একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:০১ পিএম, ২৪ মে ২০২২

ইসতিয়াক আহমেদ

ঢাকার আশপাশে যারা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের খোঁজ করেন, তারা একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দুই উপজেলা দোহার ও নবাবগঞ্জে। সকালে রওনা দিলেই সন্ধ্যার মধ্যেই বেশ কয়েকটি স্থান ঘুরে আসতে পারবেন। যে কোনো দিন সময় করে বেরিয়ে পড়ুন সকাল সকার।

গুলিস্তানের গোলাপ শাহ মাজারে পৌঁছেই নবাবগঞ্জগামী এন.মল্লিক, যমুনা বা দ্রুত পরিবহনে চড়তে পারেন। ওই বাসে চেপেই শুরু করে দিতে পারেন দিনের শুরু। মাত্র ৭০-৭৫ টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় ২ ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন নবাবগঞ্জ।

ঘোরাঘুরির শুরু করতে পারেন কলাকোপা হতেই। বাসের হেলপার বা সুপার ভাইজার কে বললেই নামিয়ে দেবে কলাকোপা কোকিল প্যারি হাই স্কুলের সামনেই। এরপর রাস্তা পার হয়ে স্কুলের উল্টোপাশের ডান দিকের পথ ধরে হাঁটা শুরু করলেই পাবেন ছোট্ট মন্দিরের মতো। তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে মাথাবিহীন এক মূর্তি। জানা যায়, এই মূর্তির মাথাটি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী উড়িয়ে দিয়েছিল।

মূর্তিটি মূলত কোকিল প্যারি জমিদারের বাবার মূর্তি। যাই হোক মূর্তিটি পাশ কাটিয়ে পথ ধরে যদি এগিয়ে যান তবে কিছু দূর যাবার পরেই অনেক গাছ ঘেরা একটি পুরনো প্রাসাদ দেখতে পাবেন। এটিই হলো কোকিল প্যারি জমিদার বাড়ি। যদিও সেটি বেশ পুরোনো ও জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে, তারপরেও ঘুরে দেখতে পারেন পুরো বাড়িটি।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

এই জমিদার বাড়ি এখন ব্যবহৃত হচ্ছে কোকিল প্যারি স্কুলের শিক্ষকদের আবাসস্থল হিসেবে। প্রাসাদ ঘুরেই বের হয়েই মেঠো পথ ধরে পা বাড়ালেই, কিছুদূর সামনেই আনসার ক্যাম্প ইছামতী নদী তীর।

যে বাড়িতে ২৯ আনসার ব্যাটালিয়নের বাস। অনেকেই স্থানটি তেলিবাড়ি বা মঠবাড়ি নামে চেনেন। কথায় আছে, সে বাড়ির মালিক বাবু লোকনাথ এককালে তেল বিক্রি করে ধনী হয়েছিলেন। সেজন্য বাড়িটির এমন নামকরণ।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

৩-৪টি বাড়ি নিয়ে তেলিবাড়ির বিস্তৃতি। যে বাড়িগুলো হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখতো, সেসব বাড়ি এখন দখল হয়ে যাচ্ছে। নবাবগঞ্জ যে এককালে নবাবদের আখড়া ছিল তা পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে চারপাশের প্রাচীন সব জমিদার বাড়ি আর তাদের ধ্বংসাবশেষ দেখলেই বুঝতে পাবেন।

ইছামতী নদীর ধার দিয়ে ডান পাশ ধরে পথ চলা শুরু করলে ৫-৭ মিনিট হাঁটার পরেই পেয়ে যাবেন অত্যাধুনিক নানা রাইডসহ এক জমকালো রাজবাড়ি। এটিই হলো আদনান প্যালেসে। পুরোনো রাধানাথ সাহার বাড়িটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে আদনান প্যালেস হয়ে। সুন্দর সাজানো গোছানো থিম পার্ক করার চেষ্টা এই আদনান প্যালেস ঘিরেই।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

