সুন্দরবনে যা দেখবেন, যেভাবে যাবেন
মামুনূর রহমান হৃদয়
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনভূমি সুন্দরবন। সেখানে পৌঁছেই দেখতে পাবেন, সবুজের ফাঁকে ফাঁকে মায়াবী হরিণের প্রাণোচ্ছ্বল চাহুনি আর তিড়িং বিড়িং দৌড়ানো সঙ্গে সফর সঙ্গী দুষ্টু বানরের দল।
আর এ বানরের বাদরামি ও ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক ছাপিয়ে কানে আসে জানা-অজানা পাখির কলরব। এ আকষর্ণে অনেকেই ছুটে আসেন সুন্দরবনে। ঠিক তেমনই হাবিবুর রহমান বাবু ছুটে এসেছিলেন সুন্দরবনে। আর করেছেন নিজের অনুভূতি প্রকাশ।
অনেকদিন ধরে সুন্দরবন ভ্রমণের ইচ্ছা ছিল। তবে যেখানে হিংস্র প্রাণীর আক্রমণের ঝুঁকি নেই, আমি তেমন জায়গা নির্বাচন নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। জানতে পারলাম, নিরাপত্তার দিক থেকে সুন্দরবনের করমজল ভ্রমণের জন্য সেরা।
আরও পড়ুন: বিশ্বের যে স্থানে রাত হয় না!
রাজধানীর সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে বাগেরহাট ও মংলার বাস ছাড়ে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়। বাসে যেতে হবে মোংলা পর্যন্ত। মোংলা বন্দর থেকে আট কিলোমিটার দূরেই করমজল। নির্দেশনা মতো মোংলা হয়ে করমজল কেন্দ্রে যাওয়ার সোজা পথ বেছে নিলাম।
মোংলা থেকে নদী পথে করমজল যেতে হয়। যে কারণে মোংলা থেকে পর্যটকবাহী বাহারি রঙে সাজানো একটি জলযানের সফরসঙ্গী হলাম। পশুর নদীর বুকে চিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে জলযান। শান্ত পশুর নদীতে দেখা মেলে নদীবিধৌত জনপদের অপরূপ চিত্র।
মালবাহী জাহাজের শ্রমিকদের ব্যস্ততম কর্মযজ্ঞ, জেলে, বনজীবী, বাওয়ালীদের নৌকা দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম করমজল জেটিতে। নদীর অনুকূলে থাকায় ৪৫ মিনিটে পৌছে যাই ‘করমজল ইকোট্যুরিজম ও বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্র’।
ঘড়ির কাটায় তখন সকাল সাড়ে ১১টা। সবুজ বন থেকে পাখির কিচির-মিচির ডাক কানে আসতেই মন ভরে গেল! করমজলের ঘাটে উঠার পর টিকিট কাউন্টার থেকে নামমাত্র টাকার বিনিময়ে টিকিট নিয়ে বনের মধ্যে প্রবেশ করলাম।
আরও পড়ুন: ঐতিহাসিক সোনারগাঁও ভ্রমণে যা যা দেখবেন
ঢুকেই চোখে পড়লো মাটিতে শোয়ানো সুন্দরবনের একটি মানচিত্র। পর্যটকদের সুবিধার্থে এই মানচিত্র রাখা হয়েছে। এছাড়া বনের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে পায়ে হাঁটা রোমাঞ্চকর উঁচু পথ। দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। যার নাম ‘মাঙ্কি ট্রেইল’।
কাঠ বিছানো ট্রেইল ধরে বনের ভেতরে আগালেই দুই ধারে ঘন জঙ্গল। বাইন, পশুর কেওড়া আর সুন্দরী গাছের সারি। বন্য প্রকৃতিতে পথে পথে দর্শনার্থীদের অভ্যর্থনা জানায় মায়াবী হরিণ। কাঠের পথ কিছুদূর গিয়েই থেমে গেছে পশুরের তীরে।
সেই নদীর তীরে বসার জন্য আছে বেঞ্চ পাতানো ছাউনি। মূল পথটির আরও কিছুটা দূরে ছোট খাল। পাশে গোলপাতায় ছাওয়া আরও একটি শেইড। গোলাকৃতির শেইডের বেঞ্চে বসে বনের নিস্তব্ধতা, সত্যিই উপভোগ্য।
করমজল গেলে চোখে আরও পড়বে চিত্রা হরিণ, বানর, কুমির, হরেক প্রজাতির পাখি, কাঠবিড়ালীসহ বহু প্রাণী। মৌমাছির শত শত মৌচাক চোখে পড়বে ফুট ট্রেইলে হাঁটার পথে। পথজুড়ে দেখা মিলবে এখানকার বাসিন্দা রেসাস বানরের।
বাদাম, কলা ইত্যাদি খাবার হাতে নিয়ে বানরগুলোকে লোভ দেখালে ওরা কাছে এসে মানুষের হাত থেকে এগুলো লুফে নেয়। এছাড়া পশ্চিম দিকে চিড়িয়াখানার মতো উপরিভাগ উন্মুক্ত খাচায় ঘেরা খোলা জায়গায় চিত্রা হরিণ পর্যটকদের মন প্রফুল্ল করে তোলে।
আরও পড়ুন: ২০২৩ সালে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী পাসপোর্ট কোনটি?
উপর থেকে সমগ্র বনের দৃশ্য অবলোকনের জন্য আছে ৪৫ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার। সরকার পরিচালিত বাংলাদেশের একমাত্র লবণ পানির কুমির ও বিলুপ্ত প্রজাতির কচ্ছপ প্রজনন কেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়েছে এখানে। এছাড়া আছে বেশ কয়েকটি বড় কুমির।
পাশাপাশি একাধিক চৌবাচ্চায় বিভিন্ন আকারের কুমিরের বাচ্চা দেখা যাবে। দৈর্ঘ্য ২ মিটার লম্বা হলেই বাচ্চাগুলোকে নদীর জলে অবমুক্ত করা হয়।
আমার মতে সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য একটি সেরা জায়গা। সারাদিন ঘোরা শেষে খুলনা ও মংলায় রাত্রিযাপনের জন্য আছে বিভিন্ন ধরনের আবাসিক হোটেল।
এছাড়া করমজলের আশেপাশের টুরিস্ট পয়েন্টগুলোতে আছে বেশ কিছু রেস্ট হাউজ। সুতরাং রাত্রিযাপনের কোনো সমস্যা নেই।
ভ্রমণ সবার জীবনেরই একটি অংশ হওয়া উচিত। ভ্রমণ আমাদের দৈনন্দিন রুটিন থেকে বের করে নতুন পরিবেশ ও অভিজ্ঞতার সাক্ষী করে তুলতে সাহায্য করে ও শরীর-মন দুটোই করে তুলে সতেজ।
লেখক: শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী।
জেএমএস/জেআইএম