আওরঙ্গাবাদ-ফারাহ

মন্দিরের শহর রাধা-কৃষ্ণের মথুরা-বৃন্দাবন

বাবর আলী
বাবর আলী বাবর আলী , চিকিৎসক
প্রকাশিত: ০২:৪৭ পিএম, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

বাবর আলী। পেশায় চিকিৎসক, নেশায় পর্বতারোহী। সাইক্লিং, ম্যারাথন রানও তার সঙ্গী। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ৫১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে জয় করেছেন হিমালয়ের সাড়ে ২২ হাজার ফুটের ভয়ংকর চূড়া ‘আমা দাবালাম’। এর আগে হেঁটে ভ্রমণ করেছেন দেশের ৬৪ জেলা। সাইকেল চালিয়ে দেশের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু কৃতিত্ব। এবার দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে। ভূ-স্বর্গখ্যাত কাশ্মীরের শ্রীনগর থেকে বানিহাল, উধমপুর, জম্মু, পঠানকোট হয়ে দিল্লি ও আগ্রা। পরে মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র, ঝাঁসী পেরিয়ে প্রবেশ তেলঙ্গানায়। এর পরে অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক হয়ে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারীতে সফর শেষ হবে। তার হিসাবে সব মিলিয়ে ৪৫ দিনে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার সফর করবেন তিনি।

এই সফরের প্রতিদিনের গল্প থাকবে জাগো নিউজে। আজ থাকছে দ্বাদশ পর্ব।

দিন ১০। মশার মতো নচ্ছার প্রাণীটা সৃষ্টি না হলেই আদৌ কোনো ক্ষতি কি হতো? ধাবার চারপাইয়ের পিঠ ঠেকানোর অংশ দড়ি দিয়ে বানানো। দড়ির মাঝে মাঝে ফাঁকা। ওপরে চাদর গায়ে দিলেও ওই ফাঁকা অংশ দিয়ে মশার দল চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। সাড়ে দশটায় শুয়েও রাত দুইটা অবধি খানিক পরপর ঘুম ভেঙে হাততালি দিচ্ছি। এমন এক প্রাণী, মারতে গেলেও হাততালি দিতে হয়! রাত আড়াইটায় ধাবার এক কর্মচারী মোটা একটা কম্বল এনে দিলেন। এবার কিছুটা রক্ষে।

jagonews24

মাঝে উঠে ভোর পাঁচটা বিশের অ্যালার্মটার টুটি চিপে দিলাম। সকালে ঘুম ভাঙলো বাংলা ভাষা শুনে। বেশ কদিন বাদে সরাসরি কারও মুখে বাংলা শুনছি। তেলে ফেলা বেগুনের মতো বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠলো হঠাৎ। ধাবারই এক ছোকরা কর্মচারী বাঙালি। ব্যান্ডেলের কাছে বাড়ি। সকালে উঠে ফোনে মায়ের সঙ্গে কথা বলছে। রাতে ওর সঙ্গে পরিচয় হয়নি, কারণ ও হাইওয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। আলো জ্বেলে সংকেত দিয়ে ট্রাক মালিকদের দৃষ্টি আকর্ষণের কাজ ওর। গত মাসেই ব্যান্ডেল লোকালে চড়ে চন্দননগর যাওয়ার গল্প করলাম ওর সঙ্গে। পৌনে ৭টায় উঠে রাইড শুরু করতে করতে সাড়ে ৭টা। এই রাইডে এত দেরিতে সাইকেলের স্যাডলে বসিনি।

