ঘুরে আসুন ঢাকার কাছেই ইছামতীর চরে
আসমাউল মুত্তাকিন
নীল আকাশে সাদা মেঘের ওড়াউড়ি। চোখ যেদিকে যায়, চারপাশে শুধু জলরাশি। নদীর বুকে ভেসে চলছে নৌকা। সাথে বইছে হালকা বাতাস। সবারই ভালো লাগে এমন দৃশ্য। আর এমন দৃশ্য কে না দেখতে চায়! এমন দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে যেতে হবে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে চলা ইছামতী নদীর তীরে।
এ নদীর পূর্বপাশে রয়েছে একটি চর। নদীর নাম অনুসারে চরটির নাম রাখা হয় ‘ইছামতীর চর’। বর্ষা মৌসুমের শেষের দিকে প্রকৃতির সাজে সেজেছে ইছামতী নদীর তীরবর্তী চর। চরের এপারে সিরাজদিখান বাজার আর ওপারে এলাকার লোকজনের বসতিপূর্ণ গ্রাম। শুকনো মৌসুমে চরটিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ হয়।
বর্ষা শেষে বিস্তীর্ণ মাঠ হলেও বর্ষার স্বচ্ছ পানিতে বর্তমানে চরটি সেজেছে প্রকৃতির নানা রঙে। দিনের বেলায় মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। রাতের বেলায় মিষ্টি রূপালি চাঁদ মন কেড়ে নেয় সবার। খানিক দূরে দূরে মাছ ধরার অস্থায়ী সারি সারি ভেসাল। তাকাতেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পড়ন্ত বিকেলে দূর-দূরান্ত থেকে স্ব-পরিবারে ছুটে আসেন অনেকে।
সারি সারি ঢেউয়ের দোলনা, দুষ্টু-মিষ্টি বাতাস মনকে আরও একবার দোলা দিয়ে যায়। পড়ন্ত বিকেলের চরটি চারপাশের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করে অনেকেরই যেন মন ভরে না। রাতের জ্যোৎস্নার আলোয় মৃদু বাতাস ঢেউয়ের হালকা দুলনির সাথে ঝুলে থাকা আকাশের মিষ্টি রূপালি চাঁদ। এসব দৃশ্য উপভোগ করতে নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পরেন ভ্রমণপিপাসু যুবকদের পাশাপাশি মাঝ বয়সের নারী-পুরুষসহ বৃদ্ধরাও।
চাঁদের আলোয় মনের আনন্দে গলা ছেড়ে গান গায় অনেকেই। তাদের গান গাওয়ার মধুর সুর ভেসে আসে দূর থেকে। অনেকে সারারাত কাটিয়ে দেন নৌকার মধ্যেই। রাতের বেলায় চরটির দক্ষিণ পাশ থেকে তাকালে দেখা যায় ঢাকা শহরের নানা রঙের বাতি। এ আলোই মনকে আরও একবার রাঙিয়ে দিতে সাহায্য করে।
সেখানে গিয়ে দেখা হয় ঢাকা থেকে আসা স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী আকরাম হোসেনের সঙ্গে। ইছামতীর চরের সৌন্দর্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি বন্ধু-বান্ধবসহ বিকেলে এখানে ঘুরতে এসেছিলাম। কিন্তু এখনও যেতে পারিনি। বিকেলের সৌন্দর্যের চাইতে রাতের বেলার চাঁদ উপভোগ করার মজাই আলাদা। হালকা বাতাস, নিভু নিভু আলো মনটাকে চাঙা করে দিচ্ছে প্রতিটি মুহূর্তেই। আমরা ছাড়াও অনেক মানুষ নৌকা নিয়ে এখানে ঘুরতে এসে সময় কাটাচ্ছেন। আসলে এটি খুবই সুন্দর একটি জায়গা।’
ঘুরতে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ষার পানিতে চরটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বাড়ে। কিন্তু এ মৌসুমে পুরোপুরিই ভিন্ন। বর্ষা শেষে চরে ধান আবাদ করা হয়। চরের মধ্যে জমাট বাধা কচুরিপানা। সেটাকে পরিষ্কার করে পাশের নদীতে ফেলা হয়। এতে নদী সম্পূর্ণরূপে কচুরিপানায় জর্জরিত থাকে। এতে নদীর সৌন্দর্য নষ্ট হয়। যদি শুকনো মৌসুমেও নদীর কচুরিপানা পরিষ্কার করে রাখা যেত। তাহলে সারাবছরই এমন দৃশ্য উপভোগ করা যেত। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নজর দেওয়া উচিত।’
লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
এসইউ/এএ/জেআইএম