যে ১০ দেশে আজও পৌঁছায়নি করোনা, আক্রান্ত হননি কেউই!

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২২

সারা বিশ্বে করোনার নতুন নতুন ধরন আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি। ৫ মিলিয়নেরও বেশি মৃত্যুবরণ করেছেন করোনায়।

এশিয়া থেকে ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্রাজিল পর্যন্ত মহামারি করোনা ভাইরাস আবারও ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। তবে অবাক করা বিষয় হলো, এখনো কয়েকটি দেশে পৌঁছায়নি করোনা ভাইরাস।

এমনকি সেসব দেশে একটিও করোনা রোগী মেলেনি এখনো পর্যন্ত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০২০ সালের গোড়ার দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর থেকে কিছু দেশ করোনভাইরাস মহামারি মোকাবিলা করতে পেরেছে।

সেসব দেশে কোনো কোভিড কেস মেলেনি। মূলত প্রশান্ত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপ ও সমুদ্রের সীমানাবর্তী স্থানগুলোই এখনো করোনা মহামারি থেকে নিরাপদে আছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে এমনই কয়েকটি দেশের নাম জানানো হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে এখনো এখনো কেউ করোনা আক্রান্ত হয়নি। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক সেসব দেশ সম্পর্কে-

টুভালু

এ দেশের মোট কোভিড রোগীর সংখ্যা শূন্য। নিশ্চয়ই অবাক হচ্ছেন! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপে জানা গেছে, এদেশের একজনও এখনো করোনায় আক্রান্ত হননি। হাওয়াই ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যবর্তী টুভালু তিনটি রিফ দ্বীপ ও ছয়টি প্রবালপ্রাচীর নিয়ে গঠিত।

এই দেশের সম্মিলিত এলাকা প্রায় ১০ বর্গ মাইল। জনসংখ্যা ১০ হাজারেরও বেশি। স্বাধীন এই দেশ কমনওয়েলথের সদস্য। করোনার শুরু থেকেই এ দেশ একঘরে হয়ে থেকেছে। বাইরের কোনো ব্যক্তি ঢুকেওনি আবার কেউ বেরও হননি। এরই মধ্যে এ দেশের জনগণও কোভিড টিকা ডোজ গ্রহণ করেছেন।

তুর্কমেনিস্তান

এশিয়া মহাদেশের মাঝ বরাবর এ দেশের অবস্থান। করোনার শুরু সময় থেকেই এ দেশ ছিল অত্যন্ত সচেতন। তারা নিজেদের দেশের সীমানা আটকে দিয়েছিল। দেশের নাগরিকরা যারা বিদেশ থেকে ফিরছেন, তাদের সঙ্গে থাকতে হবে কোভিড নেগেটিভ রিপোর্ট।

তবেই ফেরা যাবে দেশে। এ ছাড়াও এই দেশে টিকাকরণও চলছে জোরকদমে। দেশের ১৮ ঊর্ধ্ব সবাই এরই মধ্যেই পেয়েছেন টিকা। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস রিপোর্টের তথ্য অনুসারে, এ দেশেও করোনার কেস পাওয়া যায়নি। তবে সবাই মাস্ক পরাসহ ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখছেন।

টোঙ্গা

টোঙ্গা একটি দ্বীপপুঞ্জ। ১৭০টিরও বেশি দীপপুঞ্চ নিয়ে এর অবস্থান। এই দ্বীপপুঞ্জে মোট ৩৬টি জনবসতি আছে। উত্তর-পশ্চিমে ফিজি, উত্তরে সামোয়া ও উত্তর-পূর্বে নিউ এর প্রতিবেশী।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের মতে, দেশটি মহামারির প্রাথমিক পর্যায়ে ক্রুজ জাহাজগুলোকে সীমাবদ্ধ করে, বিমানবন্দর বন্ধ করে। এমনকি একটি জাতীয় লকডাউন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে তারা করোনভাইরাস উপকূল থেকে দূরে রেখেছে। এখনো দেশটিতে কোনো করোনা রোগী মেলেনি।

টোকেলাউ

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে ৩টি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রবাল প্রবালপ্রাচীর নিয়ে গঠিত টোকেলাউ। এটি নিউজিল্যান্ডের একটি নির্ভরশীল অঞ্চল। যদিও নিউজিল্যান্ড ও টোকেলাউ উভয় সরকারই একে একটি জাতি বলে।

