ছুটির দিনে ঘুরে আসুন হবিগঞ্জের বাগারিয়ায়
মোহাম্মদ এনামুল হক
প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে কার না ভালো লাগে! অজানাকে জানার তীব্র কৌতূহল থেকে অনুসন্ধিৎসু মন ভ্রমণের টানে পাড়ি জমায় দিগ-দিগন্তে। পুথিগত বিদ্যার বাইরে বাস্তবতালব্ধ জ্ঞান সমৃদ্ধ করে আমাদের মানসজগৎকে।
এবার আমরা হবিগঞ্জ রিচি মোহাম্মদীয় সুন্নীয়া দাখিল মাদ্রাসার ১৬ দাখিল ব্যাচের বন্ধুরা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভালো স্পট খুঁজছিলাম। তখনই আরেক বন্ধু জামির সবাইকে জিজ্ঞাসা করে বাগারিয়া স্পটে গেলে কেমন হয়?
আরও পড়ুন: নোয়াখালীর ‘মিনি কক্সবাজারে’ গিয়ে যা যা দেখবেন
স্থানটি মুগ্ধ করার মতো। জনপ্রতি ১৫০ টাকায় ওই স্থান থেকে ঘুরে আসা যায়। তখন তার কথার উপর আস্থা রেখেই সবাই যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ২৩ এপ্রিল আমরা যাত্রা শুরু করি।
সবাইকে আগে থেকেই বলে রাখা হয়েছিল ১ নং লুকড়া ইউনিয়নে অবস্থান করার জন্য। আমরা সবাই সেখানে একত্রিত হয়ে একে-অপরের সঙ্গে ঈদ আনন্দে মেতে উঠি।
তখনই একটি টমটম ঠিক করা হয়। আমরা টমটমে করে রওনা দিলাম বাগারিয়া উদ্দেশ্যে। সেখানে পৌঁছে আমরা সবাই তাজ্জব বনে যাই! এতো সুন্দর জায়গা, সবাই প্রায় একসঙ্গেই বলে উঠি।
আরও পড়ুন: ছাদ-দেওয়াল ছাড়া ‘অদ্ভূত হোটেল’, ভাড়া ২০ হাজার টাকা
সেখানে বসেই আগ থেকে কিনে নেওয়া নাস্তা-পানি সেরে নিলাম। এরপর বন্ধুরা মিলে খুনসুটিতে মেতে উঠি। তখন আকাশের অবস্থা ছিলো মেঘাচ্ছন্ন, সবার আশঙ্কা হচ্ছিলো বৃষ্টি হবে। তাই বৃষ্টি আসার আগেই আমরা ছবি তুলতে শুরু করি।
হামিদ, জামির, এনামুল, আমিন, শিপন, কুদ্দুস, সাব্বির ও মুহিবুর সবাই নিজ নিজ ফোনে দৃশ্য ধারণ করতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। আমাদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে, হঠাৎ বৃষ্টি নামলো।
সবাই দৌড়ে হিজল গাছের তলায় আশ্রয় নিলাম। সেখানে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত অবস্থান করি। বৃষ্টি পড়া কমে গেলে আবার আমরা খুনসুটি, আড্ডা ও ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
আরও পড়ুন: সিলেটের ‘সাদা পাথর’ ভ্রমণে কখন ও কীভাবে যাবেন?
এতোক্ষণ যে স্থানের কথা জানালাম, তার নাম বাগারিয়া। হবিগঞ্জ জেলা শহর ভবানীপুর ও মাদনা গ্রামের মধ্যবর্তী স্থানে উক্ত পর্যন্ত কেন্দ্রটি অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ১০০ বিঘার মতো।
স্থানটির বিশেষত্ব হচ্ছে মাঝারি আকারের হিজল গাছ, উচুঁ-নিচু টিলা, কাশফুল, হরেক রকমের ফুল গাছ, পশ্চিম দিকে হিন্দু ধর্মাম্বলীদের শ্মশান বাড়ি মন্দির।
দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে হবিগঞ্জ শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য পাকা রাস্তা। ছোট একটি খাল। বর্ষায় দুই দিকের পানি স্থানটির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
আরও পড়ুন: সিকিম ভ্রমণে যে ভুল করলে বিপদে পড়তে পারেন
সেখানে ঘুরতে আসা এক পর্যটক শামীমা হাসান, ‘স্থানটির নিরিবিলি পরিবেশ ও দক্ষিণা বাতাসে মুগ্ধ তার মন। শহর থেকে পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষও এখানে ঘুরতে আসেন।’
তবে সেখানে বসার কোনো স্থান বা ছাউনি নেই। এমনকি নিরাপত্তার ব্যবস্থাও নেই। স্থানীয়রাই স্থানটি দেখাশোনা করেন। ক্ষয়ক্ষতির দিকেও কেউ খেয়াল রাখে না।
লাখাই উপজেলায় দেখার মতো সুন্দর সৌন্দর্যমণ্ডিত কোনো স্থান নেই। হবিগঞ্জ জেলায় বা জেলা শহরে দেখার মতো স্থান থাকলেও বিনোদনের জন্য কোনো পার্ক নেই।
আরও পড়ুন: বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে সুখী ১০ দেশ
এ কারণে স্থানীয়দেয় প্রত্যাশা যদি উপজেলার প্রশাসন বা জেলা প্রশাসন এই স্থানের দিকে নজর দেয় কিংবা সরকারি উদ্যোগে স্থানটি পরিচর্যা করে, তাহলে সেখানকার সৌন্দর্য বাড়বে।
একই সঙ্গে গড়ে উঠবে লাখাই উপজেলার তথা হবিগঞ্জ জেলার একটি অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র, পার্ক কিংবা শুটিং স্পট।
লেখক: শিক্ষার্থী, আল হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ।
জেএমএস/জেআইএম