১৫০ বছরের পুরোনো কেরানীগঞ্জের লালরঙা মসজিদ
মিরাজ উদ্দিন
ঢাকার কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ। ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদের বয়স ১৫০ বছরেরও বেশি। এবার এই মসজিদ পেল জাতিসংঘের শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকোর স্বীকৃতি।
ইউনেস্কো এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ডস ফর কালচারাল হেরিটেজ কনজারভেশনে ৬টি দেশের ৯টি স্থাপনাকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
এর মধ্যে ‘অ্যাওয়ার্ড অব মেরিট’ ক্যাটাগরিতে স্বীকৃতি পেয়েছে কেরানীগঞ্জের দোলেশ্বর হানাফিয়া জামে মসজিদ।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে, এমনকি দেশ-বিদেশ থেকেও পর্যটকেরা কেরানীগঞ্জের হানাফিয়া জামে মসজিদটি দেখতে আসেন। আধুনিক স্থাপনার এই মসজিদ পর্যটকের মনোযোগ কাড়ছে।
ঐতিহাসিক স্থাপনাটির অবস্থান কেরানীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কোন্ডা ইউনিয়নের দোলেশ্বর গ্রামে। ১৫০ বছরের পুরোনো মসজিদটির পুরোনো আদল ধরে রেখে নবাবি আমলের ঐতিহ্য বজায় রেখে সুনিপুণ হাতে সংস্কার কাজ করেছেন স্থপতি সাঈদ মোস্তাক আহমেদ।
জানা যায়, মরহুম দারোগা আমিনউদ্দিন আহাম্মদ বাংলা ১২৭৫ সনে (ইংরেজি ১৮৬৮, হিজরি ১২৮৫) নিজ উদ্যোগে অনন্য স্থাপত্যশৈলীর দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির নির্মাণকাজ শুরু করেন।
জনশ্রুতি আছে, দারোগা আমিনউদ্দিন আহাম্মদ মসজিদটির নির্মাণে প্রথম উদ্যোক্তা হওয়ায় এটি ‘দারোগা মসজিদ’ নামে পরিচিত ছিল। তার ছেলে মইজউদ্দিন আহম্মদ ছিলেন মসজিদের প্রথম মোতোয়ালি ছিলেন।
মইজদ্দিন আহাম্মদ, তমিজউদ্দিন আহাম্মদ, করিমউদ্দিন আহাম্মদ, খিদির বক্স মিয়া ও আবদুর গফুর আহাম্মদ মসজিদটির জন্য জমি ওয়াক্ফ করেন।
মসজিদের সামনের সাইনবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সহোদর খিদির বক্স ও কাদের বক্স ও মইজউদ্দিন আহাম্মদের পরিবার বংশপরম্পরায় মসজিদটির নির্মাণ ও সংস্কার কাজে জড়িত ছিলেন।
কাদের বক্সের নাতি ও হাফেজ মো. মুছার ছেলে তৎকালীন জাতীয় পরিষদের সদস্য হামিদুর রহমান মসজিদটির বর্ধিত অংশ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন। এরপর একাধিকবার মসজিদটি সম্প্রসারণ করা হয়।
কালের আবর্তে এই মসজিদের অবকাঠামো বিলীন হওয়ার পর্যায়ে ছিল। মসজিদটিকে সংস্কার করে পুরোনো রূপ দেওয়ার উদ্যোগ নেন স্থানীয় সাংসদ নসরুল হামিদ।
তার উদ্যোগে স্থপতি আবু সাঈদ এম আহমেদ মসজিদ অবকাঠামো ঠিক রেখে পুনঃসংস্কারের কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালে সংস্কার কাজ শেষ হয়।
পুরোনো মসজিদের পাশেই নির্মাণ করা হয় নতুন আরেকটি মসজিদ। পুরোনো মসজিদটি এখন গ্রন্থাগার ও মক্তব হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মসজিদ দেখতে আসা নূর আমিনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, সাপ্তাহের কমপক্ষে তিন দিন আসা হয় মসজিদটি দেখার জন্য। এখানে আসলে মনটা ভালো লাগা কাজ করে।
বিকেলে অনেক শিশুরা মসজিদ প্রাঙ্গনে খেলাধুলা করে। কোন দিন সবচেয়ে বেশি আসে এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন। সবচেয়ে লোকের সমাগম বেশি হয় শুক্রবারের দিনে। ওইদিন দূরদূরান্ত থেকে মানুষ দেখতে আসে মসজিদ।
মসজিদের খতিব মাওলানা আবুল হোসাইন বলেন, আমি এই মসজিদে দীর্ঘ দশবছর জড়িত আছি।বিভিন্ন মিডিয়ার লোক আসে এই মসজিদ সম্পর্কে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে।
ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার পর কেরানীগঞ্জের হানাফিয়া জামে মসজিদ এখন সারা বিশ্বেই পরিচিত। চাইলে সময় করে আপনিও পরিবার’সহ গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার খুব কাছেই কেরানীগঞ্জের এই মসজিদে।
জেএমএস/এমএস