তিস্তা পাড়ের বিস্ময়কর ‘চুংথাং’ গ্রামে ভ্রমণ
ইসতিয়াক আহমেদ
ছবির মতো সুন্দর এক অঞ্চল। চারপাশে পাহাড়। তার মধ্যখান দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। পাহাড়ি রাস্তাগুলো এঁকেবেঁকে মোড় নিয়ে নেমে গেছে সমতলে। বাংলাদেশের তিস্তা পাড়ে কি এমন কোনো গ্রাম আছে? এমনটিই নিশ্চয়ই ভাবছেন!
চুংথাং মূলত সিকিমের এক ছোট্ট গ্রাম। ছোট্ট হলেও কিন্তু ততোটা তুচ্ছ নয়। কারণ তিস্তা পাড়ের এ গ্রামেই আছে সিকিমের প্রথম হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার প্লান্ট। যা তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে করা হয়েছে।
তিস্তার রূপ এখানে ভয়ংকর সুন্দর। নীল নয় একদম সবুজাভ পানির তিস্তার দেখা পাবেন। যার সঙ্গে কোনো মিলই খুঁজে পাবেন না আমাদের তিস্তার। একইসঙ্গে আরও একটি কারণে চুংথাং খানিকটা বিশেষ। আর তা হলো, গোর্খা আর্মির বেজ ক্যাম্প।
ঠিকই শুনছেন, ইন্ডিয়ান আর্মি নয় গোর্খা আর্মি। যদিও তারা এখন ইন্ডিয়ান আর্মির সঙ্গে ভাগবাটোয়ারা করেই নিরাপত্তা প্রদান ও স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করে থাকে।
এই গোর্খা আর্মি ছিলো মূলত নেপালিজ গোর্খা দাড়া। যা তৎকালীন বৃটিশ আর্মির একটি বিগ্রেড ছিলো। এই গোর্খা আর্মিদের নিয়ে বলতে গেলে অনেক কিছুই বলতে হয়।
ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ব্রিগেড অব গুর্খায় গোর্খারা তাদের সাহসিকতা ও শক্তিমত্তার ইতিহাসের জন্য সুপ্রসিদ্ধ। ব্রিটিশ আধিকারিকেরা গোর্খাদের ‘মার্শাল রেস’ বা যোদ্ধা-জাতির মর্যাদা প্রদান করে।
ব্রিটিশ ভারতে যুদ্ধপ্রিয়, আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন, সাহসী, অনুগত, সুশৃঙ্খল, শক্তিমান ও কর্মঠ জাতিগুলোকে ‘মার্শাল রেস’ এর মর্যাদা দেওয়া হতো। ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এসব মার্শাল রেস থেকে প্রচুর সংখ্যক সৈনিক নিয়োগ করা হতো।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রাক্তন সেনাপ্রধান, ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ গোর্খাদের সম্পর্কে একটি বিখ্যাত উক্তি করেন- “যে ব্যক্তি বলে সে মৃত্যুভয়ে ভীত নয়, সে হয় মিথ্যাবাদী, নয় এক গোর্খা।”
আপনি যদি সিটি অব ওয়েস্টমিনিস্টার, লন্ডন এর প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে কখনো যান, তাহলে সেখানেও ‘মনুমেন্ট টু দ্য গুর্খা সোলজার’ নামে একটি মনুমেন্ট দেখতে পাবেন।
এই চুংথাং আরেকটি কারণে বিখ্যাত, আর তা হলো হালাল চিকেন। লাচুং যাওয়ার পথে যদি চান হালাল চিকেন খেতে, তাহলে এখান হতে হালাল চিকেন কিনতে ভুলবেন না। চুংথাংয়ের খিলি পানও বেশ জনপ্রিয়। মাত্র ১০ রুপির ভয়ংকর সুস্বাদু এক পান।
চুংথাংবাসীরা বাংলাদেশির দেখা পেলেই খুশি হয়ে যায়। বাংলাদেশের নাম শুনলেই সাগর নিয়ে নানা প্রশ্ন করেন তারা। সাগর দেখতে কেমন, পানি কেমন ইত্যাদি।
আমাদেরকে দেখে একজন বলেছিলেন, পরেরবার আসলে অবশ্যই সাগরের পানি নিয়ে আসবে। কারণ কখনই হয়তো আমাদের সাগর দেখা হবে না।’
সে এক অকৃত্রিম ভালোবাসা। একবেলার দেখায় বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে বিদায় নিয়েছিলাম। কারণ দিনের আলো যে নিভে আসছিলো। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে আরও যে ছুটে চলতে হবে।
জেএমএস/এএসএম