ভারতের রাস্তা শেষ হয়েছে যেখানে!

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:২৩ পিএম, ১২ আগস্ট ২০২২

ভারতে এমন অনেক রহস্যময় স্থান আছে, যা অনেকেরই অজানা। তেমনই একটি স্থান তামিলনাড়ুর পূর্ব উপকূলে রামেশ্বরম দ্বীপের তীরে অবস্থিত। এই স্থানটি ভারতের শেষ প্রান্ত বলেও পরিচিত।

এমনকি সেখানকার রাস্তাও ভারতের শেষ রাস্তা হিসেবে বিবেচিত। ভারতের এই শেষ প্রান্তে গেলে আপনি স্পষ্টভাবে শ্রীলঙ্কা দেখতে পাবেন।

বলছি ভারতের ধানুশকোডি শহরে কথা। ধানুশকোডি তামিলনাড়ুর পামবান দ্বীপের (রামেশ্বরম দ্বীপ) দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। ধানুশকোডি একটি রহস্যে ঘেরা জায়গা সেখানে পৌঁছানো মানুষের পক্ষে বেশ কঠিন।

এই শহরে পৌঁছাতে মূল ভূ-খণ্ড থেকে পামবান দ্বীপ অতিক্রম করতে হয়। বেশ কয়েকটি মাছ ধরার গ্রাম থেকে ধানুশকোডির যাত্রা শুরু হয়। ধানুশকোডি হলো ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র সীমান্ত, যা পাল্ক প্রণালীতে বালির স্তূপের উপর বিদ্যমান।

১৯৬৪ সালের ডিসেম্বরে ধানুশকোডিতে প্রবল ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল। ফলে শহরটি বিধ্বস্ত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড়ে প্রা ১৮০০ জন নিহত হয় ও ১০০ জন যাত্রী বহনকারী ট্রেন ডুবে যায়। এরপর থেকে সরকার শহরটিকে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী ঘোষণা করে। ফলে স্থানটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।

তবে এখন দ্বীপটিতে প্রায় ৫০০ জেলে ৫০টি কুঁড়ে ঘরে বসবাস করেন। জীবিকা নির্বাহের জন্যই তারা ধনুশকোডিতে থাকেন। ধানুশকোডিকে এখন ভূতের শহরও বলা হয়।

দিনের বেলায় সেখানে লোকজন চলাফেরা করলেও রাতের বেলা কেউই সেখানে যান না। ধনুশকোডি থেকে রামেশ্বরমের দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ধনুশকোডিতেই নাকি হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ভগবান রাম ও তার সেনাবাহিনী রাবণের লঙ্কা শহরে প্রবেশের জন্য রাম সেতু তৈরি করেছিলেন। ভারতের রামেশ্বরম দ্বীপের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের সংযোগকারী এই সেতুটি অ্যাডামস ব্রিজ নামেও পরিচিত।

এই মুহুর্তে ধনুশকোডি ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একটি সুন্দর বালুকাময় উপকূল দেখা যায়। নাসার সাম্প্রতিক ছবিতে এই দৃশ্য ধরা পড়েছে সম্প্রতিই।

মহাকাব্য অনুসারে, ভগবান রাম তার স্ত্রীকে লঙ্কা থেকে উদ্ধার করে তার ধনুকের ডগা দিয়ে সেতুটি ধ্বংস করেছিলেন। এ কারণেই শহরের নাম হয় ‘ধানুশকোডি’। যার অর্থ ধনুকের শেষ।

সত্যিই কি এটি ভারতের শেষ রাস্তা? ধানুশকোডি ভারতের শেষ ভূমি হিসেবে পরিচিত। সেখানে এমন একটি রাস্তা আছে, যাকে ভারতের শেষ রাস্তা বলা হয়। এই রাস্তা ধরে শ্রীলঙ্কা থেকে ধনুশকোডির দুরত্ব মাত্র ৩১ কিলোমিটার। রাস্তাটি থেকে স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান শ্রীলঙ্কা।

এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্থানের তকমাও পেয়েছে ধানুশকোডি। এটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে একমাত্র স্থল সীমানা, যা পাক প্রণালীতে বালির টিলায় বিদ্যমান। স্থানটির দৈর্ঘ্য মাত্র ৫০ গজ। এ কারণেই এটি বিশ্বের ক্ষুদ্রতম স্থানগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত।

প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের মর্মান্তিক ঘটনার পর পার হয়েছে ৫৮ বছরেরও বেশি সময়। বর্তমানে শহরটি ধীরে ধীরে জীবিত হয়ে উঠছে। এমনকি ভ্রমণের অফবিট গন্তব্য হিসেবেও অনেকেই বেছে নিচ্ছেন স্থানটি।

সেখানকার নির্মলতা, নীল সমুদ্র, সাদা বালি ও এর বালুকাময় উপকূলরেখার ধ্বংসাবশেষ ভ্রমণকারীদের আকষ্ট করে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতে একটি বা দুটি ছোট হাট ও ছোট চায়ের স্টলও আছে। ভারতের শেষ রাস্তা ও বিশ্বের ক্ষুদ্র স্থান দেখতে ঘুরে আসুন ধানুশকোডিতে।

সূত্র: প্রেসওয়ার১৮.কম

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।