ঢাকার কাছেই ঘুরে আসুন বালু নদে
মোহাম্মদ রায়হান
যানজট ও কোলাহলে পিষ্ট রাজধানীবাসী খানিকটা স্বস্তি পেতে ছোটেন দূর দূরান্তের পাহাড় কিংবা সাগর-সলিলে। তবে কর্মব্যস্ততার চাপে হাঁসফাঁস লাগলেও সময়ের অভাবে কেউ কেউ পারেন না দূর দূরান্তের অমোঘ প্রকৃতিতে মিশতে। হাতে আধা বেলা সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন পূর্বাচলের বালু নদের পাড়ে।
তেরো শত নদীর এ দেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে নদীগুলো। এসব নদ-নদীর মোহ জাগানো রুপের টানে অনেকেই ছুটে যান বারবার। তার উপর কর্কষ শহরের বিরক্তিকর জীবনে আরেকটু আয়েশ দিতে পারে নদীর সৌন্দর্য। ইট-পাথরের শহরে রাজধানীবাসীর নাগালে প্রকৃতি খুব কমই রুপ ছড়ায় বিধায় এখানকার মানুষজন প্রকৃতির কিঞ্চিৎ ছোঁয়া পেলেই আপ্লুত হয়ে পড়েন। প্রকৃতির অনাদরে পড়ে থাকা বালু নদ ও এর আশপাশের এলাকা আকর্ষণ করছে প্রকৃতি প্রেমীদের।
প্রকৃতিতে মিশতে এখানে আসুন
রাজধানীবাসীর কিছুটা স্বস্তির স্থান হতে পারে একমাত্র বৃক্ষশোভিত স্থান কিংবা ঢেউয়ের দোলায় দোদুল্যমান এই নদী। মনে বাড়তি রস জাগ্রত করতে যাপিত জীবনের উপর যদি কিছুটা প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব আনা যায় তাহলে তো সোনায় সোহাগা। কেবল বালু নদ নয়, নদের আশপাশ কিংবা পুরো পূর্বাচল এলাকার একটা কোনে বসে আপনি কাটিয়ে দিতে পারেন বিরক্তিকর দুপুর কিংবা স্নিগ্ধতার বিকেল। শহরের ইট কংক্রিটের আধিপত্য থেকে অল্প কয়েক কিলোমিটার উত্তরে বেড়েছে গ্রামীণ জনপদের আধিপত্য। সেখানে গেলে আপনি নদীর সঙ্গে মিশে স্বপ্ন বুনতে পারবেন নিরলস।
ট্রলার কিংবা নৌকায় চড়ে কিছুক্ষণ ঘুরতে পারবেন। কখনো দেখবেন জেলেদের মাছ ধরার নিয়মতান্ত্রিকতা, কিংবা নদের পাড়ের নরম মাটিতে ঢেবে যাওয়া পায়ে ভর এগিয়ে যেতেই পায়ের নিচে টের পাবেন নদের ছোট মাছদের প্রাণ বাঁচানোর তাগিদ। এখনাকার মধ্যবিত্ত কিংবা নিম্নবর্গের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ক্ষণিকের জন্য মিশেও যেতে পারেন আপনি। নদী পারাপারের মাঝিদের কায়িকশ্রম, জেলেদের মাছ ধরতে ধরতে ক্লান্ত হওয়া ঘর্মাক্ত দেহ, কিংবা এখানকার ছোট বড় কাঁচা দোকান-পাটের ব্যসায়ীদের বেঁচে থাকার লড়াই এবং জীবিকার তাগিদে গ্রামীণ নারীদের পরিশ্রমের চিত্র। এসব দৃশ্য আপনাকে চমকেই নিয়ে যেতে পারে আবহমান বাংলার মানুষদের চরিত্রে।
কী খাবেন?
