ঝরনার রানি ‘খৈয়াছড়া’ দেখতে কখন যাবেন?

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০১:৫৪ পিএম, ১২ জুন ২০২২

অনুপম নৈসর্গিক দৃশ্য। দু’পাশে সুউচ্চ পাথুরে পাহাড়। উচুঁ পাহাড় থেকে কলকল ধ্বনিতে গড়িয়ে পড়ছে শীতল পানি। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র এ পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে। অঝোরে পাহাড়ের এ ‘কান্না’ যে কারও মনে নাড়া দেবে। যেনো একটু ছুঁয়ে হাত বুলিয়ে যাই!

আর ঝরনা বা জলপ্রপাতের কলকল শব্দও মনে আশ্চর্য শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবে। বর্ষায় ঝরনার আকর্ষণ অন্য সময়ের তুলনায় বাড়তি থাকে। তাই পর্যটকদেরও ঢল নামে। বিশেষ করে ছুটির দিনে ৪/৫ হাজার পর্যটক আসে বলে হিসেব দিয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নুর উদ্দিন।

আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে বেশ বড় এই ঝরনা। এর মোট ৯টি মূল ধাপ ও অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ আছে। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষ।

jagonews24

অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙিয়ে অবস্থান করেন। প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানী রূপের আগুন ঝরায়। যেখানে প্রকৃতি খেলা করে আপন মনে।

ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝরনাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তোলে। খৈয়াছড়ায় আছে অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ, যা বাংলাদেশের আর কোনো ঝরনাতে এখনো পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাই খৈয়াছড়াকে বলা হয় বাংলাদেশের ঝরনার রানি।

মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়েই দেখা মিলবে বিস্ময়কর ঝরনা। খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝরনা। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝরনার অবস্থান।

jagonews24

এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ি পথ, ছড়া, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে যখন ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে গা ভিজাবে পর্যটক, তখন মনে হবে পথের এই দুরত্ব খুব সামান্য। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।

স্থানীদের বাড়ি ও ক্ষেতের আইলের পাশে বেড়ে ওঠা আম, নারকেল আর পেঁপের বাগান পেরিয়ে এরপর শুধু ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িংয়ের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পাওয়া যায় পানি কলকল ধ্বনি।

চারপাশে মন ভালো করে দেওয়া সবুজ দোল খাচ্ছে ফড়িংয়ের পাখায়। মাঝে মাঝে এখানে শোনা যায় হরিণের ডাক। যেতে যেতে পরিচয় হবে বুনো অর্কিড, পাথরে লেগে থাকা প্রায় অদৃশ্য সবুজ শেওলা, অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। কিছুদূর হেঁটে একটা মোড় ঘুরলেই চোখের সামনে নিজের বিশালতা নিয়ে হাজির হবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। অনেক ওপর থেকে একটানা পানি পড়ছে।

jagonews24

ওপরের ওঠার পর তার সৌন্দর্য আপনার সমস্ত কষ্ট ভুলিয়ে দিবে। ওপরে উঠলে দেখা মিলবে আরো একটি ধাপের। এর বাম পাশ দিয়ে সামান্য হাঁটলেই দেখা মিলবে অপর তিনটি ধাপের। এতেও যদি আপনার মন না ভরে তাহলে এই তিনটি ধাপের পাশ দিয়ে পাহাড় বেয়ে উঠে যান আরো ওপরে।

সেখানে আশপাশের বহুদূর বিস্তত পাহাড় আর জঙ্গলের অপূর্ব দৃশ্য কিছুক্ষণের জন্য হলেও আপনাকে ভুলিয়ে দেবে আপনার পরিশ্রম আর নিরাপদে নিচে ফিরে যাওয়ার ভাবনার কথা। ঝরনায় যাওয়ার সড়কটি দারুন মনোমুগ্ধকর। গাড়ির রাস্তা পার হয়ে যখন হাঁটা শুরু করবেন এর চারপাশের দৃশ্য দেখে আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য হবেন। খানিকক্ষণ উঁচু-নিচু রাস্তা পার হয়ে একসময় এসে পড়বেন পাহাড়ি ঝিরিপথে।

এরপরই শুরু হবে আপনার আসল অ্যাডভেঞ্চার। আপনাকে ঝিরিপথ ধরেই এগিয়ে যেতে হবে। কখনো হাঁটুপানিতে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটবেন তো সেই পানিই কখনো কখনো আপনার কোমর ছাড়িয়ে বুক পর্যন্ত উঠে আসবে। আনুমানিক দেড় ঘণ্টার মতো হাটার পর আপনি ঝরনার কাছে পৌঁছে যাবেন।

jagonews24

এরপর যখন খৈয়াছড়ার দর্শন পাবেন, তখন বিস্ময়ে অভিভূত হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকবে না। এই ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব না। সুতরাং দেরি না করে নেমে পড়ুন ঠান্ডা ঝরনার পানিতে। ঝরনার বাম দিক থেকে ডানদিক অপেক্ষাকৃত গভীর।

কীভাবে যাবেন খৈয়াছড়া ঝরনায়?

ঢাকার যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিরসরাই পৌরসদর পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন।

ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে সোহাগ পরিবহন, গ্রীণ লাইন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, টি আর ট্রাভেলসের বাস যায় চট্টগ্রাম। এছাড়া শ্যামলী, হানিফ, সৌদিয়া, ইউনিক, এস আলম ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে।

কোথায় থাাকবেন?

বড়তাকিয়া বাজারে থাকার কোনো হোটেল নেই। তবে আপনি চাইলে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বাংলোয় উঠতে পারেন। মিরসরাই-সীতাকুন্ডে খুব বেশি ভালো থাকা ও খাবার হোটেল না থাকলেও চট্টগ্রাম শহরের শুরুতে একেখান মোড়ে থাকার জন্য রয়েছে ‘মায়ামি রিসোর্ট’।

খাবারের জন্য মিরসরাই সদরের পার্ক ইন রেস্টুরেন্ট, আলিফ রেস্টুরেন্ট ও ছোট কমলদহ এলাকায় বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেল আছে।

বিশেষ সতর্কতা-

ঝরনায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম ও পাথরের স্থান পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে।

মনে রাখবেন অব্যবহৃত খাবার, চিপসের প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার, পানির বোতলসহ অন্যান্য আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না। জোঁক ছাড়ানোর জন্য সঙ্গে লবণ বা গুল রাখবেন। জোঁক কামড়ালে হাত দিয়ে টেনে ছাড়াতে যাবেন না, লবণ বা গুল ছিটিয়ে দিলেই হবে।

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।