যে খাবারের জন্য হেঁটে যেতে হয় ২০ মাইল পথ
বাহারি পদ খেতে কমবেশি সবাই ভিড় জমায় এক রেস্টুরেন্ট থেকে আরেক রেস্টুরেন্টে। এমনকি পর্যটকরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরতে গেলে সেখানকার জনপ্রিয় সব পদ খেয়ে আসতে ভোলেন না।
তাই বলে এক খাবার খেতে ২০ মাইল পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেওয়ার কথা শুনেছেন কখনো? বিস্ময়কর হলেও সত্যিই, ইতালির প্রত্যন্ত এক গ্রামে তৈরি বিরল খাবার খেতে দূর দূরান্ত থেকে ভোজনরসিকরা ভিড় জমান দলে দলে। ইতালির ওই গ্রামের নাম লুলা।
সার্ডিনিয়া দ্বীপের ভূমধ্যসাগর লাগেয়া এই জনপদের সবচেয়ে কাছে নুয়োরো শহর। তবে তার দূরত্বও প্রায় ২০ মাইল। গ্রামের রাস্তা হলেও সেখানে গাড়ি চলাচল করে। পৌঁছাতে সময় লাগে ৩২ মিনিট। দিনে একটা করে ট্রেনও চলে। চাইলে যে কেউ সাইকেল বা বাইক নিয়েও পৌঁছাতে পারেন সেখানে।
তাহলে পায়ে হেঁটে ওই গ্রামে যাওয়ার কারণ কী? আর কেনই বা সেখানকার খাবারের এতো সুনাম? যাতায়াতের সব ধরনের সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বছরের দুদিন ভোজনরসিকরা তীর্থ করার উদ্দেশ্যে সেখানে পৌঁছান পায়ে হেঁটে। তাও আবার রাতের অন্ধকারে।
হাজারও মানুষ একসঙ্গে পা মিলিয়ে যাত্রা করেন সেখানে। প্রায় সাত থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টা পায়ে হেঁটে পৌঁছান গন্তব্যে।
কোন খাবারের জন্য এতো দূর হাঁটেন সবাই? খাবারের নাম সু ফিলিন্দু। ইতালীয় শব্দ। ইংরেজিতে বলা হয় ‘থ্রেডস অব গড’। যার বাংলা অর্থ ঈশ্বরের সূত্র। তবে এই সূত্র বা সুতো আসলে পাস্তা।
মিহি সুতোর মতো দেখতে বলেই এমন নাম দেওয়া হয়েছে খাবারের। আর এই পাস্তা খেতেই মাইলের পর মাইল হেঁটে তীর্থ করেন ভোজনপ্রেমীরা। কী দিয়ে তৈরি হয় এই পাস্তা?
সুজির আটা, জল ও লবণ দিয়ে তৈরি করা হয় এই পাস্তা। তবে এটি প্রস্তুত করা হয় ভিন্নভাবে। যা এতটাই জটিল যে পুরো পৃথিবীর মাত্র তিন নারী খাবারটি তৈরি করতে পারেন। আর এই ৩ জনই সার্ডিনিয়ার বাসিন্দা।
তারকা রন্ধনশিল্পী জেমি অলিভারও সার্ডিনিয়ার ওই গ্রামে গিয়েছিলেন। তিনিও চেষ্টা করেছিলেন বিশেষ পাস্তা তৈরির প্রক্রিয়া শেখার। টানা দুই ঘণ্টা চেষ্টা করেও হাল ছাড়েন তিনি।
কী এমন জটিল প্রক্রিয়া? ফিলিন্দু তৈরির সেরা শিল্পী পাওলা আবরাইনির মতে, সবচেয়ে কঠিন হলো হাতের সাহায্যে আটার ডো প্রস্তুত করা। যতক্ষণ না ওই আটা মূর্তি তৈরির মাটির মতে মিহি হয়ে না যায়, ততক্ষণ ডো হাতের সাহায্যে প্রস্তুত করতে হয়।
এরপর লবণ পানিতে হাত ডুবিয়ে পানি ছিটিয়ে দেন ডোতে। পাওলার কথায় এই দু’রকম পানির ভারসম্য বুঝতেই বছরের পর বছর সময় লেগে যেতে পারে। এটা একরকম সাধনা।
আটার ডো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছালে দু’হাতে টেনে টেনে তৈরি হয় পাস্তার এক একটি সূতো। একেকটি আটার ডো থেকে ৮ দফায় একের পর এক স্তর তৈরি করার পর পাওয়া যায় মোট ২৫৬টি পাস্তা।
কাঠে জড়ানোর পর রোদে শুকিয়ে তৈরি হয় বিশ্বের বিরলতম পাস্তা সু ফিলিন্দু। যা ঈশ্বরের সূত্র হিসেবে বিবেচিত। যা খেতে ২০ মাইল পায়ে হেঁটেও যেতে প্রস্তুত ভোজনরসিকরা।
সূত্র: বিবিসি/ব্লিজলিফট
জেএমএস/এমএস