দর্শনীয় স্থান হতে পারে ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে

ভ্রমণ ডেস্ক
ভ্রমণ ডেস্ক ভ্রমণ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৫৮ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০২০
ছবি: রাসেল সুমন

ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে নেমে আসা ধলাই নদীর সাথে প্রতিবছর বর্ষাকালে নেমে আসে প্রচুর পাথর। ধলাই নদীর তলদেশেও রয়েছে পাথরের বিপুল মজুদ। এ পাথর দিয়ে পঞ্চাশ বছর চালানো যাবে- এ হিসাব ধরে ১৯৬৪-১৯৬৯ সাল পর্যন্ত সোয়া ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে প্রকল্প।

বৃটিশ রোপওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। প্রকল্পের আওতায় ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত সোয়া ১১ মাইল দীর্ঘ রোপওয়ের জন্য নির্মাণ করা হয় ১২০টি টাওয়ার এক্সক্যাভেশন প্যান্ট। মাঝখানে ৪টি সাব স্টেশন। দু’প্রান্তে ডিজেল চালিত দুটি ইলেক্ট্রিক পাওয়ার হাউস, ভোলাগঞ্জে রেলওয়ে কলোনি, স্কুল, মসজিদ ও রেস্ট হাউস নির্মাণও প্রকল্পের আওতাভুক্ত ছিল। এক্সক্যাভেশন প্যান্টের সাহায্যে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে পাথর উত্তোলন করা হলেও বর্তমানে এ পদ্ধতিতে পাথর উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।

jagonews24

সংশ্লিষ্টরা জানান, পর্যাপ্ত জনবলের অভাব, পাথরের অপর্যাপ্ততা ও বিকল ইঞ্জিনের কারণে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ধরে এক্সক্যাভেশন মেশিন বন্ধ রয়েছে। আগে উত্তোলিত পাথর ভাঙা, ধোয়া ও টুকরার আকার অনুসারে বালু, স্টোন চিপস ও ট্রাক ব্যালাস্ট ইত্যাদি শ্রেণিতে ভাগ করা হতো।

শ্রেণি অনুসারে সেগুলো পৃথক পৃথকভাবে বের হয়ে রোপওয়েতে ঝুলানো চারকোণা বিশিষ্ট স্টিলের বাকেটে জমা হতো। প্রতিটি বাকেটের ধারণক্ষমতা ২৩৭ কেজি (প্রায় ১২০ ফুট)। পাথরভর্তি বাকেট পাঠানো হতো ছাতকে। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ঠিকাদাররা স্থানীয়ভাবে বোল্ডার পাথর কেনার পর তা ভেঙে বিভিন্ন সাইজে বিভক্ত করে। তারপর তা বাকেটে পুরে ছাতকে পাঠানো হয়।

jagonews24

মজার ব্যাপার হলো, এলাকাটি দেখতে অনেকটা ব-দ্বীপের মতো। ধলাই নদী বাংলাদেশ অংশে প্রবেশ করে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে প্যান্টের চারপাশ ঘুরে আবার একিভূত হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছে ধলাই নদী মিলিত হয়েছে পিয়াইন নদীর সাথে। রোপওয়ের আয়তন প্রায় একশ’ একর। আর এ কারণেই স্থানটি পর্যটকদের কাছে এত আকর্ষণীয়।

এখানে রেলের যে ভূসম্পত্তি আছে; তাতে অনায়াসে একটি ট্রেনিং সেন্টার হতে পারে। এ ছাড়া বিনোদন কেন্দ্রও করা যায়। বিদেশি কনসালটেন্ট, বিনিয়োগকারী, দেশি অফিসারদের মন ভালো করার জন্য একটি বাংলো তৈরি করেও রাখা যায়। তাতে না হয় মাঝে মাঝে রেলস্পটারদেরও আনাগোনা হলো। চাইলে যেকেউ ঘুরে আসতে পারেন। জায়গাটি চমৎকার।

jagonews24

যেখানে থাকবেন: জেলা পরিষদের একটি রেস্ট হাউস আছে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে। থাকতে হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুমতি নিতে হবে। এ ছাড়া ভোলাগঞ্জ বা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় থাকার জন্য তেমন কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। ভোলাগঞ্জ ভ্রমণ শেষ করে সিলেটে এসে থাকতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন: সিলেট থেকে ৩৩ কিলোমিটার দূরে ভোলাগঞ্জের অবস্থান। সরাসরি যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। সিলেট থেকে পাবলিক বাস বা সিএনজি, বেবি-ট্যাক্সি করে টুকের বাজার পর্যন্ত যেতে হবে। টুকের বাজার থেকে আবার বেবি-ট্যাক্সি করে ভোলাগঞ্জ যেতে হবে।

jagonews24

বিশেষ কোয়ারিতে যেতে হলে নদীতীরে অবস্থিত পোস্টের বিডিআরের অনুমতি নিতে হবে। ইঞ্জিন নৌকা ভাড়া পাওয়া যাবে। পাথর উঠানোর জন্য এ নৌকা ব্যবহৃত হয়। এতে মাঝিদের প্রচুর আয় হয়। ফলে মানুষ পরিবহন করতে হলে পাথর পরিবহনের সমান ভাড়া না পেলে তারা রাজি হন না।

বিশেষ কোয়ারিতেও বিডিআর পোস্ট রয়েছে। তাদের জানিয়ে সীমান্ত এলাকায় ঘোরাফেরা করা ভালো। সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের অবস্থা মোটামুটি। নিজের বাহন না থাকলে নারী-শিশুকে নিয়ে ভ্রমণ কষ্টকর হবে। সিলেট শহর থেকে সড়ক দূরত্ব কম হলেও রাস্তার কারণে সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা।

এসইউ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।