গাইবান্ধায় মাটির নিচে বিস্ময়কর ভবন

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ০৬ মার্চ ২০২১

উপর থেকে দেখলে আন্দাজ করার উপায় নেই যে, সেখানে ভবন রয়েছে। মাটির নিচে অত্যাধুনিক ভবন। আর ছাদ ঘাস দিয়ে ঢাকা। নৈসর্গিক এক পরিবেশ। হঠাৎ দেখলে যে কেউই মনে করতে পারেন, এটি বোধ হয় বিদেশের কোনো দৃশ্য। মোটেও না, বাংলাদেশের গাইবান্ধায় গড়ে ওঠা নান্দনিক ভবন এটি। নাম ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার।

গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার অবস্থিত। মাটির নিচে নির্মিত এ ভবন উপর থেকে দেখতে অনেকটা প্রাচীন বৌদ্ধ বিহারের মতো। এর নির্মাণ শৈলীর অনুপ্রেরণাও প্রাচীন বৌদ্ধ বিহার মহাস্থানগড় থেকে পাওয়া। ভবনের ছাদ আর ভূ-পৃষ্ঠ সমান্তরাল। তাই দূর থেকে ভবনটি সহজে চোখে পড়ে না।

jagonews24

পুরো সেন্টারে দু’টি ব্লক রয়েছে। ‘ক’ ব্লক মূলত- অফিস, ট্রেইনিং সেন্টার, লাইব্রেরির জন্য। অন্যদিকে ‘খ’ ব্লক আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রুমের অবস্থান ও কার্যক্রম অনুসারে পুরো নির্মাণ এলাকা ২৪ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- লাইব্রেরি, এডমিন রুম, রিসেপসন, পার্কিং ইত্যাদি। একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত বারান্দা ও খোলা প্যাভিলিয়ন দিয়ে।

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারটি বর্তমানে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে পর্যটকদের কাছে। অপরূপ নির্মাণশৈলীর কারণে পর্যটকরা স্থানটিতে ঘুরতে আসেন। স্থানীয়ভাবে তৈরি ইটের গাঁথুনি দিয়ে নির্মিত ভবনটি দেখতে প্রতিদিনই কৌতূহলী মানুষের ভিড় জমে।

jagonews24

এ ভবনের স্থপতি কাসেফ মাহবুব চৌধুরী। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নির্মাণে প্রায় ২ বছর সময় লেগেছে এবং ভবনটি নির্মাণে খরচ হয়েছে আনুমানিক ৮ কোটি টাকা। ভবনের জন্য নির্ধারিত জমি খুবই নিচু হওয়াই পানি আটকাতে চারিদিকে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বাঁধের কারণে মাটি ভরাট করতে হয়নি। এ কারণে ভবন নির্মাণ হয়েছে সাশ্রয়ী।

যেহেতু এটি একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র; তাই প্রশিক্ষণার্থীদের সুবিধার্থে শান্ত পরিবেশ বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই এ ভবনটি নির্মিত হয়। পর্যাপ্ত আলো আর বাতাস প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে এতে। ভবনের ছাদে সবুজ ঘাসে ঢাকা ও কক্ষগুলো মাটির নিচে থাকায় প্রাকৃতিকভাবেই অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা থাকে। যেসব ঘর একেবারেই অন্ধকার; সেখানে প্রাকৃতিক আলোর উৎস স্কাই লাইট রয়েছে। ভেন্টিলেসন ব্যবস্থাও প্রাকৃতিক।

jagonews24

প্রতিটি ব্লকের উচ্চতা সমান, পুরো বিল্ডিংয়ে লাইট কোর্ট ও উন্মুক্ত চাতাল আলো-ছায়ার দারুণ সমাহার তৈরি করে। ভবন এলাকায় ৫টি ওয়াটার পুল আছে। পুরো ভবনে লাল রঙা ইট আর সিমেন্টের গাঁথুনি প্লাস্টার ব্যবহার হয়নি। ছাদে যাতে পানি জমে না থাকে সেজন্য পুরো ছাদ জুড়ে চমৎকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাও রয়েছে। এসব ড্রেনই প্রকৃতির সঙ্গে মিশে দৃষ্টির আড়ালে রয়েছে।

গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা এই ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। এ স্থাপনাটি ২০১৪-১৬ সালের শ্রেষ্ঠ স্থাপনা হিসেবে ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। বিশ্বব্যাপী চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়া ১৯টি স্থাপত্যের মধ্যে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারও ছিলো। যদিও এখন পর্যন্ত পুরস্কার না পেলেও তিনবার এ পুরস্কারের শর্ট লিস্টে তিনি দাপটের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছেন। পুরস্কার পাওয়া হয়তো সময়ের ব্যাপার মাত্র।

jagonews24

যেভাবে যাবেন

রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থান হতে এসি/নন-এসি বেশকিছু বাস ঢাকা-গাইবান্ধা রুটে চলাচল করে। এদের মধ্যে শ্যামলী পরিবহন, আল হামরা পরিবহন, এস আর ট্রাভেলস প্রাঃ লিঃ এবং অরিন ট্রাভেলস উল্লেখযোগ্য। বাসের ধরণ অনুযায়ী জনপ্রতি বাস ভাড়া ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা।

jagonews24

এছাড়া ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রংপুর এক্সপ্রেস এবং লালমনিরহাট এক্সপ্রেস ট্রেন সকাল এবং রাতে ছেড়ে যায়। গাইবান্ধা শহর থেকে সিএনজি বা ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে সরাসরি ফ্রেন্ডশিপ সেন্টারের পৌঁছাতে পারবেন।

কোথায় থাকবেন

jagonews24

গাইবান্ধায় রাত যাপনের জন্যে আছে গাইবান্ধা সার্কিট হাউজ, এসকেএস ইন হোটেল ও গণ উন্নয়ন কেন্দ্র। এর মধ্যে কলেজ রোডে অবস্থিত এসকেএস ইন হোটেলের মান সবচেয়ে ভালো। রুমের সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী ভাড়া ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা।

জেএমএস/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।