সন্তান বিক্রি হয় যে দেশে
সন্তান সৃষ্টিকর্তার এক আশির্বাদ। অনেকেই শত চেষ্টা করেও সন্তান জন্ম দিতে পারেন না। আবার অনেকের ঘরেই একের পর এক সন্তান জন্ম নেয়। তবে সন্তান যাদের নেই; তারাই বুঝেই নিঃসন্তান থাকার কষ্ট। যদিও চিকিৎসাবিজ্ঞান বর্তমানে সন্তান জন্ম দেওয়ার বিভিন্ন উপায় বাতলে দিচ্ছে।
তার মধ্যে সারোগেসি পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার বিষয়টি এখন নিঃসন্তানদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিঃসন্তান দম্পতিরা এখন এই পদ্ধতির মাধ্যমে সন্তানের মুখ দেখছেন। যদিও এটি অনেক ব্যয়বহুল। এ পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম দেওয়ার শীর্ষ এক দেশ হলো ইউক্রেন। পূর্ব ইউরোপের এই দেশ এখন বিশ্বের ‘সন্তান উৎপাদনের কারখানা’। অর্থের বিনিময়ে পছন্দমতো সন্তান কেনা যায় এ দেশ থেকে।
সন্তান জন্ম দিতে ব্যর্থ দম্পতিরা সারোগেসির মাধ্যমে তাদের স্বপ্নপূরণ করতে ছুটে যান ইউক্রেনে। অবশ্য তার জন্য মানতে হয় বেশ কিছু শর্ত। পরিষেবা বুঝে দরদাম করে তবে সন্তান মেলে সেখানে। আর উপযুক্ত দাম দিতে পারলেই সন্তান ধারণের সব ধরনের পরিষেবা পাওয়া যাবে ইউক্রেনে।
অর্থের বিনিময়ে সন্তান জন্ম দেওয়ার এক সংস্কৃতি চালু হয়েছে সেখানে। শুধু ইউক্রেন নয় বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এখন এই পরিষেবা দিতে পারে। ইউক্রেন তার মধ্যে একটি। সারোগেসির মাধ্যমে সন্তান উৎপাদনকে দেশটি বাণিজ্যিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে।
বিগত কয়েক বছরে ইউক্রেনে এই শিল্প এতটাই বেড়েছে যে, পুরো বিশ্বের কাছে এখন দেশটির পরিচিতি ‘শিশু উৎপাদনের কারখানা’ নামে। পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশি বাবা-মায়েদের জন্য প্রতি বছর সারোগেসি প্রক্রিয়ায় অন্তত আড়াই থেকে তিন হাজার সন্তানের জন্ম হয় ইউক্রেনে।
আর এই বিদেশি বাবা-মায়েদের এক তৃতীয়াংশই চিনের বাসিন্দা। সংবাদ সংস্থা এএফপি’র প্রতিবেদনে এমনটিই জানানো হয়েছে। আরও জানা গেছে, ভারত এবং থাইল্যান্ড আইন করে বিদেশিদের জন্য সন্তান ধারণের বাণিজ্যিক সুবিধা বন্ধ করে দেওয়াই ইউক্রেন ভালো সুযোগ পেয়েছে।
ঠিক কত টাকায় সন্তান মেলে? এর জন্য কী শর্তই বা মানতে হয়? সাধারণত ইউক্রেনে সারেগেসির মাধ্যমে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ন্যূনতম খরচ ২৫ হাজার ইউরো। যা বাংলাদেশি অর্থে ২৫ লাখ ১৬ হাজার টাকা। তবে এই খরচ বাড়তে পারে ৭০ হাজার ইউরো পর্যন্ত।
তবে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের একটি সারোগেসি ক্লিনিক ‘বায়োটেক্সকম’ জানায়, দেশের অর্ধেক সারোগেসি প্রক্রিয়া ৩৯ হাজার ৯০০ ইউরো বা ৩৫.৩ লাখ টাকার মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়। এই সংস্থারই ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, চাইলে পুত্রসন্তান বা কন্যাসন্তানের জন্যও চেষ্টা করতে পারেন দম্পতিরা। সেই সুযোগও দেওয়া হচ্ছে ইউক্রেনে। তবে তার জন্য অতিরিক্ত মূল্য দিতে হয়।
কীভাবে সন্তান উৎপাদন করা হয়? এক্ষেত্রে দু’টি বিকল্প আছে। ছেলে বা মেয়ে বেছে নিতে দু’বার চেষ্টা করতে পারেন এই বাবা-মায়েরা। আবার চাইলে পছন্দমতো সন্তান না পেলে বারবার চেষ্টাও করতে পারেন। এক্ষেত্রে দরদামেও আছে ভিন্নতা। প্রথম বিকল্পের খরচ ৪৯ হাজার ৯০০ ইউরো অর্থাৎ ৫০ লাখ ২২ হাজার টাকা। দ্বিতীয় বিকল্পের খরচ ৬৪ হাজার ৯০০ ইউরো বা ৬৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা।
এ ছাড়াও সারোগেসি প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের জন্য অভিভাবকদের বেশ কিছু শর্ত পালন করতে হয়। যেমন- ইউক্রেনের আইন অনুযায়ী কোনো সমকামী দম্পতি এই প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণ করতে পারবেন না। আইনত বিবাহিত নারী-পুরুষ দম্পতিই সারোগেসি প্রক্রিয়ায় সন্তান ধারণের সুযোগ পাবেন। সেইসঙ্গে ওই দম্পতি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম তার বৈধ মেডিকেল প্রমাণপত্রও থাকতে হবে।
অর্থ উপার্জনের জন্যই নিজ গর্ভ ভাড়া দিয়ে সন্তান জন্ম দেন ওই দেশের নারীরা। সারোগেসি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমীক্ষা জানিয়েছে, এই প্রক্রিয়া ধাত্রী-মায়েদের শরীর এবং মনের উপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। এ ছাড়াও তাদের থাকার পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে থাকে। যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর। তাতে কি? এভাবেই সন্তান উৎপাদন শিল্পে বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন।
সূত্র: ইন্ডিয়াডটকম
জেএমএস/জিকেএস