দেশে দেশে উদ্ভট যত যানবাহন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৭ পিএম, ২৬ জুলাই ২০২২

সাইফুর রহমান তুহিন

এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়ার জন্য নানা ধরনের যানবাহন আছে। যার মধ্যে অন্যতম হলো প্রাইভেট কার বা মাইক্রো, বাস, ট্রেন, বিমান, মোটরসাইকেল, রিকশা, সাইকেলসহ বিভিন্ন মোটরচালিত যানবাহন। এসবই আমাদের চেনা যানবাহনগুলোর মধ্যে অন্যতম। তবে সারাবিশ্বে এমন সব উদ্ভট যানবাহন আছে, যা দেখলে আপনি বিস্মিত হয়ে যাবেন।

কোনো দেশের মানুষ গণপরিবহণ হিসেবে ব্যবহার করেন বাঁশের ট্রেন, কেউ আবার ল্যান্ড রোভারকে ব্যবহার করেন ট্যাক্সি হিসেবে। কেউ খোলামেলা কোকোট্যাক্সি আবার কেউ নৌকায় হিসেবে বিশালাকার ঝুঁড়িতে পানিতে ভাসেন। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন দেশের উদ্ভট সব যানবাহন সম্পর্কে-

jagonews24

কোকোট্যাক্সি, কিউবা

নব্বইয়ের দশকে গোটা বিশ্বজুড়ে অনেক ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে আছে শীতল যুদ্ধের অবসান (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবার ফলে)। একটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তখন কিউবাতেও অনেক কিছুই ঘটেছে। ওই সময় সেখানে আবির্ভাব ঘটেছিলো কোকোট্যাক্সির।

অটোরিকশার মায়াবী এক রূপ হলো এই ককোট্যাক্সি। নব্বইয়ের দশকে কিউবায় বেড়াতে যাওয়া পর্যটকদের খুবই পছন্দ ছিলো। এখনো কিউবার রাস্তায় আছে এর উপস্থিতি। একটি কোকোট্যাক্সিতে চড়ে রাজধানী হাভানা শহরটি দ্রুত সময়েই ঘুরে দেখা যায়।

বাহনটির নাম কেনো কোকোট্যাক্সি? এই নাম নাকি এসেছে কোকোনাট অর্থাৎ নারকেল থেকে। এটি দেখতেও অনেকটা নারকেলের অর্ধাংশের মতো।

jagonews24

নরি, কম্বোডিয়া

কম্বোডিয়া ভ্রমণে আপনার জন্য সবচেয়ে মজার অভিজ্ঞতার মধ্যে একটি হবে নরি অর্থাৎ বাঁশের ট্রেন। অতীতে এটিই নাকি ছিল সেখানকার যোগাযোগের একটি সক্রিয় মাধ্যম। তবে এখন পর্যটক আকর্ষণ হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়। বাতামবাং নামক স্থানে এই বাঁশের ট্রেন চড়া যাবে।

এই ট্রেনের গতি কিন্তু আপনার পায়ে হাঁটার গতির চেয়ে বেশি নয়। তবে যদি আপনি বসে বসে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছাতে পারেন তাহলে আর হাঁটার দরকার কী? কম্বোডিয়া ভ্রমণকালে খুবই মজার একটি অভিজ্ঞতা হচ্ছে এই নরি। ট্রেনটি হচ্ছে চাকার ঠিক ওপরে বাঁশের তৈরি একটি কাঠামোমাত্র।

jagonews24

পার্টি বাইক, নেদারল্যান্ডস

পার্টি বাইকে চড়ে আপনি একাধিক পানীয়ের স্বাদ উপভোগ করার পাশাপাশি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে পুরো শহর ঘুরে বেড়াতে পারবেন। পার্টি বাইক নেদারল্যান্ডেই প্রথম চালু হয়। এরপর বিশ্বের অন্যান্য স্থান যেমন-বাহামাস, জার্মানি, নিউজিল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

jagonews24

সিরিজ-আইল্যান্ড রোভারস, দার্জিলিং, ভারত

ল্যান্ড রোভারকে ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখেছেন কখনো? মানেভানজিইয়াং-সান্দাকফু এলাকা যখন ভ্রমণ করবেন তখন দেখবেন ঐতিহাসিক ল্যান্ড রোভারগুলো দুর্গম ভূ-খণ্ডের ওপর দিয়ে এখনো চলছে অনেকটা আয়েশি ভঙ্গিতেই।

বিংশ শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে ব্রিটিশ চা-বাগান মালিকরা ল্যান্ড রোভারের প্রথম মডেলটি ভারতবর্ষে চালু করেন। তারা মানুষকে বুঝাতে পেরেছিলেন যে, এই বাহনগুলো স্থানীয় বাহনের তুলনায় দার্জিলিংয়ের আাঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তার জন্য তুলনামূলক বেশি নির্ভরযোগ্য।

ব্রিটিশরা তো উপমহাদেশ থেকে চলে গেছে অনেক আগেই কিন্তু রয়ে গেছে সেই আলোচিত ল্যান্ড রোভারগুলো। আর এরকম আইকনিক বাহন এখন ভারতে খুব কমই আছে।

jagonews24

হর্স অ্যান্ড বাগি রাইডস, যুক্তরাষ্ট্র

সার্কিন অ্যামিশ সম্প্রদায় বিশ্বাস করে খুব সাদামাটা ও আড়ম্বড়হীন জীবনযাপনে। তাদের জীবন বাকি বিশ্ববাসীর থেকে আলাদা। আর এ কারণেই আশেপাশে অটোমোবাইলের ছড়াছড়ি সত্ত্বেও তাদের পছন্দের পরিবহন মাধ্যম এখন পর্যন্ত হর্স অ্যান্ড বাগি রাইডস।

অ্যামিশদের এই জীবনযাপনের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ মিলবে পেনসিলভেনিয়া, ওহিও ও ইন্ডিয়ানার মতো জায়গাগুলোতে।

jagonews24

মকোরো, বোতসোয়ানা

বোতসোয়ায়ানা ভ্রমণে যদি আপনার সফরসূচিতে ওকোভাঙ্গো ডেল্টা ওয়াইল্ডলাইফ পার্ক থাকে তাহলে আপনি মকোরো বোটে চড়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। গাছের গুঁড়ি কেটে বানানো মকোরোগুলো ক্যানোস ডিজাইনে তৈরি।

যদি আপনি প্রত্যন্ত এলাকা ডেল্টার সৌন্দর্য আবিষ্কার করতে চান তাহলে বিশ্বের সর্ববৃহৎ আভ্যন্তরীণ জলাভূমি ডেল্টায় যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো মকোরো।

jagonews24

করাকল

দক্ষিণ ভারতীয় ভ্রমণ গন্তব্য হাম্পি, হগেনাক্কাল, কইম্বাটোর প্রভৃতি জায়গা ভ্রমণ করলে আপনি বিপুল পরিমাণ ঐতিহ্যবাহী গোলাকৃতি বাস্কেট বোট দেখতে পাবেন। তবে হাজার হাজার বছর ধরে বিশ্বের সর্বত্র বিভিন্ন স্থানে এই আদিম বোটটি দেখা যায়।

এমনকি বর্তমান আধুনিক যুগেও ঐতিহ্যবাহী এই বাস্কেট বোট ব্যবহৃত হয় ওয়েলস, আয়ারল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া ও ভারতে।

লেখক: ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ও ভ্রমণ লেখক।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।