১৭২ কুঠুরির বিস্ময়কর বেহুলার বাসরঘর!

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ২৫ জুলাই ২০২১

দেশের বিভিন্ন স্থানেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ঐতিহাসিক সব নিদর্শন ও স্থাপত্য। যুগে যুগে প্রত্নতত্ত্ববিদরা মাটি খুঁড়ে ভেদ করেছেন প্রাচীনকালের অনেক রহস্য। তেমনই এক রহস্যময় ও বিস্ময়কর স্থাপত্য হলো বেহুলার বাসরঘর। যা গোকুল মেধ বা লক্ষীন্দরের মেধ বলেও পরিচিত।

এই নিদর্শনটির অবস্থান বগুড়া সদর থানার অন্তর্গত গোকুল গ্রামে। মহাস্থানগড় বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় ২ কি.মি দক্ষিণ পশ্চিমে গোকুল নামক গ্রাম এবং গোকুল, রামশহর ও পলাশবাড়ি গ্রাম তিনটির সংযোগ স্থলে এটি অবস্থিত।

এটি খননকৃত একটি প্রত্নস্থল। স্থানীয়ভাবে এটি বেহুলার বাসরঘর নামেই অধিক পরিচিত। যদিও এটি বেহুলার বাসরঘর নয়! ইতিহাস বলছে, এটি একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মঠ। এটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অন্তর্ভুক্ত অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।

jagonews24

প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের তথ্য মতে, আনুমানিক খ্রিস্টাব্দ ৭ম-১২শ শতাব্দীর মধ্যে এটি নির্মিত হয়। অনেকেই বলে থাকেন, এখানে বেহুলার বাসর হয়েছিল। যা সেন যুগেরও অনেক আগে ঘটনা। তবে বর্তমান গবেষকদের মতে, এ কীর্তিস্তম্ভ ৮০৯-৮৪৭ খৃস্টাব্দে দেবপাল নির্মিত একটি বৌদ্ধমঠ।

বেহুলার বাসরঘর বা এই বৌদ্ধমঠটি মূলত একটি উঁচু ইটের স্তূপ। এর উচ্চতা প্রায় ১৩ মিটার বা ৪৫ ফিট। ১৯৩৪-৩৬ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে এখানে বিভিন্ন মাপের ১৭২টি কুঠুরি আবিষ্কৃত হয়। এই কক্ষগুলো দেখতে অনেকটা অস্বাভাবিক ঘরানার।

বিশেষ করে এর অগোছালো নির্মাণশৈলী সবাইকে আরও কৌতূহল করে তোলে। এই স্তূপটির পশ্চিম অংশে আছে বাসরঘরের প্রবাদ স্মৃতিচিহ্ন। পূর্ব অংশে আছে ২৪ কোণ বিশিষ্ট চৌবাচ্চাসদৃশ একটি স্নানাগার। এই স্নানাগারের মধ্যে ছিল ৮ ফুট গভীর একটি কূপ। জানা যায়, বেহুলা ও লক্ষীন্দর নিশি যাপনের পর এই কূপের জলে স্নান করেই শুদ্ধতা লাভ করতেন।

jagonews24

প্রত্নতাত্ত্বিকরা খননের সময় সেখানে একটি নর-কঙ্কাল, একটি ইটের নির্মিত গোলাকার গর্ত, একটি শিলাখণ্ড, ষাঁড়ের প্রতিকৃতি উত্কীর্ণ একটি স্বর্ণ পত্র পাওয়া যায়। তবে এই স্তূপের সমতল শিরোদেশে প্রথম নির্মাণ যুগে খ্রিষ্টীয় ৬/৭ শতকে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয় নির্মিত হয়েছিল।

এর থেকে ধারণা করা হয়, এটি একটি বর্গাকৃতির শিব মন্দির ছিল। বিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা ও হিউয়েন সাং তাদের ভ্রমণ কাহিনীতে একে বৌদ্ধমঠ রূপে উল্লেখ করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার কোনো কোনো ঐতিহাসিক গ্রন্থে, এই মেধকে একটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রূপে উল্লেখ করা হয়ে।

জানা যায়, এটি নির্মাণ করা হয়েছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানীকে বাইরের শত্রু থেকে রক্ষা করার জন্য। তবে সে যা-ই হোক এই নিদর্শনটি বেহুলার বাসরঘর নামেই বেশি পরিচিত। এ সম্পর্কে প্রাপ্ত কিছু তথ্য মতে, একসময় ভারত বর্ষের বিভিন্ন স্থানে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে অসংখ্য বৌদ্ধমঠ নির্মিত হয়েছিল। বেহুলার বাসরঘরও সে ধরনের একটি মঠ বা বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার কেন্দ্র হতে পারে।

jagonews24

কীভাবে যাবেন বেহুলার বাসরঘরে

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সরাসরি বগুড়া যেতে পারবেন। বগুড়া শহর থেকে সিএনজি, টেম্পো, রিকশায় করে বেহুলার বাসরঘরে সহজেই যেতে পারবেন।

কোথায়ি থাকবেন?

বগুড়ায় থাকা জন্য বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল ও মোটেল আছে। পছন্দসই দরদাম করে থাকতে পারবেন সেখানে। এমনকি চার তারকা হোটেলও পেয়ে যাবেন।

জেএমএস/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।