আরও পড়ুন>> শরীর পোড়ানো গরম নিয়ে ইট-পাথরের দিল্লিতে 

সকালে নরম রোদে ধুয়ে যাচ্ছে কালো পিচের সড়ক। মাঝে মধ্যেই আওয়াজ তুলে পাশ কেটে বেরিয়ে যাচ্ছে ট্রাক। অল্প এগোতেই মিত্রল। উত্তর প্রদেশে প্রবেশের টোলের অসংখ্য বুথ রাস্তার ধারে। কিছুদূর গিয়েই আরেকটা কোস মিনার তথা ক্রোশ মিনার। এর অবস্থান অবশ্য রাস্তার ওপাশে। উত্তর প্রদেশের দিকে যত এগোচ্ছি, শিবের রাজত্ব কমে আসছে রাস্তার ধারের দোকান, সাইনবোর্ড মন্দির থেকে। এদিকের একচ্ছত্র অধিপতি বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণ। তার জন্মস্থানের দিকেই তো ছুটছে সাইকেলের চাকা। মাররোলি পেরোতে রাস্তার দুই ধারে প্রচুর উইলো গাছ। শ্রীনগরের পরে এত উইলো গাছ দৃষ্টিসীমায় আটকায়নি। রাস্তার ধারে এক সার উইলোর পরে বিস্তৃত ক্ষেত। ক্ষেতের মাঝেও বিশাল সব গাছ আছে। এই ব্যাপারটা আমাদের দেশের কৃষিজমি থেকে ভিন্ন। খেতে গাছ থাকার ব্যাপারটা বাংলাদেশে খুব একটা চোখেই পড়ে না।

ডাকোরা থেকে রাস্তার ডিভাইডারেও বড় বড় গাছ। লেজওয়ালা পাতা বিশিষ্ট দুই-তিনটা বিশাল সাইজের অশ্বত্থ অবধি চোখে পড়লো। আর আছে লাল ফুলের ঝাঁকা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষ্ণচূড়া।

jagonews24

দোকানের নামকরণে ‘বংকে বিহারি’ নামখানার প্রভূত ব্যবহার। উত্তর প্রদেশ, বিহারের লোকের কাছে কৃষ্ণের অপর নাম যে বংকে বিহারি। এই সড়কে হরিয়ানার শেষ শহর হোডাল। এই শহরের একেবারে প্রান্তে গো সেবা ধাম হাসপাতাল। কলেবরে মানুষের জন্য নির্মিত হাসপাতাল থেকেও বড় গবাদিপশুর এই চিকিৎসাকেন্দ্র। উত্তর প্রদেশে প্রবেশের টোল গেটের ও-ধারে অসংখ্য দোকান। অনেকটা আমাদের দেশের ফেরিঘাটের মতো। খাবার ধাবা, মনিহারি দোকান থেকে শুরু করে টায়ারের দোকান- সবাই নিজ নিজ ব্যবসা নিয়ে আছে। উত্তর প্রদেশের রাস্তার ধারে প্রচুর বানর। জায়গায় জায়গায় জটলা পাকাচ্ছে এরা। কেউ নিজেদের অস্থিরমতি স্বভাবের প্রদর্শন করছে কেউবা আখ বিক্রেতার ফেলে যাওয়া আখের ছোবড়া থেকে রস আস্বাদনের চেষ্টা করছে। যন্ত্রচালিত মেশিনে আখ ছোবড়া হলে তার শেষ ফোঁটাটুকু শুষে নেওয়া হয়। বোকা শাখামৃগের দল তাই চিবোচ্ছে আয়েশ করে।