আদনান প্যালেসে চাইলে হালকা পেট পূজো সেরে নিতে পারেন। এবার যে পথে এসেছিলেন সেই পথে না ফিরে, অন্যপথে এবার পা বাড়ান। কারণ সামনেই আছে খেলারাম দাতার মন্দির। আদনান প্যালেস হয়ে মাত্র ৬০০-৭০০ গজ দুরেই এই সুন্দর খেলারাম দাতার মন্দির।

কিংবদন্তী অনুসারে, খেলারাম দাতা ছিলেন তৎকালীন সময়ের উক্ত অঞ্চলের বিখ্যাত ডাকাত সর্দার। তিনি ইছামতি নদীতে ডাকাতি পরিচালনা করতেন। জনশ্রুতি অনুসারে, ডাকাতির ধনসম্পদ তিনি ইছামতি নদী থেকে সুড়ঙ্গপথে তার বাড়িতে নিয়ে রাখতেন ও পরবর্তীতে সেগুলো গরীবদের মাঝে দান করতেন।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

তিনি পূজা-অর্চনার জন্য একটি মন্দিরও নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি খোলারাম দাতার বিগ্রহ মন্দির নামে পরিচিত। এই মন্দিরেই এখনো আছে তার সেই সুড়ঙ্গপথ। যা মন্দির হতে ইছামতী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত বলে ধারণা করা হয়। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে তা এখনো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মন্দির দেখে মূল রাস্তায় এসে একটু সামনেই পাবেন বিখ্যাত জজ বাড়ি নামক আরেক জমিদার বাড়ি।

নবাবগঞ্জে গিয়ে আপনি যদি জজ বাড়ি ও উকিল বাড়ি (ব্রজ কুটির নামে পূর্বে পরিচিত) না দেখতে যান তবে আপনার ভ্রমন অপূর্ণই থেকে যাবে। প্রায় শত বছর পূর্বে এটি জমিদারদের বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে একজন বিচারক ব্রজ নিকেতন অধিগ্রহণ করলে ভবনটির নাম হয়ে যায় জজ বাড়ি।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

জজ বাড়ির ঠিক সামনেই বিশাল খেলার মাঠের কোণায় আছে। ১৯৪০ সালে মহাত্মা গান্ধীর আগমনের ফলে জনপ্রিয় আরেকটি জমিদার বাড়ি যেটির নতুন নাম একজন আইনজীবি অধিগ্রহণ করার ফলে হয়ে যায় উকিল বাড়ি। একসব ঘুরাঘুরি শেষে চড়ে বসতে পারেন যমুনা বা দ্রুত পরিবহন বাসে।

এবারের গন্তব্য হোক পদ্মার নদীর তীরে মৈনট ঘাটে। এটি মিনি কক্সবাজার নামেও অধিক পরিচিত। খুব বেশি প্রত্যাশা করার মতো স্থান না হলেও, সেখানে পদ্মার ইলিশ দিয়ে ভরপেট খেতে পারবেন। চাইলে নৌকা বা স্প্রিড বোটে পদ্মার চড়ে ঘুরে আসতে পারেন।

একদিনেই কালকোপা ও মৈনট ভ্রমণে যা দেখবেন

বিকেলে ফেরার পথে ঘাট হতেই পাবেন ঢাকার গুলিস্তান পর্যন্ত সরাসরি বাস যমুনা ও দ্রুত পরিবহন। আর হাতে যদি খানিকটা সময় বেঁচে থাকে তাহলে সেখান থেকে গাড়িতে না চড়ে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে এগিয়ে যেতে পারেন কার্তিকপুর বাজারে।

সে বাজারের মুসলিম সুইটসের মিষ্টি খুবই বিখ্যাত। তাদের জলশিরা নামক মিষ্টির কদর আছে। এরপর ধরতে পারেন ফিরতি পথ। বাসে কিংবা সিএনজিতে। ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা জার্নি করে ফিরে আসুন এই ইট-কাঠের জঙ্গলে।

জেএমএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।