দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

সিরাজুজ্জামান
সিরাজুজ্জামান সিরাজুজ্জামান , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক দুবাই থেকে ফিরে
প্রকাশিত: ১২:৫৮ পিএম, ০৯ জুন ২০২২

ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরীফে বর্ণিত অনেক ঘটনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে দুবাইয়ের মনোরম ও সাংস্কৃতিক গন্তব্য কোরআনিক পার্কে। এটি দুবাইয়ের অন্যতম সেরা এক দর্শনীয় স্থান। এখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠাকালীন বিভিন্ন ঘটনার পাশাপাশি কোরআনে বর্ণিত বিভিন্ন গাছপালা, ঘর-বাড়ি, গুহা ইত্যাদির নিদর্শন আছে।

মরুভূমির বুকে ও গরমের তীব্র রোদের মধ্যে যাতে গাছগুলো বেঁচে থাকে সেজন্য কঠোর পরিশ্রম ও টাকা ব্যয় করছে সে দেশের সরকার। এই পার্কে অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রবেশেও নিষেধ নেই।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

বরং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেওয়া হয়। মূলত বিশ্বের মাঝে ইসলামকে তুলে ধরার জন্যই বিশাল ও সুন্দর পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। এই পার্কে বিনামূল্যে প্রবেশ করা যায়। ছুটির দিনগুলোতে সেখানে প্রচুর দর্শনার্থী ভিড় করেন।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

২০০৯ সালে উদ্বোধনের পর থেকেই এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সেখানে আছে একটি প্রাকৃতিক লেকও। যেখানে নানা প্রজাতির মাছে আবাসস্থল। আর ডাঙ্গায় অবিরত ডেকে চলেছে ঘুঘু। আছে কবুতর, শালিকসহ নানা ধরনের পাখি।

কোরআনিক পার্কে ৪টি বিভাগ আছে- অলৌকিক গুহা, গ্রিনহাউস, লেক ও অর্চার্ডস বা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ, শস্য, মসলা ও ফুলের বাগান। আর সারি সারি খেজুর গাছ। আছে খেলার জায়গাও। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে গিয়ে কী কী দেখবেন-

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

অলৌকিক গুহা

অলৌকিক গুহা কোরআনিক পার্কের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। সেখানে প্রবেশ করতে হলে নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। জনপ্রতি ৫ দিরহাম দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন এই গুহায়। এই দর্শনীয় মনুষ্যনির্মিত গুহাতে ইন্টারেক্টিভ ডিসপ্লে আছে। এর মাধ্যমে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত ৭টি অলৌকিক ঘটনা দেখানো হয়।

সেখানে আরবি ভাষা ও ইংরেজি ভাষা ছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় তা বর্ণনা করা হয়। তা হেডফোনের মাধ্যমেও শোনা যায়। আর ঘটনা গোলো গুহার ভেতরে ডিসেপ্লেতে দেখানো হয়। পার্কে হযরত উজাইর (সা:), হযরত মুসা (আ:) ও অন্যান্যদের অলৌকিক কাজের প্রদর্শনী দেখতে পাবেন। প্রতিটি ক্লিপের পরে একটি গাইড সঠিক দিক নির্দেশ দেন।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

ফেরাউন ও তার দলবল মুসা (আ.) ও তার অনুসারীদের হত্যার উদ্দেশ্যে তাড়া করে, তখন আল্লাহ তাআলা হঠাৎ সমুদ্রের মাঝখান দিয়ে রাস্তা করে দেন। এই অলৌকিক রাস্তা দিয়ে মুসা (আ:) ও তার অনুসারীরা অনায়াসে সমুদ্র পার হয়ে যান। এটিও ফুটে তোলা হয়েছে ওই গুহায়।

এছাড়া ইউনূস (:) কীভাবে এক কেন তিমির পেটে ছিলেন ও আল্লাহ তাকে কেন ক্ষমা করে দিলেন তার বর্ণনাও তুলে ধরা হয়েছে। এরকম বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা দেখতে ও শুনতে পারবেন অলৌকিক গুহায়।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

গ্রিনহাউস বা গ্লাস হাউস

সেখানে আছে সুবিশাল ও সজ্জিত একটি গ্রিনহাউস। যাকে তারা নাম দিয়েছে গ্লাস হাউস। এটি উদ্ভিদবিদ্যা উৎসাহীদের জন্য একটি দর্শনীয় স্থান। এটি কোরআনিক পার্কের পেছনে অবস্থিত। এতে ২৯টি প্রজাতির গাছ আছে। যার প্রত্যেকটির কথা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

দ্বিতল বিশিষ্ট এই গ্রিন হাউসে প্রবেশ করলে মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সেখানে দেখবেন- জাফরান, আঙুর, কলা, গম, ভুট্টা, তুলসি, বার্লি, জলপাই গাছ, লেবু, ডালিমমহ বিভিন্ন উদ্ভিদ। গ্রিনহাউসের প্রবেশদ্বারে একটি সাইনপোস্টে সেখানকার সব গাছের উল্লেখ পাবেন।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

পবিত্র কোরআন ও হাদিস শরীফে যে সব নহরের কথা বলা হয়েছে, সেসবরও নিদর্শন আছে। এমনকি কোরআনে যেসব ঘর-গুহার উল্লেখ আছে সবগুলোরই আকৃতি দেওয়া হয়েছে এই পার্কে। সেখানে আসহাবে কাহাফ নামক গুহাতে ঢুকলেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হবে সবারই।

কোরআনিক পার্কে বিশ্রামাগার ও মানুষের প্রার্থনা করারও স্থান আছে। চাইলে সবুজ গালিচায় বসে দশনার্থীরা বিশ্রাম নিতে পারেন। সপরিবারে খাবার নিয়ে গিয়ে খান অনেকে। আর গ্রিনহাউসের বাইরে একটি ছোট খাবারের গাড়িতে স্ন্যাকস ও পানীয় পাওয়া যায়।

দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কে যা দেখলাম

কোন সময় আর কীভাবে যাবেন?

কোরআনিক পার্কে ঘুরতে যাওয়ার আদর্শ সময় শীতকাল। গরমে গেলে বিকেলে যেতে হবে। কারণ গরমে দুবাইয়ে প্রচণ্ড তাপদাহ হয়। এই পার্ক প্রতিদিনই খোলা থাকে সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। তবে রমজান মাসে এর সময়সীমা পরিবর্তিত হয়। দুবাইয়ের কোরআনিক পার্কের অবস্থান হলো আল খাওয়ানিজ এলাকায়।

এইচএস/জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।