আরও পড়ুন>> মহাভারতের কুরুক্ষেত্র-বাবরের পানিপথের যুদ্ধক্ষেত্রে 

কয়েক কিলোমিটার এগিয়ে মৃত গাড়ির কবর স্থান একদম রাস্তার ধার ঘেঁষেই। দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহতাকেই প্রকট করে তুলছে যেন। রাস্তার বামেই মহাসড়কের সঙ্গে সমান্তরালে চলছে রেললাইনের বাঁধাপথ। রেলপথের এই এক মুশকিল। লম্বা ওই দুটো লোহার পাত ধরে চলা ছাড়া উপায় নেই।
একটানা প্যাডেল মেরে সোয়া ৯টা নাগাদ কোসি শহর। আজ ‘ব্রিজ’ নামটাও অসংখ্য ধাবা, কমিউনিটি হল, টি-স্টলের আগে যুক্ত হতে দেখছি। এই ব্রিজ কিন্তু সেতু নয়। রাধা-কৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত মথুরা-বৃন্দাবনসহ আশপাশের কয়েকটা জেলাকে বলা হয় ব্রিজ কিংবা ব্রজভূমি। তাই এই নামের বহুল ব্যবহার। শহরের ছাপড়া এক দোকানে কচুরি-আলুর তরকারি আর ঘোলসমেত সকালের নাশতা। কোসি শহর ছাড়িয়ে আজিজপুরে কোস মিনারের দেখা মিললো রাস্তার ডিভাইডারে। এই কোস মিনারে আবার অনেকগুলো পায়রা বাসা বেঁধেছে। লেজঝোলা টিয়াকেও দেখা গেলো মিনারের ফোঁকরে মাথা গলিয়ে থাকতে। পরের জনপদটার নাম মজার, দোটানা। এই লোকালয়ের প্রতিটা বাড়ির সামনেই চারপাই বিছানো। এই সকালে বাড়ির অলস সদস্যদের পিঠ ঠেকানোর জায়গা এসব চারপাই।

jagonews24

আরও একটা কোস মিনার পড়লো পথে। আজকের পথ একেবারে কোস মিনারময়। পাশেই ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অব ইন্ডিয়ার মাইলস্টোন আছে। কোস মিনারের তুলনায় রীতিমতো ফিকে দেখাচ্ছে এই যুগের মাইলস্টোনকে। কাছেই সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। গেটলাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের ভিড়। এদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই সম্ভবত সামনের এক দেওয়ালে সেঁটেছে ‘বার্গার সিং’ নামক দোকানের দেওয়াললিখন। চৌমুহান পেরোতেই সূর্য আকারে এবং উত্তাপে লাল গোলার ভূমিকা নিলো। এতদিন রাস্তার ধারে পেয়ে এসেছি পাপ্পু টি স্টল কিংবা জিতেন্দ্র টি স্টল। আজ দোকানের নামে খানিক ভিন্নতা চোখে পড়ছে। তীব্র গরমেও শীতল পানীয় হিসেবে বিবেচিত চায়ের জায়গা নিয়েছে কোল্ড ড্রিংক। দোকানের নামেও তার আভাস। ছাপড়া দোকানগুলোর নাম রাখা হিয়েছে রাজেশ কোল্ড ড্রিংক কিংবা দিনেশ কোল্ড ড্রিংক। খানিক এগোতেই আরও একটা বিশ্ববিদ্যালয়। নাম
জিএলএ বিশ্ববিদ্যালয়। সংস্কৃতি ইউনিভার্সিটির চেয়ে এটি আকার-আয়তনে বড়।

পথচলতি লোকে থামায়। আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘আচ্ছা, ভ্লগ বানাতে হো আপ?’ উৎসুক হয়ে জানতে চায় ইউটিউব চ্যানেল আছে কি না। চলতে চলতেই কোন ফাঁকে ন্যাশনাল হাইওয়ে-২ এ ঢুকে পড়লাম। রাধা-কৃষ্ণের স্মৃতিবিজড়িত বৃন্দাবনে পা রাখলাম। শ্রী গারুদ গোবিন্দ মন্দিরের অবস্থান মহাসড়ক থেকে বড়জোর আধা কিলোমিটার। গারুদ মূলত বিষ্ণুর বাহন আর গোবিন্দ বলতে পশুপালক কৃষ্ণকেই বোঝানো হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে প্রচুর বানর। অশ্বত্থ বৃক্ষতলের গেরুয়া রঙের ব্যালকনিগুলো ভারি সুন্দর। মন্দির লাগোয়া জলাশয়ে ভাসছে আবর্জনার পুরু স্তর। প্লাস্টিকের বোতলে সয়লাব হয়ে আছে এত সুন্দর একটা জলাশয়।

