পৃথিবীর নজরকাড়া যে স্থাপত্য দেখলে চোখ হবে ছানাবড়া

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০০ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সাইফুর রহমান তুহিন

এই পৃথিবীতে মানবসৃষ্ট বিস্ময়কর সব স্থাপত্যকর্ম আছে। যদিও সবগুলো কারো পক্ষেই দেখে ওঠা সম্ভব নয়। তবে বিশ্বে এমন কয়েকটি নজরকাড়া স্থাপত্যকর্ম আছে, যা দেখলে আপনার চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে।

প্রাচীনকাল থেকে এখনো পর্যন্ত এসব বিস্ময়কর স্থাপত্যসমূহের নমুনা হচ্ছে মানুষের দারুণ বুদ্ধিমত্তার এক অনুপম প্রদর্শনী। আপনিও যদি স্থাপত্যকলার একজন সত্যিকার অনুরাগী হন তাহলে তাহলে এসব স্থাপত্যকর্ম আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে।

আরও পড়ুন: সঙ্গীকে চুম্বন করা নিষেধ যেসব দেশে

ল্যুভর পিরামিড, ফ্রান্স

এই চমকপ্রদ স্থাপনাটির অবস্থান ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের ল্যুভর জাদুঘরের মূল ফটকের সামনে। চৈনিক-মার্কিন স্থপতি ইয়েও মিং পেই এটির নকশা করেছিলেন।

দুর্দান্ত এই স্থাপত্যকর্ম আপনার দু’চোখে বিস্ময়ের ঘোর লাগিয়ে দেবে। এখানে একটি বিকেল না কাটলে অনেকটাই ফিকে হয়ে যাবে আপনার প্যারিস ভ্রমণ।

হায়া সোফিয়া ও নীল মসজিদ, তুরস্ক

তুরস্কের হায়া সোফিয়া ও এর সংলগ্ন নীল মসজিদ হলো এমন এক জায়গা যা আপনার তুরস্ক ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই থাকতে পারে।

আরও পড়ুন: যে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ে উল্টো দিকে

হায়া সোফিয়া একটি জাদুকরী স্থান। ধারণা করা হয়, হায়া সোফিয়া হলো এখনো টিকে থাকা বাইজান্টাইন স্থাপত্যকলার সেরা উদাহরণ।

মীনাক্ষী আম্মান মন্দির, ভারত

নজরকাড়া এই মন্দির দক্ষিণ ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের ভাইগাই নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। সাবেক রাজা সুদয়বর্মণ কুলাসেকেরন এটি নির্মাণ করেন।

পরবর্তী সময়ে এটি বিভিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছে। ধর্মীয় প্রাণকেন্দ্র হওয়া ছাড়াও এটি দ্রাবিড়িয়ান স্থাপত্যকলার অন্যতম সেরা উদাহরণ হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত।

তাজমহল, আগ্রা, ভারত

বিশ্বের সপ্তাশ্চর্যের একটি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে তাজমহল ব্যাপকভাবে সমাদৃত। এটি একটি স্মৃতিস্তম্ভ যা নির্মিত হয়েছে ওস্তাদ আহমেদ লাহৌরির নির্দেশনায় কাজ করা ২০ হাজার কারিগরের শ্রমে।

আরও পড়ুন: আইফেল টাওয়ারেরও বউ আছে!

নির্মাণকাজে অনুসরণ করা হয়েছে ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যকলা ও ব্যবহৃত হয়েছে মূল্যবান বিভিন্ন পাথরের সঙ্গে দামি মার্বেল পাথর। গোটা বিশ্বের কাছে এটি এক মস্তবড় বিস্ময়।

সেন্ট বাসিল’স ক্যাথেড্রাল, রাশিয়া

ক্যাথেড্রালটি এতোই সুপরিচিত যে, হয়তো কখনো না কখনো এটির ছবি আপনি দেখেছেন। বাইরে থেকে দেখতে বর্ণিল, চমকপ্রদ ও জীবন্ত সেন্ট বাসিল’স স্থাপত্যকলার এক জাদুকরী উদাহরণ। রাশিয়ার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম প্রধান চিহ্ন এই ক্যাথেড্রাল।

শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ, আবুধাবি

সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাঝধানী আবুধাবিতে অবস্থিত জাদুকরী এই মসজিদ পুরো দেশের মধ্যে বৃহত্তম। একবারে ৪১ হাজার ১০০ মুসল্লী এখানে একত্রিত হতে পারেন।

মসজিদটির অভ্যন্তরে আছে বিশ্বের বৃহত্তম কার্পেট। যার আয়তন ৬০ হাজার ৫৭০ বর্গফুট। ১৯৯৪-২০০৭ সালের মধ্যে নির্মিত মসজিদটির নির্মাণ ব্যয় ছিলো ৫৪৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার!

