শীতকালে কথা বলে না যে গ্রামের বাসিন্দারা

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১২:০৭ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০২২

কারও সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হলো কথা বলা। বাকপ্রতিবন্ধীরা ছাড়া এমন কোনো মানুষ নেই যে, কথা না বলে দিন কাটাতে পারেন। যদি কারও সঙ্গে ঝগড়া কিংবা মনোমালিন্যও হয় সেক্ষেত্রেও বড়জোর ২-৩ দিনের বেশি কথা না বলে কেউ থাকেন না। তবে এমন কি কখনো ঘটেছে যে, দিনের পর দিন একেবারেই মুখে তালা মেরে রেখেছেন?

তবে জানেন কি, এমনও অদ্ভুত গ্রাম আছে যেখানকার বাসিন্দারা শীতকাল এলেই কথা বন্ধ করে দেয়। তবে কেন, এর পেছনের রহস্য কী? আসলে তারা এ সময়কে দেবতাকে তুষ্ট করতে মৌনব্রত পালন করেন। তাই টানা ৪২ দিন কেউ কারও সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলেন না। ইশারার মাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে এ সময় তারা যোগাযোগ রাখেন।

jagonews24

ভারতের উত্তর অঞ্চলের কিছু এলাকায় এই নিয়ম পালিত হতে দেখা যায়। কিন্তু কেন? হিমাচল প্রদেশের মানালির কুল্লু জেলার ৯ গ্রামের বাসিন্দারা স্থানীয় দেবতা গৌতম ঋষিকে তুষ্ট করার জন্য মকর সংক্রান্তি (১৪ জানুয়ারি) থেকে ৪২ দিন ধরে নীরবতা পালন করেন।

প্রতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৪ তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারির ২৫ তারিখ পর্যন্ত ওই গ্রামের বাসিন্দারা কেউ কারও সঙ্গে কোনো কথা বলেন না। চুপ থাকার পাশাপাশি তারা বন্ধ থাকে কৃষিকাজও। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে দেবতা গৌতম ঋষি স্বর্গে দেবতা পরিষদে যোগদান করেন।

jagonews24

এজন্য তিনি পৃথিবীর আবাস ত্যাগ করেন ও পরবর্তী ৪২ দিন স্বর্গে থাকেন। এই সময়কালে, তিনি ধ্যান করেন। পৃথিবী থেকে আওয়াজ পেলে তিনি বিরক্ত হতে পারেন, এই বিশ্বাসেই মৌনব্রত পালন করেন গ্রামবাসীরা।

দেবতার ক্রোধ এড়াতে, কুল্লু জেলার উঝি উপত্যকার গোশাল, সোলাং, শানাগ, কোঠি, পালচান, রুয়ার, কুলং, মাঝাচ ও বুরুয়ার বাসিন্দারা প্রতিবছর এই প্রাচীন ঐতিহ্যকে কঠোরভাবে অনুসরণ করে।

jagonews24

এমনকি তারা পরবর্তী ৪২ দিনের জন্য টেলিভিশন ও রেডিও সেট বন্ধ করে রাখেন। দেবতাকে তুষ্ট করতে গ্রামবাসীরা বিনোদনের সব উৎস বন্ধ করে দেয় এ সময়।

উঝি উপত্যকার বাসিন্দা সুরেশ কুমার বলেন, ‘আমাদের দেবতার প্রতি বিশ্বাস আছে, তাই উপত্যকার মানুষ যুগ যুগ ধরে এই ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন। এ সময় আমরা রেডিও ও টেলিভিশন সেট বন্ধ করে দেই ও গ্রামের সবাই মোবাইল ফোন সাইলেন্ট মোডে রাখি।’

jagonews24

সেখানে একটি বহু প্রাচীন মন্দির আছে যেটি মকর সংক্রান্তির দিন মেঝেতে কাদা ছড়িয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর খোলা হয় ৪২ দিন পর। ঋষি গৌতম ছাড়াও বেদব্যাস ও কাঞ্চন নাগের মূর্তিও দেখা যায় মন্দিরে।

ওই সময় যদি মন্দিরের মেঝেতে কোন ফুল পড়ে থাকে তাহলে গ্রামবাসীরা তাকে শুভ সংকেত বলে মনে করেন। তবে যদি কয়লার টুকরো পড়ে থাকে তাহলে গ্রামবাসীরা কোনো দুর্ঘটনার আভাস বলে ধরে নেন।

jagonews24

তবে শীতকালে এসেব গ্রামের মানুষ কথা না বললেও হেডফোনে গান শোনেন, বেড়াতে যান, বাড়ির কাজ করেন। কোনো পর্যটককেও তারা এ সময় কথা বলার সুযোগ দেন না।

সূত্র: ট্রিবিউন ইন্ডিয়া/ইন্ডিয়া টুডে

জেএমএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।