংগ্রহশালা বলা হয় প্রাদো মিউজিয়ামকে। স্পেনের প্রাচীন সভ্যতাগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে জাদুঘরটি।
দ্য ভ্যাটিকান মিউজিয়াম
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ‘দ্য ভ্যাটিকান মিউজিয়াম’। ইতালির রাজধানী রোমে ষোড়শ শতকের গোড়ার দিকে পোপ দ্বিতীয় জুলিয়াস স্থাপিত জাদুঘর কমপ্লেক্সের অংশ এটি। সেখানে ২০১৭ সালে ঘুরেছেন ৬৪ লাখ দর্শনার্থী, এই সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি।
ভ্যাটিকান মিউজিয়ামে আছে ১ হাজার ৪০০টি হল ও ৫০ হাজার নিদর্শন। এর পুরোটা ঘুরে দেখতে হলে হাঁটতে হবে ৭ কিলোমিটারেরও বেশি। এই জাদুঘরের কাঠামো বেশ অদ্ভুত। এখানকার মূল মূল আকর্ষণ সিস্তিনে চাপেল।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
জেএমএস/এমএস