jagonews24

আরও পড়ুন>> শিখ-মোগলদের পুরাকীর্তি আর বন্য ময়ূরের সান্নিধ্যে 

এবার বৃন্দাবন মূল শহরে রাখার পালা। ‘মেরো বৃন্দাবন’ লেখা ফটক পেরিয়ে অল্প এগোতেই মা বৈষ্ণোদেবী ধাম। মাতা বৈষ্ণোদেবীর ১৪১ ফুট উঁচু মূর্তি বেশ দূর থেকেই দৃশ্যমান। মন্দিরের ভেতর অবশ্য ক্যামেরা, ফোন এসব নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ। একই রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোলে লোটাস মন্দির। মন্দিরটি বানানো পদ্মের আকারে। ছোট কিন্তু সুন্দর মন্দির। অবশ্য গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গার অভাবে জায়গাটার সামনে অসহ্য রকমের জটলা। পরের গন্তব্য বৃন্দাবন চন্দ্রোদয়া মন্দির। এ মন্দিরটি বিশাল একটি কমপ্লেক্সের অংশ। এটি খুব সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মন্দির হতে যাচ্ছে। যদিও কাজ শেষ হতে এখনো ঢের দেরি। এখন ছোট একটি বিগ্রহ স্থাপিত হয়েছে মন্দিরে। প্রাঙ্গণে দাঁড়াতেই প্রসাদ হিসেবে শাল পাতার বাটিতে ল্যাটকা খিচুড়ি মিলে গেলো। স্বাদ ভালো লাগায় নির্লজ্জের মতো আবার চেয়েও নিলাম।

পরের দ্রষ্টব্য প্রেম মন্দির। রাধা-কৃষ্ণ এবং সীতা-রামের প্রেম হলো এই মন্দিরের ভিত্তি। অসম্ভব সুন্দর এ মন্দির দিনের নির্দিষ্ট সময় খোলা থাকে। সময়ের পাকচক্রে মন্দিরটি আর দেখা হলো না। পথে পড়লো বেদ বিহারি ধাম। আর থামলাম না। বৃন্দাবন হাজারটা মন্দিরের শহর। আক্ষরিক অর্থে এ শহরে মন্দিরের সংখ্যা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার!

jagonews24

বৃন্দাবনের অবশ্য আরও একটি পরিচয় আছে। মন্দিরের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিধবাদের শহরও। স্বামীহারা অসংখ্য বিধবা ভগবানের চরণতলে বাকি জীবনটা কাটাতে চলে আসেন। আগে যেমন অনেক গল্প-উপন্যাসে আয়ুর অন্তিমলগ্নে থাকা বুড়োদের আবাস হতো কাশী কিংবা বেনারস, ঠিক তেমনি বিধবাদের ক্ষেত্রে বৃন্দাবন। এখানে জায়গা মেলাও মুশকিল নয়। ছোট এ শহরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে মন্দির আর তীর্থ। কোথাও না কোথাও ঠাঁই মিলবেই।

বৃন্দাবনের পালা শেষ করে আবার সাইকেলের প্যাডেলে চাপ, উদ্দেশ্যে মথুরা। বৃন্দাবনে বেড়ে উঠেছেন রাধা-কৃষ্ণ। আর মথুরা হলো কৃষ্ণের জন্মভূমি। একটা মোড় ঘুরতেই আমার মতো এক সাইকেল আরোহীকে দেখে থামার সংকেত দিলাম। সাইকেলের ক্যারিয়ারে লম্বা সফরের জন্য প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত সরঞ্জাম আর রসদ। পরিচয় হলো উড়িষ্যার সম্বলপুরের ছেলে স্মুরতি রঞ্জনের সঙ্গে। সদ্য গ্রাজুয়েশন শেষ করে ভারত পরিক্রমা করতে বেরিয়েছে। পুরো ভারত সাইকেলে চষে ফেলার ইচ্ছে। উড়িষ্যা, পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার হয়ে এসেছেন উত্তর প্রদেশে। সীমান্তের ওপার থেকে এসেছি জেনে জানালো, ওর বাংলাদেশ ভ্রমণেরও পরিকল্পনা আছে। বেশ একচোট গল্পের পরে বিদায় নিলাম।