এখানে ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি নানা রকম খাবারের স্বাদ নিতে পারবেন। নীলা মার্কেট মিষ্টান্নের স্বর্গ। এখানে পাবেন স্পঞ্জ মিষ্টি, ছানা মিষ্টি, ছানা জিলাপি, বড় সাইজের বালিশ মিষ্টি, ছোট সাইজের বালিশ মিষ্টি, হরেক রকমের সন্দেশ, দই, দধিসহ প্রায় ১৫ প্রজাতির মিষ্টান্ন। মিষ্টি খেয়েই নেমে পড়ুন নদীর দিকে। একটু সামনে হেঁটে যেয়ে বাঁ দিকে তাকালেই চোখে পড়বে বালু নদের শান্ত রুপ। সামনে পা বাড়াতে বাড়াতে নদী যতই মন্ত্রমুগ্ধ করবে, তার সঙ্গে সঙ্গে মুগ্ধ করবে এখানকার বাহারী খাবারের দোকানগুলো। নদীর পাড়ে সারি সারি খাবারের দোকান। নদীর পাড়কে ঘিরেই তাদের যতসব বাহার।
নদীর উঁচু পাড়ের উপর সারি সারি চেয়ার বিছিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। নদী দেখা আর পায়ের উপর পা রেখে চা খেতে এই জায়গার জুড়ি নেই। এখানকার একটি আকর্ষণীয় দিক হলো হাঁসের মাংস। একটু সামনে গেলেই চোখে পড়বে নারীরা উনুনে কেউ মাংস ভুনা করছেন, কেউ সাজিয়ে রেখেছেন রান্না করা লোভনীয় মাংস। প্রতিপ্লেট দুশো টাকা দরে বিক্রি হয় এই মাংস। প্রতি প্লেটে চার থেকে পাঁচ টুকরো হাঁসের মাংস পাওয়া যায়। সঙ্গে বিভিন্ন পিঠা কিংবা সাদা ভাতের ও ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন গ্রামীণ ফলফলাদি ও হকারদের দেখা যায় হরেক রকমের খাবার বিক্রি করতে।
ঢাকা,গাজীপুর আর নারায়নগঞ্জকে স্পর্শকরা এই বালু নদের মূল প্রবাহ শীতলক্ষ্যা নদীতে। তুরাগ নদী কিংবা সুতি নদীর সঙ্গেও রয়েছে এই নদের যোগসূত্র। ঢাকা শহরের নিকটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আঁধার এই নদ। নদীর দু'পাশের গাছ-গাছালি, গ্রামীণ পরিবেশ যে কাউকেই মুগ্ধ করতে বাধ্য। তাই স্বস্তির খোঁজে এখানে আসলে লোকসানের ঝুঁকি নেই।
কীভাবে যাবেন?
কুড়িল চৌরাস্তা থেকে নারায়ণগঞ্জমুখী বিআরটিসি বাসে চড়ে বালু ব্রিজ নামবেন। সেখান থেকে রাস্তা পার হয়ে হেঁটে বা রিক্সা নিয়ে চলে যান নীলা মার্কেট। যারা সায়দাবাদ থেকে আসবেন তারা বলাকা, গাজীপুর পরিবহন, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন ইত্যাদি বাসে ছড়ে কুড়িল বিশ্বরোড নেমে চৌরাস্তা থেকে বিআরটিসি ধরবেন। এছাড়াও উত্তরা কিংবা আব্দুল্লাহপুর হয়ে যারা আসতে চান তাদের জন্য সুবিধাজন রুট হলো-খিলক্ষেত কাঁচা বাজার থেকে ব্যাটারীচালিত রিক্সা বা অটোতে উঠে সরাসরি নীলা মার্কেট(পূর্বাচল) ৷ অন্যদিকে গাবতলী থেকে বসুমতি পরিবহন, প্রজাপতি কিংবা পরিস্থান (এ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল এসে বাস গুলো ধরতে হবে) পরিবহনে চড়ে কুড়িল বিশ্বরোড নেমে পড়বেন। তারপর রাস্তা পার হয়ে নীলা মার্কেটের বাস ধরুন।
কেএসকে/এমএস