যে কারণে পর্যটন-শিল্পে মালদ্বীপ বিশ্বে ‘নাম্বার ওয়ান’
বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে টপকে হাজারো দ্বীপবেষ্টিত দেশ মালদ্বীপ পর্যটন-শিল্পে নাম্বার ওয়ান (এক নম্বর) হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পাঁচ লাখেরও কম জনসংখ্যার এ দেশটিকে ২০২০ সালে ‘ওয়ার্ল্ড বেস্ট টুরিস্ট ডেসটিনেশন’ ঘোষণা করেছে ‘ওয়ার্ল্ড ট্যুরিজম অর্গানাইজেশন’।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকরা শান্ত ও মনোরম পরিবেশ, আদিম সমুদ্রসৈকতে নীলাভ জল ও ক্রান্তীয় প্রবাল প্রাচীর দেখতে অপার সৌন্দর্যময় এ দেশটিতে ছুটে আসেন। সম্প্রতি মালদ্বীপ সফরকালে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক কী কারণে মালদ্বীপ পর্যটন-শিল্পে বিশ্বে ‘নাম্বার ওয়ান’ হয়ে উঠেছে তার নেপথ্যের কারণ খোঁজার চেষ্টা করেছেন।
দেশটিতে সহস্রাধিক দ্বীপ রয়েছে। বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপগুলোতে পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পর্যটকবান্ধব সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে দেশটির সরকার। ‘ওয়ান আইল্যান্ড ওয়ান কটেজ’ ধারণায় ছোট বড় বিভিন্ন আকারের হোটেল ও কটেজ নির্মাণ করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের হোটেল-রেস্তোরাঁর শাখাও রয়েছে এসব কটেজে।
‘যত গুড় তত মিষ্টি’ প্রবাদের মতো বিত্তবান পর্যটকরা মালে বিমানবন্দরে নেমেই সি-প্লেনযোগে দ্বীপে ছুটে যেতে পারেন। কেউ কেউ আবার বড় জাহাজ কিংবা স্পিডবোটে করে কটেজে ছুটে যান। পর্যটন-শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়ন দেশটিকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট সবাই সম্পূর্ণ পেশাদারিত্বের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
মালদ্বীপের মোট জাতীয় আয়ের ৭০ শতাংশই পর্যটন-শিল্প থেকে আসে। জানা গেছে, দেশটিতে পর্যটন ব্যবসার সিংহভাগই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ সাফল্যের পেছনে রয়েছে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ না করা। পর্যটন-শিল্পের বিকাশে সরকার নীতিমালা তৈরি করে দিয়েছে। সেই নীতিমালার আলোকে প্রণীত শর্ত ও নিয়মকানুন বেসরকারি খাতের পর্যটন ব্যবসায়ীরা শতভাগ পূরণ করে থাকেন।
সম্প্রতি মালদ্বীপ সফররত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান বলেন, এ দেশের পর্যটন-শিল্পের বিকাশ ও উন্নয়নে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে। পর্যটন-শিল্পের বিকাশে সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের নীতিমালা, আইনকানুন ও শর্তাবলী তৈরি করে দিচ্ছে। কিন্তু তারা ব্যবসায় কোনো হস্তক্ষেপ করে না।
হাইকমিশনার জানান, ব্যবসা পরিচালনায় কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করলেও সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা মালে শহরে কিংবা বিভিন্ন দ্বীপে যে কটেজ রয়েছে সেগুলোতে মাঝে মাঝে আকস্মিক পরিদর্শনে যান। খাবার কিংবা অন্যান্য বিষয়ে রেস্টুরেন্টে অনিয়ম পাওয়া গেলে প্রথমবার সতর্ক করে আসেন। পরবর্তী সময়ে সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের অপরাধের প্রমাণ পেলে পাঁচ বছরের জন্য রেস্টুরেন্ট বন্ধ করার পাশাপাশি মামলা জুড়ে দেয়। ব্যবসায়ীদের সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হলেও সরকারের কঠোর নজরদারি রয়েছে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, অনেক সময় তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেশ থেকে আসা সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য হোটেল ও কটেজের ভাড়াসহ অন্যান্য প্যাকেজের মূল্য কমানোর অনুরোধ জানালেও তারা সাফ জানিয়ে দেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় তারা হস্তক্ষেপ করেন না।
তিনি বলেন, যেকোনো দেশের পর্যটন-শিল্পসহ সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে সরকার কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না করলেও সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার রাখলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ঘটে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, মুসলিম অধ্যুষিত এ দেশটির জনগণ ইসলামিক কৃষ্টি-কালচার সুচারুভাবে পালন করে থাকেন। তবে বিভিন্ন আইল্যান্ডে বিদেশি টুরিস্টদের বিনোদনের সব ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই দিক থেকে শহরের পরিবেশ অন্যান্য স্থান থেকে একটু আলাদা।
এমইউ/এআরএ/জেআইএম