রাখাল শ্রীকৃষ্ণের জন্মভূমিতেও অসংখ্য মন্দির, সঙ্গে আছে প্রচুর গোশালা। মথুরা-বৃন্দাবনের আবাসিক এলাকাগুলোর প্রবেশপথও দেখার মতো। প্রবেশপথে নান্দনিক কোনো ভাস্কর্য এসব প্রবেশপথের অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। টানা চালিয়ে বিড়লা মন্দির। এখানে একটা ধর্মশালাও আছে। আমার উদ্দেশ্য কৃষ্ণের জন্মভূমির মন্দির দেখা। জন্মস্থানে গড়ে উঠেছে বিশাল মন্দির। অসংখ্য ভবন মন্দির এলাকায়। লোকের ভিড়ও দেখার মতো। যার সঙ্গেই দেখা হয়, সবাই সম্বোধন করে ‘রাধে রাধে’ বলে। মথুরা-বৃন্দাবনের সর্বজনীন সম্বোধন এই ‘রাধে রাধে’। লোকের ভিড় ঠেলে মন্দির দেখে পাশের চত্বরে ৮০ রুপিতে ভেজিটেবল থালি বিক্রি হচ্ছে দেখে চেয়ার টেনে গতর বসিয়ে নিলাম। শৈশবে ‘ননী চোর’ বলে খ্যাত কৃষ্ণের আঁতুড়ঘরে এসে রুটির ওপর একখানা করে মাখন মিলে গেলো!

jagonews24

কিলোমিটার দুয়েক শহরের রাস্তায় চালিয়ে আবার মহাসড়কে। এনএইচ-১৯ এবারের সঙ্গী। মহাসড়ক লাগোয়া বিশাল জৈন মন্দির। মহাবীর জৈন ধ্যানস্থ মৌনীর মতো বসা। কড়া রোদে উড়ালপুল ঠেলতে ঠেলতে পৌঁছে গেলাম ‘ব্যাড’ নামক জনপদে। ওই জায়গার কী খারাপ, সেটা আর জানা হলো না। এই রাস্তায় চার-পাঁচতলা উচ্চতা বিশিষ্ট অনেকগুলো ওভারব্রিজ আছে। এগুলো মূলত মহাসড়ককে এড়িয়ে রাস্তার এপার থেকে ওপারে মোটরসাইকেল/সাইকেল পারাপারের কাজে ব্যবহৃত হয়। খানিক বাদের দৃশ্যটা আমার জন্য একেবারেই নতুন। চোখ কচলে দ্বিতীয়বার দেখলাম ঠিক দেখছি কি না! আমার চোখের সামনে উটে টানা গাড়ি। গরু কিংবা ঘোড়ার গাড়ি বহু দেখেছি। এটা আমার জন্য একেবারেই আনকোরা। সত্যিই, উত্তর প্রদেশ বড্ড অদ্ভুত জায়গা! আরেক পিচ্চি এসে ওর মোটরসাইকেলের সঙ্গে আমার সাইকেল অদলবদল করতে চাইলো! ওকে বুঝালাম, লং রাইডের ক্ষেত্রে আমি হর্সপাওয়ারে বিশ্বাসী নই; প্যাডেল পাওয়ারে বিশ্বাসী। বরারি ছাড়ানোর পর থেকেই রাস্তার ধারের সুবিধাজনক ধাবায় চোখ রাখছিলাম। ফারাহ শহরের কিছুটা আগে রাত কাটানোর জায়গা মিলেও গেলো। সূর্যাস্ত দেখতে ধাবার ছাদে উঠলাম। শাখামৃগের দল এবাড়ি-ওবাড়ির ছাদে ঘুরঘুর করছে। লোকে চ্যালাকাঠ নিয়ে তাড়াও করছে নিয়মিত। অদ্যকার দিনের শেষ খাবারের সুলুকেই কি এই ঘোরাঘুরি ওদের?

চলবে…

এএসএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।