বরেন্দ্র জাদুঘরে যা আছে দেখার

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২২ পিএম, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

এস আলী দূর্জয়

হাজার বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যের সাক্ষী হয়ে রাজশাহী নগরীর প্রাণকেন্দ্র হেতমখাঁয় দাঁড়িয়ে আছে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা এ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বরেন্দ্র অঞ্চলের পাল, সেন, মৌর্য ও গুপ্ত আমলসহ হাজার হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, নাটোরের দিঘাপতিয়ার রাজপরিবারের বিদ্যোৎসাহী জমিদার কুমার শরৎকুমার রায়, খ্যাতনামা আইনজীবী ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয় ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক রমাপ্রসাদ চন্দ্রের প্রচেষ্টায় ১৯১০ সালে এ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেশের প্রথম এ জাদুঘরের সংগ্রহের আছে হাজার বছর আগের সিন্ধু সভ্যতার নিদর্শন। আছে মহেঞ্জোদারো সভ্যতা থেকে সংগৃহীত প্রত্নতত্ত্ব, পাথরের মূর্তি, খিষ্টীয় একাদশ শতকে নির্মিত বৌদ্ধমূর্তি, ভৈরবের মাথা, গঙ্গামূর্তিসহ অসংখ্য মূর্তি।

jagonews24

এছাড়া মুঘল আমলের রৌপ্যমুদ্রা, গুপ্ত সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের গোলাকার স্বর্ণমুদ্রা, সম্রাট শাহজাহানের গোলাকার রৌপ্যমুদ্রার নিদর্শন চোখে পড়বে এই জাদুঘরে।

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমৃদ্ধ জাদুঘরটিতে আরও আছে প্রায় ৫ হাজার পুঁথি, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৬টি সংস্কৃত আর বাকিগুলো বাংলায় রচিত।

পাল যুগ থেকে মুসলিম যুগ পর্যন্ত সময় পরিধিতে অঙ্কিত চিত্রকর্ম, নূরজাহানের বাবা ইমাদ উদ দৌলার অঙ্কিত চিত্রের দেখাও পাবেন সেখানে। এই জাদুঘরে ১২ হাজার গ্রন্থ সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থশালাও আছে।

jagonews24

জাদুঘরটিকে ৭টি প্রদর্শন কোষ্ঠে ভাগ প্রথম করা হয়েছে। প্রদর্শন কোষ্ঠে নওগাঁর পাহাড়পুর থেকে উদ্ধারকৃত ২৫৬টি ঐতিহাসিক সামগ্রী রয়েছে। দ্বিতীয় প্রদর্শন কোষ্ঠে আছে হিন্দু ও বৌদ্ধদের তৈরি কাঠ ও পাথরের নানা ভাস্কর্য।

তৃতীয় ও চতুর্থ প্রদর্শন কোষ্ঠে আছে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। পঞ্চম প্রদর্শন কোষ্ঠে আছে বৌদ্ধমূর্তি। ষষ্ঠ প্রদর্শন কোষ্ঠে আছে বিভিন্ন ভাষায় লিখিত পাথরের খণ্ড। সপ্তম প্রদর্শন কোষ্ঠে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর নিদর্শনসমূহ।

কালের পরিবর্তনে গ্রাম থেকে শহরে রূপান্তর হচ্ছে আবহমান গ্রাম বাংলার প্রকৃতি। আর গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে আছে আবহমান বাংলা গ্যালারি।

jagonews24

এ গ্যালারিতে আছে বাঙালি জাতির ব্যবহার্য জিনিসপত্র, প্রাচীন গহনা, দেশি বাদ্যযন্ত্র, আনুষ্ঠানিক মৃৎপাত্র, উপজাতিদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র। কিশলয় বেষ্টিত নদীমাতৃক বাংলার নৌকার মডেল, অস্ত্রের সূর্য নরম সোনালি রোদ ছড়িয়ে জন্মভূমিকে করেছে অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র।

প্রাচীনতম এই জাদুঘর বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) পরিচালনা করে। শুধু সংগ্রহশালা হিসেবেই নয় বরং প্রাচীন ইতিহাস গবেষণায় অবদান রেখে চলেছে।

প্রতি বছর দেশি-বিদেশি গবেষক, শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসেন ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন উপভোগ করতে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ, রাজশাহী কলেজ।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।