নীল পানির লালাখালে গিয়ে যা দেখবেন
এ যেন বাংলার নীল নদ! নদীর দুই পাশের সবুজ গাছপালা আর সুদূরের ছোট-বড় পাহাড়ের দৃশ্য দেখতে দেখতে কখন যে ভারতের বর্ডারের কাছাকাছি চলে যাবেন টেরও পাবেন না! লালাখালের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য যাত্রার শুরুতেই পাড়ি দিতে হবে ছোট ছোট টিলা আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এঁকেবেঁকে চলা এক নদী।
লালাখাল নাম শুনে অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন, এটি একটি খাল! আসলে লালাখাল একটি নদী। এ নদীর উৎপত্তি ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড়। লোকমুখে শোনা যায়, এ নদী দিয়েই না-কি পর্যটক ইবনে বতুতা বাংলাদেশে এসেছিলেন ।
লালাখাল সিলেট শহরের জৈন্তাপুর উপজেলায় অবস্থিত। সিলেট থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই লালাখাল নদী ভারতের চেরাপুঞ্জি পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নদী, পাহাড়ি বন, চা-বাগান এবং নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি লালাখালের ভূ-প্রকৃতিকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য।
লালাখালের বিভিন্ন অংশে নীল, সবুজ এবং স্বচ্ছ পানির দেখা মিলে। চাইলে তামাবিল অংশের স্বচ্ছ পানির সারি নদীর উপর দিয়ে স্পীডবোট বা নৌকায় লালাখালে যেতে পারেন। ৪৫ মিনিটের এ যাত্রা আপনাকে লালাখালের সৌন্দর্য্যে বাকরুদ্ধ করে রাখবে।
ঋতু বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলাতে থাকে লালাখাল। ভরা বর্ষায় লালাখালের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়। তবে বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে লালাখালের পানি হারিয়ে ফেলে স্বচ্ছতা। তখন পানি বেশ ঘোলাটে বর্ণ ধারণ করে।
লালাখালের প্রকৃত রূপ দেখা যায় শীতে। পানির রং তখন বদলে গিয়ে পুরোপুরি নীল হতে শুরু করে। আবার শরতে দেখা যায় এর ভিন্ন রূপ। পালকের মতো নরম সাদা কাশফুলের দেখা মেলে এর প্রতিটা বাঁকে। শুধু কাশবনই নয়, লালাখালের দু’পাশে গড়ে ওঠা চা বাগান নিয়ে যাবে অন্য এক জগতে।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রথমে যেতে হবে সিলেটে। এরপর সিলেট থেকে লালাখালে যেতে হবে। এজন্য নগরীর ধোপাদিধীর ওসমানী শিশু উদ্যানের বা শিশু পার্কের সামনে থেকে লেগুনা, মাইক্রবাস অথবা জাফলংগামী বাসে চড়ে সারিঘাট আসতে পারেন।
সারিঘাট থেকে লালাখালে যাওয়ার সিএনজিচালিত অটোরিকশা পাবেন। যদি নদীপথে লালাখালে যেতে চান তবে এখানে ইঞ্জিন চালিত বিভিন্ন ট্রলার ও নৌকা ভাড়ায় পাবেন।
লালাখাল থেকে সিলেট ফিরতে রাত ৮টা পর্যন্ত বাস ও লেগুনা পাবেন। লালাখালে গিয়ে দেখা পাবেন রং-বেরঙের ছোট-বড় নৌকা। ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে ভারত বর্ডারের কাছাকাছি পর্যন্ত নৌকায় ঘুরে আসতে পারবেন লালাখাল।
কোথায় থাকবেন?
লালাখালের পাড়ে রাত কাটাতে নর্দার্ন রিসোর্টে বুকিং দিতে পারেন। অতিথিদের সিলেট যাওয়া আসার জন্য এদের নিজেদের পরিবহন ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও লালাখালের কাছে খাদিমনগরে অবস্থিত নাজিমগড় রিসোর্টে আগেই যোগাযোগ করে নিতে পারেন।
তবে থাকার জন্য সিলেট ফিরে আসাই সুবিধাজনক। সিলেটের লালা বাজার ও দরগা রোডে কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ যেখানে ৪০০-১০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরনের রুম পাবেন।
জেএমএস/জেআইএম