১৮০০ টাকায় ঘুরে আসুন হামহাম জলপ্রপাতে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০০ পিএম, ২৪ জুন ২০২২

নোমান হাসান

অনেকদিন ধরেই ঘুরতে যাওয়া হয় না। কোথায় যাওয়া যায়? এই ভাবতে ভাবতে ঠিক হলো হামহাম যাব। শরীরের সব রস আশা করি বেরিয়ে যাবে। বুনো সৌন্দর্যের অসাধারণ হামহামও দেখা হবে।

প্রথমে ট্রেনে যাওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে পরে বাসেই রওনা হই। সায়েদাবাদ থেকে ৪৫০ টাকা টিকিটে রাত সাড়ে বারোটায় শ্যামলীর বাসে শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। ভোর ৫টায় পৌঁছে গেলাম শ্রীমঙ্গল।শ্রীমঙ্গল জামে মসজিদে ফজরের কাজা নামাজটা পড়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে সকালের নাস্তা সেরে চড়ে বসলাম সিএনজিতে। গন্তব্য কলাবন পাড়া। আপ-ডাউন ভাড়া ঠিক করলাম ১৩০০ টাকা।

jagonews24

শ্রীমঙ্গল শহর পেরোতেই প্রকৃতির মুগ্ধকর সৌন্দর্যের দেখা পেলাম। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি চা বাগান, চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের বুক চিরে ঐতিহাসিক নূরজাহান টি-এস্টেটের ভেতর দিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি! সে এক অসাধারণ দৃশ্য! না দেখলে কেউ এই সৌন্দর্য বুঝতে পারবে না।

২ ঘণ্টায় পৌঁছলাম কলাবনপাড়া। গাইড নিয়ে নিলাম ৫০০ টাকায়। আমরা চারজন ও গাইড-ড্রাইভার ২ জন মোট ৬জন আনু ভাইয়ের টঙে ৬০০ টাকায় খাবারের অর্ডার করে বেরিয়ে পড়লাম হামহামের জঙ্গলে।

jagonews24

শুরু হলো জঙ্গল। বাঁশের জঙ্গল। ভেবেছিলাম খুব ঘন জঙ্গল হবে ও নানা প্রজাতির গাছ থাকবে। তবে হতাশ হলাম, কারণ শুধু বাঁশ ছাড়া বোধহয় কয়েকশ কিলোমিটারের মধ্যে আর কিছু নেই! আমরা উঁচু-নিচু পাহাড়ি জঙ্গলে বাঁশবনের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলাম।

তবে ভাগ্য ভালো থাকায় সেদিন সারাদিন বৃষ্টি ছিল না। তবুও জঙ্গলের পথ অনেকটা পিচ্ছিল। বিশেষ করে ঝিরিপথে নামার আগে ৫০০ মিটারের একটা পাহাড় থেকে খাড়া নামতে হয়, সেটা বেশ বিপজ্জনক। অনেকেই ভয় পান জোঁকের। তবে আমাদের একজনও জোঁকের খপ্পরে পড়েননি।

jagonews24

ঝিরিপথ পেরিয়ে যখন হাম হাম ঝরনায় পৌঁছালাম, তখন সব ক্লান্তি মুছে গেল। সত্যি অসাধারণ। পথে বেশি হাঁটতে হয় বলেই কষ্টটা বেশি। তবে ঝরনার সৌন্দর্য দেখার পর সব ক্লান্তি উবে যাবে। কী এক বুনো সৌন্দর্যের হামহাম! চোখ ও মন সহজেই জুড়াবে হামহামে গেলে।

অনেকে ভয় দেখায় হামহাম নিয়ে। ভয়ের কিচ্ছু নেই। একটু বেশি হাঁটতে হয় শুধু। সঙ্গে স্যালাইন আর শুকনো খাবার নিলে হাঁটার কষ্টও গায়ে লাগবে না। তবে হ্যাঁ বোতল ও প্যাকেট নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলবেন।

jagonews24

আমাদের গাইড ছিলেন সাইফুল ভাই। অমায়িক একজন মানুষ। সবচেয়ে মজার বিষয় হলো, হামহামের বিশাল জঙ্গলে তিনি ফ্রেশ পানির দুটি উৎসের সন্ধান জানেন, পানি ফুরিয়ে গেলে যা আপনার তৃষ্ণা মেটাবে। সেখানে গেলে চাইলে তাকে ফোন করতে পারেন (মোবাইল নম্বর ০১৭৪৫৬৯৬৬২৮)।

ফেরার পথে সময় পেলে মাধবপুর লেক ও লাউয়াছড়া বন ঘুরে আসতে পারেন। বাড়তি খরচ লাগবে না। সিএনজিওয়ালাই ঘুরিয়ে দেখাবে। লাউয়াছড়ার পাহাড়ি পথ বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুন্দর পথ, আর যদি আমাদের মতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পেয়ে যান, তাহলে জীবন ধন্য।

jagonews24

হামহামের খরচ খুব বেশি না, যেহেতু থাকতে হয় না। আমাদের ঢাকা ফেরা পর্যন্ত টোটাল খরচ গেছে পার পারসন ১৮০০ টাকা। নারীদের জন্যও হামহাম নিরাপদ। তবে দল বেঁধে যাওয়াই উত্তম।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।