আরও পড়ুন: যেসব জায়গা দিয়ে উড়তে পারে না প্লেন

মসজিদটির নির্মাণে বিভিন্ন প্রকার ক্যালিগ্রাফি স্টাইল ব্যবহৃত হয়েছে। না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল যে, কতোটা বিস্ময়কর স্থাপনা এই শেখ জায়েদ গ্র্যান্ড মসজিদ।

নিউশওয়ানস্টেইন ক্যাসল, জার্মানি

উনিশ শতকে নির্মিত ঐতিহাসিক নিউশওয়ানস্টেইন প্রাসাদ জার্মানির দক্ষিণ-পশ্চিম ব্যাভারিয়ার ফুসেনের কাছে অবস্থিত। ১৮৬৯ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও এর নকশা অনেকখানি প্রভাবিত হয়েছে বাইজান্টাইনদের বিভিন্ন উপাদান ও আরব স্থাপত্যকলা দ্বারা।

আরও পড়ুন: যে হোটেলে একরাত কাটানোর খরচ গাড়ির দামের সমান

দুটি বিশ্ব যুদ্ধের ধকল সামাল দিয়েছে প্রাসাদটি। এর নজরকাড়া সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর সারা বিশ্ব থেকে ছুঁটে আসেন প্রায় ১৫ লাখ পর্যটক। তবে প্রাসাদটির মূল নকশা কখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়নি। স্থাপত্যপ্রেমী ও ইতিহাসপ্রেমী দুই পক্ষের জন্যই প্রাসাদটি এক বড় আকর্ষণ।

অজন্তা ও ইলোরা, ভারত

ভারত সব সময়ই দুর্দান্ত সব নকশা ও স্থাপত্যকর্মের আবাসস্থল। ইলোরা দাঁড়িয়ে আছে বিশ্বের বৃহত্তম পাথরখচিত গুহামন্দির কমপ্লেক্স হিসেবে। যার নির্মাণ কাজ প্রথম শুরু হয়েছিলো খ্রিস্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে। ইলোরার কৈলাশ মন্দির হলো বিশ্বের বৃহত্তম একক বিশালকায় পাথর খনন।

কাছেই অবস্থিত অজন্তা গুহা হলো ত্রিশটি পাথরাবৃত গুহা স্মৃতিস্তম্ভের সংমিশ্রণ। এটির পাথুরে মুখের আশপাশে আছে বেশ কিছু মন্দির ও প্রার্থনার পাহাড়। প্রাচীনকালে এমন স্থাপনা তৈরি হওয়ার কথা জানাটাই যে কারোর জন্য বিস্ময়ের।

আরও পড়ুন: সঙ্গীকে নিয়ে কম খরচেই ঘুরে আসুন বাংলার দার্জিলিং

পাথুরে গম্বুজ, জেরুজালেম

এটি ইসলাম ধর্মের একটি দরগাহ ও পুরোনো জেরুজালেম শহরের একটি চিহ্ন। বিশ্বে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকা ইসলামী স্থাপত্যকলাগুলোর একটি এটি। ৬৯১-৬৯২ সালে এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ও বিখ্যাত সোনালি গম্বুজ সংযুক্ত হয় ১৯৫৯-৬১ সালে।

এই দরগাহ তার স্থাপত্যকর্মের জন্য বিখ্যাত ও বিশ্বে র বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে এর প্রভাব আছে। এগুলোর মধ্যে হলো- ইতালির সেন্ট জিয়াকোমো চার্চ, হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টের রামব্যাচ স্ট্রিট সিনাগগ, জার্মানির বার্লিনের দ্য নিউ সিনাগগ প্রভৃতি।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ফিচার লেখক।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।