বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গ্রামে যেভাবে বাস করে মানুষ

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৩৫ পিএম, ২২ মে ২০২১

সমুদ্র থেকে ১৮ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়। একটি ছোট্ট ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। ভ্রমণপিপাসুদের কাছে খুবই আকর্ষণীয় এক দর্শনীয় স্থান এটি। বলছি, বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু গ্রামের কথা। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ট্রেকিংয়ের আনন্দ পেতে এই গ্রামে ভিড় জমায় পর্যটকরা।

জানলে অবাক হবেন, এই গ্রামে কখনো বৃষ্টি পড়ে না। কারণ এই গ্রামের নিচে মেঘ জমে। এর ফলে বৃষ্টিপাত ঘটলেও গ্রামটি ভেজে না। তবে বরফে ঠিকই ঢেকে থাকে পাহাড়টি। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে থেকেই না-কি স্বর্গসুখ অনুভব করা যায় সেখানে গেলে।

jagonews24

পর্যটকদের মতে, কোমিকের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, শুধু দু’চোখ দিয়ে উপভোগ করতে হয়। এ ছাড়াও প্রতিবছর কোমিকে বিভিন্ন ধরনের উৎসব হয়ে থাকে, যা দর্শনার্থীদেরকে আকৃষ্ট করে। তবে এসব উৎসব শুধু গ্রীষ্মকালেই করে থাকে। সেখানকার বিভিন্ন উৎসবে ছাম নাচ বা মুখোশ নৃত্য পরিবেশন করতে দেখেন।

হিমাচলের কাজা শহর থেকে মাত্র ১৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কোমিক গ্রামটি। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের সঙ্গে এই গ্রামের কোনো মিলই পাবেন না! কারণ সেখানকার মানুষ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত ও প্রকৃতির রুষ্ঠতা সহ্য করে তবেই টিকে আছেন। সাধারণ মানুষের চেয়ে তাদের জীবনযাপন অনেক কষ্টের।

jagonews24

তবুও তারা খুশি, কারণ স্থানটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। সে হিসেবে তারাই সবচেয়ে উঁচুতে বসবাসকারী মানুষ। এবার নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ স্থানে কীভাবে মানুষ বসবাস করে!

এই পাহাড়টি খাড়া না, অনেকটা গোলাকার হয়ে উপরে উঠে গেছে। এ কারণেই কোমিকবাসীরা সেখানেই ফসল উৎপাদন করতে পারেন। তবে তা শুধু গ্রীষ্মকালেই। কারণ শীতে পুরো পাহাড় বরফে ঢেকে থাকে। এ ছাড়াও কোমিক গ্রামে ওঠার সময় অনেকে মোটরসাইকেলও ব্যবহার করে থাকেন। যদিও যথেষ্ট অভিজ্ঞ হতে হয়।

jagonews24

গ্রীষ্মকাল ভালো কাটলেই কোমিকবাসীদের কষ্ট নেমে আসে শীতকালে। প্রচুর তুষারপাতের কারণে অঞ্চলটি খাদ্যশস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা শীতকালীন মৌসুমে টিকে থাকার জন্য পর্যাপ্ত খাবার সঞ্চয় করেন আগে থেকেই।

কারণ শীতে তারা কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার কথাও চিন্তা করতে পারেন না। এ সময় তাপমাত্রা -২৫ থেকে -৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে আসে। কোমিকে গরমেও সন্ধ্যার পর তাপমাত্রা ৭-৯ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে আসে। পুরো শীতকাল জুড়ে তারা হস্তশিল্পে মনোযোগ দেন। তারা কার্পেট, শাল, ক্যাপ, জ্যাকেট, পেইন্টিং ইত্যাদি হস্তশিল্প তৈরি করেন এলাকাবাসী। পর্যটকদের কাছেও তারা এসব হস্তশিল্প বিক্রি করে থাকেন।

jagonews24

কোমিকে বৌদ্ধদের বাস। সেখানকার তসেমো গোম্পা বৌদ্ধ বিহারের সুখ্যাতি বিশ্বজোড়া। ধারণা করা হয়, এই বৌদ্ধ বিহারের মঠে ম্যাট্রে বুদ্ধ বা ভবিষ্যত বুদ্ধ আছে। যিনি কোমিকবাসীর মঙ্গল করেন। ১৪ শতকের এই মঠটির বয়স প্রায় ৫০০ বছর।

লাল, নীল ও সাদা রঙের মিশেল আছে মঠের দেওয়ালে, যা দেখতে খুবই সুন্দর। জানা যায়, কোমিক শব্দের অর্থ হলো তুষার মোরগের চোখ। কো অর্থ তুষার মোরগ এবং মিক অর্থ চোখ। ভেড়া, ঘোড়া ও ইয়াক ব্যবহার করেই গ্রামবাসীরা পাহাড়ে চলাফেরা করে থাকেন।

jagonews24

হয়তো ভাবতে পারেন, কোমিকবাসীরা এমন বিচ্ছিন্ন স্থানে কেন বাস করে? আপনিও সেখানে গেলে গ্রামবাসীর সঙ্গে থেকে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করবেন। এই শীতল জনশূন্য গ্রামটি সব পর্যটকরাই উপভোগ করেন। অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়দের কাছে স্থানটি খুবই আকর্ষণের।

কোমিকে থাকবেন কোথায়?

১৮ হাজার ফুট উচ্চতায় আপনার দেখভালের দায়িত্ব পালন করবে সেখানকার বাসিন্দারাই। তারা খুবই অতিথিপরায়ণ। কোমিকে হোটেল না থাকলেও কিছু ঘর আছে, যেগুলো এলাকাবাসীরা পর্যটকদের সুবিধার্তে তৈরি করেছে।

jagonews24

অর্থের বিনিময়ে কোমিকবাসীদের গেস্ট হাউজেও থাকতে পারবেন আপনি। তারা পর্যটকদের খাবারের বিষয়টিও নিজেদের কাঁধেই তুলেই নেন। অত্যন্ত যত্নের সঙ্গেই তারা আপনাকে সাহায্য সহযোগিতা করবে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল হলো কোমিকে ঘুরতে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময়।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।