৩টি প্রবাল প্রাচীরের সম্মিলিত ভূমির ক্ষেত্রফল ৪ বর্গমাইল। কোনো বিমানবন্দর না থাকায়, টোকেলাউয়ে পৌঁছানোর একমাত্র বাহন হলো জাহাজ।

প্রায় দেড় হাজার বাসিন্দার বাস সেখানে। নিজেকে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি দ্বারা সম্পূর্ণরূপে চালিত করা প্রথম জাতি টোকেলাউ। সেখানেও নেই কোনো কোভিড রোগী।

সেন্ট হেলেনা

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের একটি ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি হলো সেন্ট হেলেনা। যেটি বিশ্বের সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানগুলির মধ্যে একটি। দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে ১২০০ মাইল ও দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলরেখায় রিও ডি জেনেরিও থেকে ২৫০০ মাইল পূর্বে অবস্থিত সেন্ট হেলেনা।

সেখানে প্রায় ৪৫০০ জনগণ বসবাস করেন। ১০ মাইল বাই ৫ মাইল দ্বীপটির আয়তন। ১৫০২ সালে পর্তুগিজরা প্রথম জনবসতি গড়ে তোলে সেন্ট হেলেনাতে। সেখানেও এ পর্যন্ত পৌঁছায়নি করোনাভাইরাস।

পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জ

পিটকেয়ার্ন দ্বীপপুঞ্জ হলো ৪টি আগ্নেয়দ্বীপের সমষ্টি। যা প্রশান্ত মহাসাগরের একমাত্র ব্রিটিশ ওভারসিজ টেরিটরি গঠন করেছে। দ্বীপগুলো বিশ্বের সর্বনিম্ন জনবহুল স্থান।

সেখানকার বাসিন্দারা দ্বিজাতিগত। তারা তাহিতিয়ান বংশোদ্ভূত। যারা ১৭৯০ সালে প্রথম পিটকেয়ার্নে এসেছিলেন।

এই দীপপুঞ্জেও কোভিড-১৯ এর কোনো রিপোর্ট মেলেনি। তবে মার্কিন সরকার দ্বীপগুলোতে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার উচ্চ ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছে।

নিউ

নিউজিল্যান্ডের প্রায় ১৫০০ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত নিউ। এই দ্বীপ দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম প্রবাল দ্বীপগুলোর মধ্যে একটি। কুক দ্বীপপুঞ্জের পশ্চিমতম দ্বীপ এটি।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সহায়তার জন্য দেশটি নিউজিল্যান্ডের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে। সেখানেও একটিও কোভিড কেস নেই।

নাউরু

কিরিবাতি প্রতিবেশী দেষ নাউরু আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় ক্ষুদ্রতম দেশ। একক এই দ্বীপ মাত্র 8 বর্গমাইল। মাত্র ১০ হাজার জনসংখ্যা এ দেশে।

করোনার শুরু থেকেই এ দেশে প্রতিবেশী দেশ থেকে ভ্রমণের বিষয়ে কঠোর নিরাপত্তা অনুসরণ করা হয়েছে। ফলে এখনো করোনা পৌঁছায়নি নাউরুতে।

কিরিবাতি

৩২টি প্রবালপ্রাচীর ও একটি উত্থিত চুনাপাথরের দ্বীপ নিয়ে কিরিবাতি অবস্থান। হাওয়াই থেকে প্রায় ২০০০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত কিরিবাতি। দেশটি চারটি গোলার্ধে অবস্থিত একমাত্র দেশগুলোর মধ্যে একটি।

করোনা মোকাবিলায় এ দেশটি প্রথম দিকে ভ্রমণ বিধি-নিষেধ চালু করেছিল। কেবলমাত্র হাতেগোনা কয়েকটি এয়ারলাইন প্রত্যন্ত দেশটিতে ভ্রমণ করে।

কুক দ্বীপপুঞ্জ

১৫টি ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত কুক দ্বীপপুঞ্জ হলো একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। যা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত। নিউজিল্যান্ডের ২০০০ মাইলেরও বেশি উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই দীপপুঞ্জ।

করেনার শুরু থেকেই এ দেশে প্রবেশের সময় বাধ্যতামূলক পৃথকীকরণের মাধ্যমে ভাইরাসটিকে দূরে রাখা হয়েছে। ক্রুজ জাহাজ চলাচলেও নিরপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে দেশটি। এ কারণে সেখানেই করোনা পৌঁছায়নি। এ দেশের একজনও আক্রান্ত হয়নি।

সূত্র: ইউএস নিউজ/ ডাব্লিউএইচও

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।