যে বাড়িতে ১০ ঘণ্টায় মিলবে ১৭ লাখ টাকা!

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ২১ আগস্ট ২০২১

আমেরিকার সবচেয়ে ভয়ঙ্কর একটি বাড়ি। যেখানে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি কেউই থাকতে পারেন না। তিনি যতই সাহসী হন না কেন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো, এ বাড়ির মালিক রাশ ম্যাককেমি নিজেই সবাইকে আমন্ত্রণ জানান সেখানে ১০ ঘণ্টা কাটানোর জন্য। নিজের বাড়িকেই দর্শণীয় স্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন রাশ ম্যাককেমি।

এ ভুতুড়ে বাড়িতে যদি কেউ ১০ ঘণ্টা কাটাতে পারেন; তাহলে তার জন্য ১৭ লাখ টাকা পুরষ্কার ঘোষণা করেছেন ম্যাককেমি। তবে সবচেয়ে রহস্যজনক বিষয় হলো, কেউই এ বাড়িতে ঢুকে ৫-৬ ঘণ্টার বেশি সময় কাটাতে পারেন না। কারণ সেখানে ঘটে ভয়ঙ্কর সব ঘটনা।

এ ভয়ঙ্কর বাড়ির অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসির সামারটাউনে। বাড়িটির নাম মেককেমি ম্যানর। দর্শনার্থীদের জন্য রোমাঞ্চকর একটি স্থান এটি। এ বাড়ির বাইরে অনেক পর্যটকের আগমন ঘটে। তবে কেউই ভেতরে প্রবেশ করতে চান না।

jagonews24

এ পর্যন্ত যত সাহসী ব্যক্তিরাই বাড়িতে ঢুকেছেন তারা জীবনের সর্বোচ্চ ভৌতিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে সেখান থেকে বের হয়েছেন। অতিপ্রাকৃত বিভিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে ওই বাড়িতে! ধরুন কোনো ব্যক্তি ওই বাড়ির ঘরে বসে আছে, তাকে হঠাৎ করে টেনে তোলা হয়, কখনও চড় -থাপ্পড় মারা হয়।

যারাই ওই বাড়িতে ১০ ঘণ্টা কাটানোর প্রয়াসে ঢুকেছেন; তারাই মারাত্মকভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছেন। এ কারণে বাড়িতে যারা প্রবেশ করতে আগ্রহী; তারা এসব জেনে বুঝেই সেখানে যান। কারণ সবাই নিজেকে সাহসী ভাবেন। সেইসঙ্গে ২০ হাজার ডলার বা ১৭ লাখ টাকা পাওয়ার লোভে অনেকেই সেখানে যান।

এসব ভয়াবহ ঘটনা জানার পরেও যারা টাকা লোভে বাড়িতে প্রবেশ করতে চান, তার আগে ৪০ পৃষ্ঠার একটি কাগজ পড়ে সেখানে স্বাক্ষর করতে হয় আগন্তককে। ম্যাককেমি ম্যানরের ওয়েবসাইট বলছে , ‘নিজের এবং অন্যান্য অতিথিদের নিরাপত্তার খাতিরে বাড়িতে প্রবেশের জন্য শারীরিক সুস্থতার সনদ নিয়ে যেতে হবে।’

jagonews24

ম্যাককেমি ম্যানরে প্রবেশের জন্য বয়স ২১ বছরের উপরে হতে হবে। সেখানে প্রবেশের আগে আপনি ভেতরে কেমন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, সে বিষয়ে জানানো হবে। এরপর ওই বাড়িতে ঢুকলেই চোখে পড়বে অদ্ভুত সব মানুষ (ভূতের মতো দেখতে, রক্তাক্ত পোশাক পরা ইত্যাদি) এবং কান আসবে ভয়ঙ্কর শব্দ। এ কারণেই কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারে না বাড়িটিতে।

আসলে রাশ ম্যাককেমি তার বাড়িটিকে গড়ে তুলেছেন একটি ভয়ঙ্কর দর্শণীয় স্পট হিসেবে। মানুষকে ভয় দেখানোর যত রকম কৌশল আছে, সবকিছুর ফাঁদ পেতে রাখা আছে ওই বাড়ির অন্দরে। যেসব দর্শনার্থীরা ভেতরে ঢুকেন ১০ ঘণ্টা কাটানোর জন্য; তারা আসলে বিবেচিত হন প্রতিযোগী হিসেবে।

এ কারণে তারা ভেতরে প্রবেশের পর থেকে সেখানে ঘটতে থাকে চূড়ান্ত পর্যায়ের ভয়াবহতা। এ কারণেই উপস্থিত অতিথিরা মানসিক ও শাররীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। আর তাই ১০ ঘণ্টা কাটানোর আত্মবিশ্বাস নিয়ে বাড়িতে ঢুকলেও বেরিয়ে আসতে হয় প্রাণ নিয়ে।

jagonews24

যারা এ বাড়ির কঠিন অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তাদের অভিযোগ, সেখানে ভুক্তভোগীদের মারধর, শ্বাসরোধ, কাটা, নেশাজাতক পদার্থ গ্রহণ করানো, জোরপূর্বক বমি করানো এবং ওয়াটারবোর্ডিংসহ নানা ধরনের কাজ করানো হয়। যা কারও পক্ষেই করা সম্ভব নয়।

২০১৫ সালে গার্ডিয়ান পত্রিকায় দেওয়া সাক্ষাত্কারে, এ বাড়ির মালিক ম্যাককেমি স্বীকার করেন, একবার একজন পরিদর্শক হার্ট অ্যাটাকও করেরছন। বাড়ির ভেতরে ভয়ঙ্কর সব কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা করা আছে। এই কারণেই মানসিক ও শারীরিকভাবে যারা সুস্থ; তাদেরকেই এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়।

অ্যামি মিলিগান নামের একজন দর্শনার্থী ২০১৫ সালে গিয়েছিলেন ওই বাড়িতে। তিনি বলেন, ‘আমাকে থাপ্পড় দেওয়া হয়েছিল এবং ওয়াটারবোর্ডে পাঠানো হয়েছিল। যা খুবই অমানবিক আচরণ।’ আরেক দর্শনার্থী লরা হার্টজ ব্রাদারটন বলেন, ‘তারা আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। আমার শরীরে এখনও দাগ আছে। আমার মুখে বারবার আঘাত করা হয়েছে।’

jagonews24

লরা আরও বলেন, ‘আমাকে ওয়াটারবোর্ডে একটি খাঁচায় আটকে রাখে। আমার হাত বাঁধা ছিল। তারা খাঁচাটি বারবার পানির মধ্যে ডুবাচ্ছিলো আবার উঠাচ্ছিল। আমার লম্বা চুল গলায় জড়িয়ে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিলো। আমি তাদের বলেছিলাম, শ্বাস নিতে পারছি না। তবুও তারা ছিল নির্বিকার, তাদের মুখে ছিল অট্ট হাসি।’

রাশ ম্যাককেমি ২০১৪ সাল থেকে তার বাড়িতে এই ভুতুড়ে গেম শো চালু করেন। প্রতিজন অতিথি বা প্রতিযোগী বাড়িটিতে প্রবেশের সময় থেকেই ভিডিও রেকর্ড হওয়া চালু হয়। তার সঙ্গে কি কি করা হয়েছে, তা পরবর্তীতে দেখানো হয়। এ পর্যন্ত কেউই মারা যায়নি সেখানে।

এমনকি কেউই ম্যাককেমি ম্যানর ট্যুর সম্পূর্ণ করতে পারেননি। আর তাই কেউ ১৭ লাখ টাকা পুরষ্কারও জিতেননি। সর্বোচ্চ ৬ ঘণ্টা থাকতে পেরেছিলেন কেউ কেউ। জানলে অবাক হবেন, ভয়ঙ্কর হলেও ম্যাককেমি ম্যানর ট্যুরের চ্যালেঞ্জ গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়ছেই। ২০১৪ সালে ২৪ হাজার এবং ২০১৫ সালে ২৭ হাজার মানুষ এই বাড়িতে ঢুকে ভৌতিক অভিজ্ঞতা নেন। যা এখনও চলমান আছে।

সূত্র: ইনসাইডার/নিউজউইক

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।